দুর্বল চাহিদায় বিশ্ববাজারে কমল অপরিশোধিত তেলের দাম

বিশ্ব বাজারে দুর্বল চাহিদার প্রভাবে বুধবার অপরিশোধিত তেলের (Crude Oil) ফিউচার্স দর কমেছে। মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (এমসিএক্স) এপ্রিল মাসের ডেলিভারির জন্য অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল…

Crude Oil Futures Decline Amid Weak Global Demand Signals

বিশ্ব বাজারে দুর্বল চাহিদার প্রভাবে বুধবার অপরিশোধিত তেলের (Crude Oil) ফিউচার্স দর কমেছে। মাল্টি কমোডিটি এক্সচেঞ্জে (এমসিএক্স) এপ্রিল মাসের ডেলিভারির জন্য অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৪৮ টাকা কমে ৫,৭৪৮ টাকায় নেমেছে। এই দরপতনের পিছনে মূল কারণ হিসেবে বিনিয়োগকারীদের অবস্থান কমানো এবং বিদেশি বাজারে তেলের চাহিদা হ্রাসকে দায়ী করা হচ্ছে।

এমসিএক্স-এ এদিন ৫,০৫৭ লটে লেনদেন হয়েছে, যেখানে অপরিশোধিত তেলের দাম ০.৮৩ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং তেলের চাহিদার দুর্বলতার কারণে বিনিয়োগকারীরা তাদের হোল্ডিংস কমিয়ে দিয়েছেন, যা দামের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে।

   

বিশ্ব বাজারের প্রভাব
বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারে সাম্প্রতিক দিনগুলোতে একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, চিন এবং ইউরোপের মতো বড় বাজারগুলোতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি মন্থর হওয়ায় জ্বালানি তেলের চাহিদা কমেছে। এই পরিস্থিতি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক (OPEC) এবং তার মিত্রদের (OPEC+) উৎপাদন নীতির ওপরও প্রভাব ফেলছে। ওপেক সম্প্রতি তেল উৎপাদন স্থিতিশীল রাখার চেষ্টা করলেও, বাজারে সরবরাহ এবং চাহিদার মধ্যে ভারসাম্যহীনতা দামকে নিম্নমুখী করে তুলেছে।

Also Read | সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ‍‍‘সবুজ শিপিং’ ও ডিজিটাল ব্যবসার পথ খুঁজছে ভারত

ভারতের মতো দেশ, যেখানে জ্বালানি তেলের একটি বড় অংশ আমদানি করা হয়, সেখানে আন্তর্জাতিক বাজারের এই প্রভাব সরাসরি ফিউচার্স ট্রেডিংয়ে প্রতিফলিত হয়। এমসিএক্স-এ লেনদেনকারীরা বিশ্ববাজারের দুর্বল সংকেতের কারণে তাদের অবস্থান থেকে সরে আসছেন, যা দাম কমার অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ভারতের প্রেক্ষাপটে তেলের দাম
ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। দেশের জ্বালানি চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দামের ওঠানামা ভারতীয় অর্থনীতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। অপরিশোধিত তেলের দাম কমার ফলে পেট্রোল এবং ডিজেলের দামে সাময়িক স্বস্তি আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে, এই পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে বিশ্ব বাজারের চাহিদা পুনরুদ্ধার এবং ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর।

বিশ্লেষকদের মতে, অপরিশোধিত তেলের দামে এই হ্রাস স্বল্পমেয়াদি হতে পারে। যদি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে উন্নতি দেখা যায় এবং শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, তাহলে তেলের চাহিদা আবার বাড়তে পারে। তবে বর্তমানে, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যার ফলে ফিউচার্স মার্কেটে দাম কমেছে।

বাজার বিশ্লেষণ
বাজার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অপরিশোধিত তেলের দামের এই পতনের পিছনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিশ্বব্যাপী শিল্প কার্যকলাপে মন্দা দেখা দিয়েছে, যার ফলে জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমেছে। দ্বিতীয়ত, কিছু দেশে বিকল্প জ্বালানি উৎসের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় তেলের ওপর নির্ভরতা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তৃতীয়ত, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা সত্ত্বেও তেল উৎপাদনকারী দেশগুলো সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে, যা বাজারে অতিরিক্ত সরবরাহের পরিস্থিতি তৈরি করেছে।

এছাড়াও, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তেল মজুদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার খবরও দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট (এপিআই) থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে মার্কিন তেল মজুদ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়েছে, যা বৈশ্বিক বাজারে দাম কমার আরেকটি কারণ হিসেবে কাজ করেছে।

ভারতীয় বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া
এমসিএক্স-এ লেনদেনকারী বিনিয়োগকারীরা এই পরিস্থিতির প্রতি সতর্কতার সঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তারা তাদের অবস্থান কমিয়ে দিয়েছেন, যা ফিউচার্স দামে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, এই সতর্কতা আগামী কয়েক দিন ধরে চলতে পারে, যতক্ষণ না বিশ্ব বাজারে কোনও ইতিবাচক সংকেত দেখা যায়।

অপরিশোধিত তেলের দামের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে কয়েকটি বিষয়ের ওপর। প্রথমত, বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধার। যদি বড় অর্থনীতিগুলোতে শিল্প উৎপাদন এবং পরিবহন খাতে চাহিদা বাড়ে, তাহলে তেলের দাম আবার বাড়তে পারে। দ্বিতীয়ত, ওপেক+ এর পরবর্তী সিদ্ধান্ত। যদি তারা উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সরবরাহ কমে দাম বাড়তে পারে। তৃতীয়ত, ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি। মধ্যপ্রাচ্যে কোনও উত্তেজনা বা সংঘাত দামের ওপর তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলতে পারে।

বর্তমানে, ভারতীয় বাজারে তেলের দাম কমার ফলে সাধারণ মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তি আসতে পারে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক বাজারের গতিবিধির ওপর। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহে বাজারের ওপর নজর রাখা জরুরি।

অপরিশোধিত তেলের ফিউচার্স দামে এই হ্রাস বিশ্ব বাজারের দুর্বল চাহিদার একটি প্রতিফলন। ভারতের মতো আমদানিনির্ভর দেশের জন্য এটি স্বল্পমেয়াদি সুবিধা আনলেও, দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নির্ভর করবে বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের ওপর। বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি সতর্কতার সময়, এবং বাজার পর্যবেক্ষকরা আগামী দিনগুলোতে পরিস্থিতির পরিবর্তনের দিকে নজর রাখছেন।