কালীর আরাধনায় (Kali Puja 2025) জবাফুলের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলার ঘরে ঘরে কালীপুজো মানেই লাল টকটকে জবাফুলের মালায় সেজে উঠবেন মা কালী। কিন্তু এ বছর সেই পূজোর ফুলই হয়ে উঠেছে বিলাসিতা! সাধারণত এক হাজার জবাফুলের কুঁড়ির প্যাকেট যেখানে পাওয়া যেত মাত্র ২০০ টাকায়, সেখানে এখন সেই একই প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়। দাম বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। ফলে পুজোর আগেই নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ফুল ব্যবসায়ীদের মধ্যেও।
১০৮টি জবাফুলের একটি মালার দাম এই মুহূর্তে ২৫০ টাকা। অথচ আগে এই মালা ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যেই পাওয়া যেত। দাম বাড়ার ফলে অনেকেই ফুল কিনতে পারছেন না, আবার যারা কিনছেন, তারা অতিরিক্ত খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। পুজোর সময় ফুলের চাহিদা এমনিতেই বেশি থাকে, কিন্তু এবার জোগান তুলনামূলকভাবে অনেক কম, যার ফলে সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকছে না। এর জেরে ফুলের বাজারে একপ্রকার হাহাকার দেখা দিয়েছে।
এই অবস্থার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চল, বিশেষ করে রানাঘাট, যা রাজ্যের অন্যতম বড় ফুল চাষের কেন্দ্র, সেখানে সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। এই বন্যার ফলে বহু ফুলচাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষেত ডুবে গেছে জলে, ফলে জবাফুলের চাষ প্রায় পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। রানাঘাট থেকে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে ফুল কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ হয়। সেই চ্যানেল কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।
বর্তমানে কোলাঘাট থেকে ঝাড়গ্রাম পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কিছুটা জবাফুলের চাষ হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু সেই ফুলের পরিমাণ মোটেই পর্যাপ্ত নয়। উপরন্তু, সেখানকার ফুলের দামও হু হু করে বাড়ছে। পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় খুচরো বাজারেও তার প্রভাব পড়ছে। বহু ব্যবসায়ী বলছেন, “এখন ফুল কিনতে হচ্ছে প্রায় তিনগুণ দামে। ফলে সাধারণ মানুষকে সেই মূল্যেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আমাদেরও তো লাভ করতে হবে।”
ফুল ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকে বলছেন, আগে যেখানে প্রতি মালায় ৩০-৪০ টাকা লাভ থাকত, এখন সেখানে ক্রেতা না থাকায় বিক্রি কমে গেছে। লাভ তো দূরের কথা, মূলধন তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যদিকে, বহু ফুলচাষি বলছেন, একদিকে বন্যায় চাষ নষ্ট, অন্যদিকে বাজারে এত চাহিদা—তবুও লাভ করতে পারছেন না। কারণ তাদের হাতে এখন আর পর্যাপ্ত পরিমাণ ফুল নেই।
সাধারণ মানুষও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এই মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। অনেকেই বলছেন, “একটা মালা ২৫০ টাকা! এটা তো সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাইরে। কিন্তু পূজোয় তো জবাফুল চাই-ই। তাই বাধ্য হয়ে কিনছি, কিন্তু এতে আমাদের পকেট ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।” কেউ কেউ আবার বলছেন, “আগে যেখানে ৫-৬ মালা কিনতাম, এখন সেখানে ১-২টিতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।”
এই অবস্থায় রাজ্য সরকার বা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ না এলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ফুলচাষিদের সহায়তা, পরিবহন ব্যবস্থা সহজতর করা এবং ফুলের দাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন। নয়তো আগামী দিনগুলিতে কেবল কালীপুজো নয়, অন্যান্য অনুষ্ঠানেও ফুল কেনা হয়ে দাঁড়াবে সাধারণ মানুষের কাছে অসম্ভব এক বিলাসিতা।