IITF 2025 প্যাভিলিয়নে আত্মনির্ভর ভারতের সাফল্য প্রদর্শন করবে DDP

ddp-pavilion-iitf-2025-defence-aatmanirbhar-bharat-dpsu-idex-showcase

আসন্ন ৪৪তম ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার (IITF)–এ ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতার সাফল্যকে সামনে রেখে বড় উদ্যোগ নিচ্ছে প্রতিরক্ষা উৎপাদন দপ্তর (DDP)। ২০২৫ সালের ১৪ নভেম্বর থেকে ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লির ‘ভারত মণ্ডপম’-এ অনুষ্ঠিত হতে চলা এই মেলায় প্রথমবারের মতো DDP গড়ছে একটি বিশেষ প্রতিরক্ষা প্যাভিলিয়ন, যেখানে গত এক দশকের প্রতিরক্ষা শিল্পের রূপান্তর, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর বাস্তব সাফল্য তুলে ধরা হবে।

Advertisements

সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই প্যাভিলিয়নে অংশ নেবে ভারতের সব ১৬টি Defence Public Sector Undertaking (DPSU), সঙ্গে থাকবে Innovations for Defence Excellence (iDEX)–এর তরুণ স্টার্টআপগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলিতে যুদ্ধক্ষেত্রের প্রযুক্তি, নজরদারি ব্যবস্থা, ড্রোন, সাইবার সিকিউরিটি, ডেটা সিস্টেম এবং অন্যান্য আধুনিক সমাধান তৈরি করে নজির গড়েছে। প্যাভিলিয়নটি কেবল একটি প্রদর্শনী নয়—এটি ভারতের প্রতিরক্ষা উৎপাদন সক্ষমতা, ডিজাইন দক্ষতা ও রপ্তানি সম্ভাবনার ওপেন-হাউস হিসেবে কাজ করবে।

   

IITF–এ HAL, BEL, BEML, GRSE, MDL, MIDHANI–সহ দেশের শীর্ষ প্রতিরক্ষা PSU–গুলি তাদের সর্বাধুনিক অ্যারোনটিক্স, রাডার সিস্টেম, ক্ষেপণাস্ত্র, নৌ-জাহাজ নির্মাণ, কমব্যাট ভেহিকল, কমিউনিকেশন সিস্টেম ও সেন্সর প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে। একই সঙ্গে iDEX–এর স্টার্টআপরা পরিচয় করিয়ে দেবে AI-চালিত যুদ্ধক্ষেত্র বিশ্লেষণ, স্মার্ট ড্রোন, বর্ডার সার্ভেল্যান্স সিস্টেম, সাইবার ডিফেন্স টুল এবং অন্যান্য অ্যাডভান্সড সেন্সর নেটওয়ার্ক—যা ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকীকরণে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এই প্রদর্শনীতে সাধারণ দর্শক প্রথমবার কাছ থেকে দেখতে পাবেন কীভাবে গবেষণা, স্টার্টআপ উদ্ভাবন, PSU–র অভিজ্ঞতা ও MSME–র উদ্যোগ মিলিয়ে একটি সমন্বিত প্রতিরক্ষা ইকোসিস্টেম গড়ে উঠেছে।

DDP–র বক্তব্য অনুযায়ী, ২০১৪ সালের পর থেকে দেশের প্রতিরক্ষা উৎপাদনে যে পরিবর্তন এসেছে এবং যেখানে রপ্তানি বহুগুণ বাড়িয়েছে—তারই প্রমাণ হবে এই প্যাভিলিয়নে। নকশা থেকে উৎপাদন পর্যন্ত ‘ডিজাইন টু ডেলিভারি’–র ধারাকে তিনি স্পষ্ট করতে চান; ভারত শুধু প্রতিরক্ষা সামগ্রী ব্যবহারকারী নয়, উৎপাদনকারী এবং দ্রুত রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান গড়ছে। মেলায় থাকবে হাই-টেক ডিসপ্লে, ৩ডি সিমুলেশন, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ভিত্তিক যুদ্ধক্ষেত্র অভিজ্ঞতা, ড্রোন প্রদর্শন, ক্ষেপণাস্ত্রের কাট-সেকশন মডেল, নৌ-জাহাজের ডিজিটাল ব্লুপ্রিন্ট এবং ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির রোডম্যাপ—সবই দর্শক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদের সামনে উপস্থাপন করা হবে।

