সোনার দাম আকাশছোঁয়া! তবু ধনতেরাসে রেকর্ড বিক্রি

dhanteras-2025-gold-silver-sales

নয়াদিল্লি: দাম আকাশছোঁয়া, তবু ক্রেতাদের উৎসাহে ভাঁটা নেই! ধনতেরাস ২০২৫-এ ভারতীয় বাজারে দেখা গেল অভূতপূর্ব কেনাকাটার হিড়িক। পুরো দেশজুড়ে বিক্রি হয়েছে প্রায় ₹১ লক্ষ কোটি টাকার পণ্য, যার মধ্যে ₹৬০,০০০ কোটি টাকাই সোনা ও রূপার বিক্রি থেকে এসেছে। এত উচ্চ দামে সোনা কেনার উন্মাদনা শেষবার দেখা গিয়েছিল এক দশক আগে। তবুও এবারের ধনতেরাসে সেই রেকর্ডকেও ছাপিয়ে গেছে ভারতীয়দের উৎসবমুখর কেনাকাটা।

Advertisements

Confederation of All India Traders (CAIT) জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এবার ২৫ শতাংশ বেশি সোনা-রূপা বিক্রি হয়েছে। এমনকি সোনার দাম ১০ গ্রামে ₹১,৩০,০০০ ছুঁলেও ক্রেতাদের আগ্রহে কোনও ভাটা পড়েনি। CAIT-এর জুয়েলারি শাখা All India Jewellers and Goldsmith Federation-এর সভাপতি পঙ্কজ অরোরা জানিয়েছেন, “গত দুই দিনে জুয়েলারি মার্কেটগুলিতে নজিরবিহীন ভিড় দেখা গেছে। মানুষ দাম নিয়ে ভাবেনি, উৎসবের দিনে শুভ লগ্নে সোনা কেনাই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য।”

“দাঙ্গা করে ভোটে জিততে মরিয়া মমতা”! বিস্ফোরক দীলিপ

রূপার বাজারেও দেখা গেছে এক বিশাল উত্থান। রূপার দাম ৫৫ শতাংশ বেড়ে প্রতি কিলোগ্রামে ₹১,৮০,০০০ ছুঁয়েছে, যেখানে গত বছর ছিল ₹৯৮,০০০। এত দাম বাড়ার পরও রূপা কেনার চাহিদা প্রবল থেকেছে। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে অনেকেই রূপার কয়েন, বার ও পূজার সামগ্রী কিনেছেন।

শুধু দিল্লিতেই ধনতেরাসে ₹১০,০০০ কোটির বেশি সোনা-রূপা বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন পঙ্কজ অরোরা। অন্যদিকে, All India Gem and Jewellery Domestic Council (GJC)-এর চেয়ারম্যান রাজেশ রোকড়ে জানিয়েছেন, “যদিও সোনার বিক্রির পরিমাণ (ভলিউম) প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে, তবুও সোনার দাম বৃদ্ধি এবং রূপার জনপ্রিয়তা মিলে বাজারের মোট বিক্রির মান (value) অনেক বেড়েছে।”

রোকড়ে আরও বলেন, “এই বছর ধনতেরাসে রূপার কয়েন বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩৫-৪০ শতাংশ। ক্রেতারা এখন রূপাকে বেশি মূল্যনির্ভর ও বুদ্ধিদীপ্ত বিনিয়োগ হিসেবে দেখছেন। বিশেষত টায়ার-২ ও টায়ার-৩ শহরগুলিতে রূপার জনপ্রিয়তা বেড়েছে বহুগুণে।” ইডি নয়, এবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সোনা-রূপার ঝলক!

Advertisements

ধনতেরাসে সোনার দাম দেশের বিভিন্ন শহরে সামান্য সংশোধিত হলেও তা ক্রেতাদের আরও উৎসাহিত করেছে। দিল্লিতে সোনার দাম ₹১,৩৪,০০০ থেকে নেমে ₹১,৩২,০০০, আর মুম্বইয়ে ₹১,৩০,০০০ থেকে নেমে ₹১,২৮,০০০ হয়। এই সামান্য দাম কমার পর ক্রেতারা সোনার কয়েন, ১ থেকে ৫০ গ্রাম ওজনের বার এবং হালকা গয়না কিনতে ভিড় জমিয়েছেন।

GJC-র ভাইস চেয়ারম্যান অবিনাশ গুপ্তা বলেন, “যদিও বিক্রির পরিমাণ কিছুটা কমেছে, গড় লেনদেনের মূল্য কিন্তু ২০-২৫ শতাংশ বেড়েছে। মানুষ এখন সোনা ও রূপা দুটোই কিনছেন, তবে হালকা ওজনের পণ্য ও কয়েনে বেশি ঝোঁক দেখা যাচ্ছে।”

ধনতেরাসে শুধুমাত্র সোনা বা রূপাই নয়, অন্যান্য সামগ্রী কেনাকাটাতেও ছিল উত্তেজনা। পিতল ও স্টিলের বাসনপত্রে বিক্রি হয়েছে প্রায় ₹১৫,০০০ কোটি টাকার পণ্য, আর ইলেকট্রনিকস ও ইলেকট্রিক্যাল গ্যাজেটের বিক্রি ₹১০,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এছাড়াও সাজসজ্জা ও পূজার সামগ্রীতে ₹৩,০০০ কোটি টাকার কেনাকাটা হয়েছে বলে CAIT জানিয়েছে।

এই উৎসবের মৌসুমে ভারতীয় বাজারে যে অর্থনৈতিক সঞ্চালন ঘটেছে, তা শুধু খুচরো ব্যবসাকেই চাঙ্গা করেনি, বরং ভারতের অর্থনীতির ক্ষেত্রেও এক ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, “উচ্চ দামের মধ্যেও মানুষের খরচ করার মানসিকতা অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দিচ্ছে।”