জিএসটি বৈঠকের জেরে সেনসেক্সে ৪০০ পয়েন্টের ব়্যালি, নিফটি ২৪,৭০০-এর ওপরে

বুধবার সতর্ক মনোভাব নিয়ে দিনের শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ভারতের শেয়ারবাজারে জোরদার রিবাউন্ড দেখা গেল। জিএসটি কাউন্সিল (GST Council) বৈঠক ঘিরে বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী মনোভাব বাজারকে…

Stock Market, Sensex, Nifty

বুধবার সতর্ক মনোভাব নিয়ে দিনের শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত ভারতের শেয়ারবাজারে জোরদার রিবাউন্ড দেখা গেল। জিএসটি কাউন্সিল (GST Council) বৈঠক ঘিরে বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী মনোভাব বাজারকে চাঙ্গা করেছে। বিশেষত কর কাঠামোতে নতুন স্ল্যাব গ্রহণের সম্ভাবনায় বাজারে ইতিবাচক সাড়া মিলেছে।

বিএসই সেনসেক্স দিনশেষে ৮০,৫৫০ পয়েন্টের ওপরে গিয়ে দাঁড়ায়, যা আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৪০০ পয়েন্ট বেশি। একইসঙ্গে এনএসই নিফটি৫০ সূচকও ১০০ পয়েন্টের বেশি লাফ দিয়ে ২৪,৭০০-এর ওপরে শেষ করেছে।

   

৩০ শেয়ারের সেনসেক্সে টাটা স্টিল, টাইটান, মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রা (M&M), ইটারনাল ও স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI) শীর্ষ গেইনার হিসেবে দিন শেষ করেছে। অপরদিকে ইনফোসিস, হিন্দুস্তান ইউনিলিভার (HUL), এনটিপিসি, টিসিএস এবং এয়ারটেল শীর্ষ লুজার তালিকায় ছিল।

বৃহত্তর বাজারেও ইতিবাচক ধারা স্পষ্ট ছিল। নিফটি মাইক্রোক্যাপ২৫০ সূচক ০.৯৯ শতাংশ উত্থানে শেষ হয়। খাতভিত্তিক সূচকের মধ্যে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিল মেটাল সূচক, যা ৩ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পায়। এরপরই আসে মিডস্মল হেলথকেয়ার সূচক, যার উত্থান ছিল ১.৫৩ শতাংশ। অন্যদিকে, আইটি সূচক দিনের শেষে ০.৭৪ শতাংশ পতনে লালচিহ্নে বন্ধ হয়।

বিনিয়োগকারীদের মনোভাব স্পষ্টতই নির্ভর করছে জিএসটি কাউন্সিলের চলতি বৈঠকের উপর। ট্যাক্স স্ল্যাব পুনর্বিন্যাস বা রেট র‍্যাশনালাইজেশন নিয়ে যে আলোচনা চলছে, তা প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে অটোমোবাইল, এফএমসিজি এবং বিমা খাতের ওপর। বিশেষত ১২ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ কর স্ল্যাব তুলে দেওয়ার প্রস্তাব কার্যকর হলে একাধিক খাতে করের চাপ হালকা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

শুধু জিএসটি বৈঠকই নয়, বিনিয়োগকারীদের মনোভাব চাঙ্গা করেছে পরিষেবা খাতের সর্বশেষ পরিসংখ্যান। আগস্ট মাসের এইচএসবিসি ইন্ডিয়া সার্ভিসেস পিএমআই বিজনেস অ্যাক্টিভিটি ইনডেক্স পৌঁছেছে ৬২.৯-এ, যা জুলাইয়ের ৬০.৫ থেকে অনেক উপরে। এটি ২০১০ সালের মাঝামাঝি সময়ের পর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি, অর্থাৎ প্রায় ১৫ বছরের রেকর্ড সম্প্রসারণ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পরিষেবা প্রদানকারীরা জানিয়েছেন দক্ষতা বৃদ্ধি, গ্রাহকের অর্ডার বৃদ্ধি এবং নতুন ব্যবসার জোয়ারই এই প্রবৃদ্ধির মূল চালক। টানা ৪৯ মাস ধরে নতুন অর্ডার বেড়েছে, আর এই বৃদ্ধি ছিল সমীক্ষা শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে দ্রুতগতির। ৩৭ শতাংশ সংস্থা জানিয়েছে তাদের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ বেড়েছে, যেখানে মাত্র ১১ শতাংশ সংস্থা পতনের কথা উল্লেখ করেছে।

