বর্তমানে শপিং, ভ্রমণ বা ডাইনিং—সব ক্ষেত্রেই ক্রেডিট কার্ড আমাদের জীবনকে অনেক সহজ করেছে। কিন্তু সময়মতো পেমেন্ট না করলে এই সুবিধাই এক সময় বড় সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। বকেয়া বাড়তে বাড়তে সুদের বোঝা, ক্রেডিট স্কোরের ক্ষতি, ব্যাংকের রিকভারি কল এমনকি শেষ পর্যন্ত আদালতের নোটিস পর্যন্ত পৌঁছতে পারে পরিস্থিতি।
বিলম্বে পেমেন্টের প্রথম ধাপ: সুদ ও জরিমানা:
ক্রেডিট কার্ডের পেমেন্ট মিস করলে প্রথমেই ব্যাংক দেরিতে পেমেন্টের জন্য লেট ফি ধার্য করে। ভারতে ক্রেডিট কার্ডে সুদের হার সাধারণত খুবই বেশি — প্রায় ৩০ থেকে ৪২ শতাংশ বার্ষিক। এক মাসের বিলম্বেই সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে, ফলে মোট দেনা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। একই সঙ্গে ক্রেডিট স্কোরও নেমে যায়, যার ফলে ভবিষ্যতে লোন বা নতুন কার্ড নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
রিকভারি প্রক্রিয়া শুরু হয় ধাপে ধাপে: Credit Card Payment Delay
প্রথমে ব্যাংক গ্রাহকের সঙ্গে ফোন, এসএমএস বা ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ করে। যদি তাতেও পেমেন্ট না আসে, তখন ব্যাংক প্রায়ই তৃতীয় পক্ষের রিকভারি এজেন্ট নিয়োগ করে। এরা কখনও গ্রাহকের বাড়ি বা অফিসেও যেতে পারে এবং আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে।
আইনি পদক্ষেপের পথে ব্যাংক:
যদি সব রিকভারি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, ব্যাংক শেষ পর্যন্ত আইনি পথে যায়। ক্রেডিট কার্ডের মতো আনসিকিউরড ঋণের ক্ষেত্রে সাধারণত দেওয়ানি আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত যদি ব্যাংকের পক্ষে রায় দেয় এবং গ্রাহক তবুও পরিশোধ না করেন, তাহলে আদালত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত বা বিক্রির নির্দেশ দিতে পারে। অর্থাৎ, দেনা মেটাতে আদালতের নির্দেশে সম্পত্তি বিক্রি পর্যন্ত হতে পারে।
ব্যাংকের অতিরিক্ত পদক্ষেপ:
কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক গ্রাহকের একই ব্যাংকের অন্য অ্যাকাউন্ট থেকেও অর্থ কেটে নিতে পারে, যদি অ্যাকাউন্টের শর্তে তা অনুমোদিত থাকে। দীর্ঘদিন বকেয়া থেকে গেলে এই দেনা বিশাল পরিমাণে বাড়তে পারে এবং আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা স্থায়ী রেকর্ডে থেকে যায়।
সমাধান কীভাবে সম্ভব?
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো ব্যাংকের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ যোগাযোগ করা। অনেক ব্যাংকই ইএমআই তে কনভার্সন, রিসট্রাকচারিং বা সেটেলমেন্ট অফার দেয়। এগুলি গ্রাহকের আর্থিক চাপ কমায় এবং আইনি পদক্ষেপের ঝুঁকি রোধ করে।
সবচেয়ে বড় কথা, কোনো নোটিস বা কল উপেক্ষা করবেন না। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খোঁজা আদালতের মামলার চেয়ে অনেক সহজ ও নিরাপদ।