বিশ্ববাজারে প্রতিরক্ষা রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে এই প্যাভিলিয়ন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন দেশের সরকার, সশস্ত্র বাহিনী, প্রাইভেট কোম্পানি ও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিরা এখানে অংশগ্রহণ করে সরাসরি ভারতের উদ্ভাবন ও উৎপাদন ক্ষমতার সঙ্গে পরিচিত হবে। প্রতিরক্ষা কূটনীতির দিক থেকে এটি ভারতের জন্য শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম—কারণ এখানে প্রযুক্তি প্রদর্শনের পাশাপাশি সম্ভাব্য সমঝোতা ও রফতানি চুক্তি করার ক্ষেত্রও তৈরি হবে।

Advertisements

DDP–র কর্মকর্তারা বলছেন, PSU–গুলোর সঙ্গে MSME ও স্টার্টআপদের অংশগ্রহণ দেখাবে কিভাবে মেক-ইন-ইন্ডিয়া উদ্যোগ বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ছোট বড় সব স্তরের উদ্ভাবন মিলিয়ে একটি বিশুদ্ধ চেইন তৈরি হয়েছে—রিসার্চ ল্যাব থেকে ফিল্ড-রেডি সিস্টেম পর্যন্ত। এই মেলায় প্রদর্শিত প্রযুক্তিগুলো কেবল সামরিক প্রয়োজনে নয়, সীমান্ত নিরাপত্তা, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ও ইনফ্রাস্ট্রাকচার সুরক্ষার মতো নাগরিক প্রয়োজনে ব্যবহারযোগ্যতা দেখাবে।

প্রতিবর্ষিক বাণিজ্য মেলায় প্রতিরক্ষা প্রদর্শনী যেখানে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি পাচ্ছে, সেখানে সরকারি দিক থেকে যোগাযোগ ও বিনিয়োগের সুযোগও বাড়বে। প্রদর্শনী সজ্জা, লাইভ ডেমো ও ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে সরাসরি কথোপকথনের মাধ্যমেই সম্ভাব্য বিদেশি ক্রেতাদের ধারণা স্পষ্ট হবে—যা ভবিষ্যতে যৌথ উৎপাদন, প্রযুক্তি স্থানান্তর এবং সহযোগীতা চুক্তির দরজা খোলে। DDP–র আশ্বাস, প্যাভিলিয়নটি দেশীয় প্রতিরক্ষা ইকোসিস্টেমকে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত করার পাশাপাশি রপ্তানির নতুন বাজার তৈরিতেও সহায়ক হবে।

IITF 2025–এর এই প্যাভিলিয়ন কেবল প্রযুক্তি প্রদর্শন নয়; এটি সরকারের ভূমিকাকে অনুষঙ্গ করে সামরিক-শিল্প নীতি ও আত্মনির্ভরতা নীতির বাস্তব রূপায়নের একটি সফল উদাহরণ। প্রদর্শনীটি ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পে কর্মসংস্থান, দক্ষতা গঠন ও স্থানীয় যোগান শৃঙ্খলা শক্তিশালী করবে—এবং দীর্ঘমেয়াদে দেশে একটি প্রতিরক্ষাভিত্তিক অর্থনীতির সূচক বাড়াবে। সবকিছু মিলিয়ে IITF 2025–এ DDP–র বিশেষ প্যাভিলিয়নটি ভারতের প্রতিরক্ষা শক্তি, উৎপাদন ক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত সম্ভাবনার এক ঐতিহাসিক প্রদর্শনী হিসেবে স্মরণীয় হয়ে উঠতে পারে।