বিদেশি অর্ডারের ক্ষেত্রেও চাহিদা দ্রুত বেড়েছে। ২০১৪ সালে যখন আন্তর্জাতিক অর্ডার সূচক চালু হয়, তার পর থেকে এটি তৃতীয় দ্রুততম বৃদ্ধি। এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা থেকে গ্রাহকদের আগ্রহের বৃদ্ধি সংস্থাগুলিকে আশাবাদী করেছে।

পরিষেবা খাতের এই উত্থান সামগ্রিকভাবে বেসরকারি খাতের কার্যক্রমকেও চাঙ্গা করেছে। আগস্টে এইচএসবিসি ইন্ডিয়া কম্পোজিট পিএমআই আউটপুট ইনডেক্স বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩.২-এ, যা জুলাইয়ের ৬১.১ থেকে অনেক বেশি এবং গত ১৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও উৎপাদন খাত স্থিতিশীল গতিতেই বৃদ্ধি পেয়েছে, তবে পরিষেবা খাতই এবার মূল গতিবেগ জুগিয়েছে।

Advertisements

চাকরির ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। জুলাইয়ের তুলনায় আগস্টে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয়েছে আরও মজবুত হারে। এটি স্পষ্ট করছে যে দেশীয় ও বৈদেশিক চাহিদা দৃঢ় থাকায় বিভিন্ন শিল্পখাতে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।

যদিও দিনের শুরুটা খুব ভালো ছিল না। সকালে সেনসেক্স ১৫৩.২৮ পয়েন্ট কমে নেমে গিয়েছিল ৮০,০০৪.৬০-এ। একই সময়ে নিফটি ৪৬.৪ পয়েন্ট পড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৪,৫৩৩.২০-তে।

বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (FII) মঙ্গলবারও বিক্রির দিকে ঝুঁকেছিলেন। এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, তারা মঙ্গলবার মোট ১,১৫৯.৪৮ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন। সেই দিন সেনসেক্স ২০৬.৬১ পয়েন্ট নেমে দাঁড়িয়েছিল ৮০,১৫৭.৮৮-এ, আর নিফটি কমেছিল ৪৫.৪৫ পয়েন্ট নেমে ২৪,৫৭৯.৬০-এ।

সব মিলিয়ে বলা যায়, বুধবারের বাজারে ইতিবাচক বার্তা স্পষ্ট। একদিকে জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকের সম্ভাব্য কর স্ল্যাব সংস্কার, অন্যদিকে পরিষেবা খাতের রেকর্ড সম্প্রসারণ বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। মেটাল, হেলথকেয়ারের মতো খাতগুলো বাজারে গতি এনেছে, যদিও আইটি খাত কিছুটা চাপে ছিল।

আগামী দিনে বিনিয়োগকারীদের নজর থাকবে জিএসটি বৈঠকের সিদ্ধান্তের উপর। যদি কর স্ল্যাব সংস্কার কার্যকর হয়, তবে অটোমোবাইল, এফএমসিজি এবং বিমা খাতে প্রবৃদ্ধি আরও গতি পেতে পারে। একইসঙ্গে, পরিষেবা খাতের ধারাবাহিক সম্প্রসারণ ভারতের অর্থনীতির সামগ্রিক ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে পারে।


For more updates, follow Kolkata24x7 on FacebookTwitter, InstagramYoutube; join our community on Whatsapp