সেনসেক্স ৫০ পয়েন্টের বেশি বৃদ্ধি, নিফটি ২৪,৬০০–এর ওপরে

দেশের শেয়ার বাজার বৃহস্পতিবার দিনের শেষে তেমন বড় কোনও উত্থান বা পতন দেখায়নি। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (BSE) বেঞ্চমার্ক সূচক সেন্সেক্স ৫০ পয়েন্টের বেশি বাড়লেও শেষ…

india Stock Market

দেশের শেয়ার বাজার বৃহস্পতিবার দিনের শেষে তেমন বড় কোনও উত্থান বা পতন দেখায়নি। বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের (BSE) বেঞ্চমার্ক সূচক সেন্সেক্স ৫০ পয়েন্টের বেশি বাড়লেও শেষ পর্যন্ত ৮০,৬০০–এর ঠিক নিচে গিয়ে থামে। অন্যদিকে, ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের (NSE) নিফটি৫০ ৩ পয়েন্ট সামান্য কমে ২৪,৬০০–এর কিছু উপরে বন্ধ হয়।

দিনের শুরুটা ছিল বেশ অস্থির। সকাল ৯টায় GIFT Nifty ছিল প্রায় ২৪,৭০০–এর নিচে, ১৭ পয়েন্ট কমে। এরপর ৯:১৫ নাগাদ সেনসেক্স ৮০,৬৫০–এর উপরে উঠে ১০০–র বেশি পয়েন্ট যোগ করে, আর নিফটি৫০ ২৪,৬৫০–এর কাছাকাছি পৌঁছে ২৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। কিন্তু দিনের শেষে সেই প্রাথমিক উত্থান ধরে রাখতে পারেনি বাজার।

   

বৃহৎ শেয়ারের মিশ্র ফলাফল:
৩০ শেয়ারের সেনসেক্সে লাভের দিক থেকে শীর্ষে ছিল ইটার্নাল, ইনফোসিস, এশিয়ান পেইন্টস, এইচডিএফসি ব্যাংক এবং বাজাজ ফিনসার্ভ। অন্যদিকে, পতনের মুখে পড়ে টাটা স্টিল, টেক মাহিন্দ্রা, আদানি পোর্টস, বিএইএল এবং আল্ট্রাটেক সিমেন্ট।

বিশ্লেষকদের মতে, ধাতব খাতের দুর্বল পারফরম্যান্স এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রির চাপ বাজারকে টেনে ধরেছে।

ক্ষুদ্র ও খাতভিত্তিক সূচকের পারফরম্যান্স:
বৃহত্তর বাজারে নিফটি মাইক্রোক্যাপ২৫০ সূচক ০.৮২ শতাংশ নেমে যায়। খাতভিত্তিক সূচকের মধ্যে ধাতু (Metal) সূচক ১.৩৯ শতাংশ ধসে পড়ে, যা দিনের সবচেয়ে বড় পতন। অন্যদিকে, কনজিউমার ডিউরেবলস সূচক ০.৭৫ শতাংশ বেড়ে সেরা পারফর্মার হয়।

এছাড়া ব্যাংকিং ও এফএমসিজি খাত কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও রিয়েল এস্টেট ও আইটি খাতের পারফরম্যান্স ছিল মিশ্র।

বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রি, দেশীয়দের ক্রয়:
বাজারের মনোভাবের উপর বড় প্রভাব ফেলেছে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের (FII) ব্যাপক শেয়ার বিক্রি। এক্সচেঞ্জের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বুধবার এফআইআই–রা ৩,৬৪৪.৪৩ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে। অন্যদিকে, দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা (DII) বিপরীতে ৫,৬২৩.৭৯ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছে, যা কিছুটা হলেও বাজারকে স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করেছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও বাজার মনোভাব:
বিনিয়োগকারীরা এখন চোখ রেখেছে আসন্ন ট্রাম্প–পুতিন বৈঠকের দিকে। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতির সম্ভাব্য প্রভাব, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, জ্বালানি সরবরাহ এবং প্রতিরক্ষা চুক্তি নিয়ে আলোচনা, বিশ্ববাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।

এশিয়ার বাজারগুলিও বৃহস্পতিবার ছিল বেশ শান্ত। হংকংয়ের হ্যাং সেন সূচক ও জাপানের নিক্কেই সূচকে সামান্য পরিবর্তন দেখা যায়।

Advertisements

ওয়াল স্ট্রিটে বুধবারের সেশন অবশ্য ইতিবাচক ছিল। প্রধান মার্কিন সূচকগুলি দিন শেষ করেছে লাভে। ডাও জোন্স, নাসডাক এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০— তিনটিই উর্ধ্বমুখী ছিল, যা মার্কিন অর্থনৈতিক ডেটা ও কোম্পানির আয় রিপোর্টের ইতিবাচক প্রভাব বহন করছে।

বিশ্লেষকের মতামত:
গীজিত ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের প্রধান বিনিয়োগ কৌশলবিদ ভি কে বিজয়কুমার বলেন, “বাজার এখন স্পষ্টতই অপেক্ষা–দেখো অবস্থায় রয়েছে। ট্রাম্প–পুতিন বৈঠক থেকে কী বার্তা আসে, তা পরবর্তী বাজার গতিপথের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।”

তিনি আরও বলেন, ধাতব খাতে চাপ এবং এফআইআই–দের ধারাবাহিক বিক্রির কারণে স্বল্পমেয়াদে বাজারে অস্থিরতা থাকতে পারে। তবে ডিআইআই–দের ক্রয় আগ্রহ বাজারকে বড় পতন থেকে সাময়িকভাবে রক্ষা করছে।

আগামী দিনের দিকনির্দেশ:
বিশ্লেষকদের মতে, আগামী কয়েক দিন বৈশ্বিক ইভেন্ট এবং কর্পোরেট আয় প্রকাশ বাজারকে প্রভাবিত করবে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক ঘটনাবলি এবং মার্কিন অর্থনৈতিক ডেটা ভারতীয় বাজারের সেন্টিমেন্টে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

টেকনিক্যাল চার্ট অনুযায়ী, নিফটি৫০–এর জন্য ২৪,৫০০ একটি গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেল, আর ২৪,৭৫০–এর উপরে গেলে আবার ঊর্ধ্বমুখী গতি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেন্সেক্সের জন্য ৮০,৪০০ সাপোর্ট এবং ৮০,৮৫০ রেজিস্ট্যান্স হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে।

বাজার–সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এই অস্থির সময়ে বিনিয়োগকারীদের উচিত উচ্চ–ঝুঁকিপূর্ণ শেয়ারের পরিবর্তে স্থিতিশীল, মৌলভিত্তি শক্তিশালী কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা। পাশাপাশি, স্টপ–লস মেনে চলা ও পোর্টফোলিও বৈচিত্র্য বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

বৃহস্পতিবারের বাজারের মিশ্র সুর স্পষ্ট করেছে যে বিনিয়োগকারীরা এখন মূলত বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছে। যদিও দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয়ভাবে ক্রয় করছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিক্রির ধারা এবং খাতভিত্তিক দুর্বলতা বাজারের উপর চাপ বজায় রাখছে।

আগামী কয়েক দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অগ্রগতি এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সূচকের উপর।