মে-জুনের তীব্র গরমে ভারতের শীতল জায়গাগুলোতে ঘুরে আসুন নিশ্চিন্তে

Cool destinations in India: ভারতের গ্রীষ্মকাল, বিশেষ করে মে ও জুন মাস, তীব্র গরমের জন্য কুখ্যাত। তাপমাত্রা প্রায়ই ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলে, যা সমতল…

Coolest Places to Visit in India During May and June

Cool destinations in India: ভারতের গ্রীষ্মকাল, বিশেষ করে মে ও জুন মাস, তীব্র গরমের জন্য কুখ্যাত। তাপমাত্রা প্রায়ই ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়ে ফেলে, যা সমতল ভূমিতে ভ্রমণকে কঠিন করে তোলে। তবে, ভারতের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের কারণে এই সময়ে বেশ কিছু শীতল ও মনোরম গন্তব্য রয়েছে, যেখানে পর্যটকরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন। হিমালয়ের পাদদেশ থেকে দক্ষিণের পাহাড়ি অঞ্চল, এই স্থানগুলি গ্রীষ্মের তাপ থেকে মুক্তি দেয়। নিম্নে ২০২৫ সালের মে ও জুনে ভ্রমণের জন্য ভারতের কয়েকটি সেরা শীতল গন্তব্য, তাদের তাপমাত্রা তুলনা এবং ভ্রমণের সেরা সময় নিয়ে আলোচনা করা হলো।

Advertisements

ladakh-travel-story

   

১. লাদাখ: হিমালয়ের শীতল মরুভূমি
লাদাখ, উত্তর ভারতের একটি উচ্চ-উচ্চতার মরুভূমি, মে ও জুন মাসে ভ্রমণের জন্য আদর্শ। এই সময়ে তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যা দিনের বেলা মনোরম এবং রাতে শীতল। দিল্লি বা আগ্রার মতো সমতল অঞ্চলে যেখানে তাপমাত্রা ৪০-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, সেখানে লাদাখ একটি স্বস্তিদায়ক পালানোর সুযোগ দেয়। জুন মাসে মৌসুমী বৃষ্টি ভারতের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে শুরু হলেও, লাদাখ এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকে।

কী দেখবেন ও করবেন: প্যাঙ্গং হ্রদের নীল জল, নুব্রা উপত্যকার বালিয়াড়ি, এবং হেমিস ও থিকসে মঠ। বাইক ট্রিপ, ক্যাম্পিং, এবং ট্রেকিং এখানে জনপ্রিয়।
ভ্রমণের সেরা সময়: মে মাসের মাঝামাঝি থেকে জুনের শেষ পর্যন্ত। এই সময়ে রাস্তাগুলি পরিষ্কার থাকে এবং আবহাওয়া ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত।
কীভাবে পৌঁছাবেন: লে-তে বিমানে বা মানালি থেকে রোড ট্রিপের মাধ্যমে।

মে-জুনের তীব্র গরমে ভারতের শীতল জায়গাগুলোতে ঘুরে আসুন নিশ্চিন্তে

২. মানালি, হিমাচল প্রদেশ: পাহাড়ের কোলে শান্তি
হিমাচল প্রদেশের মানালি মে ও জুনে পর্যটকদের জন্য একটি জনপ্রিয় গন্তব্য। এই সময়ে তাপমাত্রা ১০ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যেখানে দিল্লির তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। মানালির পরিষ্কার আকাশ, ফুলে ভরা উপত্যকা, এবং তুষারাবৃত চূড়া এটিকে গ্রীষ্মের জন্য আদর্শ করে তোলে। জুনের শেষে হালকা বৃষ্টি শুরু হতে পারে, তবে তা ভ্রমণে বাধা সৃষ্টি করে না।

কী দেখবেন ও করবেন: রোটাং পাস, হাদিম্বা মন্দির, ওল্ড মানালি, এবং সোলাং উপত্যকায় প্যারাগ্লাইডিং।
ভ্রমণের সেরা সময়: মে মাসের শুরু থেকে জুনের মাঝামাঝি। এই সময়ে ভিড় কম থাকে এবং আবহাওয়া মনোরম।
কীভাবে পৌঁছাবেন: ভুন্টার বিমানবন্দর থেকে বা চণ্ডীগড় থেকে বাসে।

darjeeling

৩. দার্জিলিং, পশ্চিমবঙ্গ: চা বাগানের মাঝে শীতলতা
দার্জিলিং, তার চা বাগান এবং কাঞ্চনজঙ্ঘার দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত, মে ও জুনে ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত। এই সময়ে তাপমাত্রা ১৫ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যেখানে কলকাতার তাপমাত্রা ৩৫-৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়। মে মাসে দার্জিলিং-এর প্রথম ফ্লাশ চা সংগ্রহের মরশুম শুরু হয়, যা পর্যটকদের জন্য একটি বিশেষ আকর্ষণ। জুনের শেষে মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হতে পারে, তবে তা সাধারণত হালকা থাকে।

