দালাল স্ট্রিটে আবারও দেখা গেল রক্তিম ছবি। টানা পঞ্চম দিনের মতো শেয়ারবাজার লাল চিহ্নে বন্ধ হলো। বৃহস্পতিবারের শেষ বেলায় বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জ (BSE) সেনসেক্স ৫৫০ পয়েন্টের বেশি পড়ে গিয়ে ৮১,২০০–এর নিচে নেমে আসে। অন্যদিকে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE)–এর নিফটি৫০ সূচকও গুরুত্বপূর্ণ ২৫ হাজারের স্তর ভেঙে পড়ে এবং ১৫০ পয়েন্টের বেশি হ্রাস পেয়ে ২৫,৯০৫–এ দিন শেষ করে।
সীমিত গেইনার, দীর্ঘ তালিকার লুজার:
সেনসেক্সের ৩০টি শেয়ারের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি শেয়ারই সবুজে দিন শেষ করেছে। বিজলিঅন (BEL), এক্সিস ব্যাংক, ভারতী এয়ারটেল এবং এইচডিএফসি ব্যাংক সামান্য লাভ তুলতে সক্ষম হয়েছে। অপরদিকে, পতনের শীর্ষে ছিল ট্রেন্ট, পাওয়ার গ্রিড, টাটা মোটরস, টিসিএস এবং এশিয়ান পেইন্টস। এদের টানা বিক্রির চাপ সূচককে আরও নীচে নামিয়ে আনে।
বৃহত্তর বাজারেও মন্দা: Dalal Street Stock Market Fall
বৃহত্তর বাজারের পরিস্থিতিও ইতিবাচক ছিল না। সবকটি প্রধান সূচক লাল চিহ্নে বন্ধ হয়েছে। বিশেষ করে নিফটি মাইক্রোক্যাপ২৫০ সূচক এক শতাংশের বেশি নেমে গেছে। সেক্টরভিত্তিক সূচকের মধ্যে রিয়েলটি ইনডেক্সে সবচেয়ে বড় ধাক্কা লেগেছে। এটি ১.৬৫ শতাংশ পতনে দিন শেষ করে। অন্যদিকে, মেটাল ইনডেক্স কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। এটি ০.২২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে সবুজে শেষ হয় এবং একমাত্র সেক্টরাল সূচক হিসেবে ইতিবাচক ফলাফল ধরে রাখতে পেরেছে।
পতনের কারণ:
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজারে টানা বিক্রির চাপ, বৈশ্বিক বাজারের দুর্বল সংকেত, বিদেশি তহবিলের প্রত্যাহার এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে H-1B ভিসার ফি বাড়ানোর আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের আস্থাকে আরও নড়বড়ে করে তুলেছে। এর জেরে লেনদেনে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
আগের দিনের পরিস্থিতি:
উল্লেখযোগ্যভাবে, বুধবারের লেনদেনেও বাজার লাল চিহ্নে বন্ধ হয়েছিল। ওই দিন সেনসেক্স ৩৮৬.৪৭ পয়েন্ট বা ০.৪৭ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৮১,৭১৫.৬৩–এ শেষ করে। দিনের মধ্যে সূচক সর্বাধিক ৪৯৪.২৬ পয়েন্ট নেমে ৮১,৬০৭.৮৪–এর নিচে গিয়েছিল। নিফটিও একইভাবে ১১২.৬০ পয়েন্ট বা ০.৪৫ শতাংশ কমে ২৫,০৫৬.৯০–এ বন্ধ হয়েছিল।
বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা:
টানা পাঁচ দিনের এই পতন বিনিয়োগকারীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। যারা স্বল্পমেয়াদি লাভের আশায় বাজারে নেমেছিলেন, তারা এখন ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন যে বৈশ্বিক ও দেশীয় সংকেতের প্রভাবে বাজারে আরও বড় পতন হতে পারে।
সামনের দিনের সম্ভাবনা:
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের দিকনির্দেশ মূলত বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে। যদি বিদেশি তহবিল প্রত্যাহারের ধারা অব্যাহত থাকে, তবে সূচকগুলির পুনরুদ্ধার কঠিন হতে পারে। তবে মেটাল ও ব্যাংকিং খাত কিছুটা ভরসা জুগিয়েছে, যা আগামী দিনে বাজারের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সাপোর্ট তৈরি করতে পারে।
শেষ কথা:
দলাল স্ট্রিটে টানা পাঁচ দিনের রক্তিম ধারা বিনিয়োগকারীদের মনে আতঙ্কের ছায়া ফেলেছে। সেনসেক্স ৮১,২০০–এর নিচে নামা এবং নিফটির ২৫ হাজার স্তর ভেঙে পড়া বাজারে অনিশ্চয়তার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন বিনিয়োগকারীরা তাকিয়ে আছেন বৈশ্বিক বাজারের পরিবর্তন এবং সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপের দিকে, যা বাজারকে স্থিতিশীল করতে পারে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