কী দেখবেন ও করবেন: টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয়, দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে, এবং পিস প্যাগোডা। ট্রেকিং এবং চা বাগান সফরও জনপ্রিয়।
ভ্রমণের সেরা সময়: মে মাসের পুরোটা এবং জুনের প্রথমার্ধ।
কীভাবে পৌঁছাবেন: বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি বা নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনে।

৪. স্পিতি উপত্যকা, হিমাচল প্রদেশ: লিটল তিব্বতের সৌন্দর্য
স্পিতি উপত্যকা, যাকে ‘লিটল তিব্বত’ বলা হয়, মে ও জুনে তার শীতল আবহাওয়ার জন্য পরিচিত। তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যা গ্রীষ্মের তীব্র গরম থেকে মুক্তি দেয়। এই সময়ে রাস্তাগুলি পরিষ্কার থাকে।

কী দেখবেন ও করবেন: কি মঠ, ধানকর গোম্পা, চন্দ্রতাল হ্রদ, এবং পিন ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক। ট্রেকিং, ক্যাম্পিং, এবং বাইক রাইডিং এখানে জনপ্রিয়।
ভ্রমণের সেরা সময়: মে মাসের শেষ থেকে জুনের পুরোটা।
কীভাবে পৌঁছাবেন: কুল্লু বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি বা শিমলা থেকে রোড ট্রিপ।

Advertisements

৫. কুর্গ, কর্ণাটক: দক্ষিণের শীতল পশ্চাদপসরণ
কর্ণাটকের কুর্গ, তার কফি বাগান এবং সবুজ প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত, মে মাসে ভ্রমণের জন্য একটি চমৎকার স্থান। তাপমাত্রা ২০ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যেখানে ব্যাঙ্গালোরের তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যায়। জুনের শেষে মৌসুমী বৃষ্টি শুরু হতে পারে, তবে মে মাসে আবহাওয়া মনোরম থাকে।

কী দেখবেন ও করবেন: অ্যাবে ফলস, মাদিকেরি ফোর্ট, এবং তালাকাভেরি। ট্রেকিং, রিভার রাফটিং, এবং কফি প্লান্টেশন সফর জনপ্রিয়।
ভ্রমণের সেরা সময়: মে মাসের পুরোটা।
কীভাবে পৌঁছাবেন: ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি বা ব্যাঙ্গালোর থেকে বাসে।

৬. ঋষিকেশ, উত্তরাখণ্ড: আধ্যাত্মিকতা ও অ্যাডভেঞ্চারের মেলবন্ধন
ঋষিকেশ, গঙ্গার তীরে অবস্থিত, মে ও জুনে তার শীতল আবহাওয়া এবং অ্যাডভেঞ্চারের জন্য পরিচিত। তাপমাত্রা ২২ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, যা দিল্লির তুলনায় অনেক আরামদায়ক।

কী দেখবেন ও করবেন: লক্ষ্মণ ঝুলা, ত্রিবেণী ঘাটে গঙ্গা আরতি, এবং রিভার রাফটিং।
ভ্রমণের সেরা সময়: মে মাসের শুরু থেকে জুনের প্রথমার্ধ।
কীভাবে পৌঁছাবেন: জলি গ্রান্ট বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সি বা হরিদ্বার থেকে বাসে।

তাপমাত্রা তুলনা

• দিল্লি/আগ্রা: মে-জুনে ৩৫-৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, উচ্চ আর্দ্রতা।
• লাদাখ: ১৫-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, শুষ্ক এবং শীতল।
• মানালি: ১০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, পরিষ্কার আকাশ।
• দার্জিলিং: ১৫-২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা।
• কুর্গ: ২০-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সবুজ প্রকৃতি।

ভ্রমণের পরামর্শ

• আগাম বুকিং: মে ও জুন গ্রীষ্মের ছুটির মরশুম, তাই হোটেল ও টিকিট আগে থেকে বুক করুন।
• হালকা পোশাক: তুলোর পোশাক, সানস্ক্রিন, এবং টুপি ব্যবহার করুন।
• হাইড্রেশন: পর্যাপ্ত পানি পান করুন, বিশেষ করে উচ্চ-উচ্চতার স্থানে।
• আবহাওয়া পরীক্ষা: জুনের শেষে মৌসুমী বৃষ্টির জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখুন।

মে ও জুন মাসে ভারতের শীতল গন্তব্যগুলি গ্রীষ্মের তাপ থেকে মুক্তি দেয় এবং প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ করে দেয়। লাদাখের মরুভূমি থেকে দার্জিলিং-এর চা বাগান, মানালির তুষারাবৃত চূড়া থেকে কুর্গের সবুজ পাহাড়—প্রতিটি স্থানই অনন্য অভিজ্ঞতা দেয়। তাপমাত্রা তুলনা এবং ভ্রমণের সেরা সময় বিবেচনা করে পরিকল্পনা করলে আপনার গ্রীষ্মকালীন ছুটি অবিস্মরণীয় হবে। তাই, ব্যাগ গুছিয়ে প্রস্তুত হোন এবং ভারতের শীতল সৌন্দর্য আবিষ্কার করুন!