রান্নার তেলের দাম কমছে কি? নজরদারিতে কেন্দ্র

ভোজ্যতেলের (Edible Oil) মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্র সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে আমদানি করা অপরিশোধিত সূর্যমুখী, সয়াবিন ও পাম…

Cooking Oil Prices Drop as Centre Monitors Edible Oil Duty Cuts

ভোজ্যতেলের (Edible Oil) মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্র সরকার সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নীতি পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশেষ করে আমদানি করা অপরিশোধিত সূর্যমুখী, সয়াবিন ও পাম তেলের উপর শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমাতে সহায়ক হয়েছে বলে জানানো হয়েছে কেন্দ্রীয় ভোজ্য ও জনবন্টন দফতরের তরফে।

সরকার জানিয়েছে, আমদানি শুল্ক হ্রাসের ফলে ভোজ্যতেলের খুচরো দাম যাতে প্রকৃত অর্থেই কমে এবং ভোক্তারা এর সুফল পান, তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত নজরদারি ও পর্যালোচনা চালানো হবে। ইতিমধ্যেই দেশে বিভিন্ন রাজ্যের প্রধান তেল পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলিতে পরিদর্শন চালিয়েছে কেন্দ্রীয় ভোজ্য ও জনবন্টন দফতর।

   

এই পরিদর্শনগুলো হয়েছে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাটে, যেখানে দেশে সবথেকে বেশি পরিমাণে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও প্রক্রিয়াকরণ হয়। পরিদর্শনের সময় মূলত বন্দরনির্ভর রিফাইনারি এবং অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলোতে গিয়েছিলেন আধিকারিকেরা।

পরিদর্শনে দেখা গিয়েছে, অধিকাংশ প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট ইতিমধ্যেই তাদের পণ্য, যেমন রিফাইন্ড সূর্যমুখী তেল, রিফাইন্ড সয়াবিন তেল এবং আরবিডি পামওলিন তেলের MRP (সর্বাধিক খুচরো মূল্য) ও PTD (ডিস্ট্রিবিউটর মূল্যে) কমিয়েছে।
এই দাম কমানোর মূল কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, অপরিশোধিত ভোজ্যতেল আমদানির ওপর শুল্ক কমানোয় তেলের ল্যান্ডেড কস্ট বা আমদানির খরচ অনেকটাই কমে গিয়েছে।

আরও দাম কমার সম্ভাবনা:
অনেক প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা জানিয়েছেন, তারা আগামী দিনেও ভোজ্যতেলের দাম আরও কমাবে, কারণ কম দামে আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের চালান তারা ধাপে ধাপে পাচ্ছেন। ফলে সামগ্রিকভাবে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং ভোক্তারা আরও কম দামে তেল কিনতে পারবেন।

সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, “আমরা নিশ্চিত করছি, কম শুল্কে আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের সুবিধা যেন খুচরো ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায়। কোথাও যদি এই মূল্যহ্রাসের সুবিধা বিলম্বিত হয় বা অনিয়ম দেখা দেয়, তবে যথোপযুক্ত নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

Advertisements

শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত কীভাবে প্রভাব ফেলছে?
ভোজ্যতেল আমদানির ওপর কেন্দ্র সরকার কয়েক মাস আগে বড়সড় শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে অপরিশোধিত সূর্যমুখী, সয়াবিন ও পাম তেলের উপর ভিত্তি শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল আমদানি অনেক সস্তা হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে সেই অনুযায়ী দামও নিয়ন্ত্রণে এসেছে।এছাড়াও সরকার কন্টিনজেন্সি স্টক বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে এফসিআই গুদামে পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল মজুত রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে।

বাজারে ইতিবাচক ইঙ্গিত:
সরকারি পরিদর্শনের ফলাফলে ইঙ্গিত মিলেছে, তেলের দাম স্থিতিশীল হয়েছে এবং খুচরো বাজারেও তা ধীরে ধীরে প্রভাব ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুল্ক হ্রাস এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের এই যুগ্ম উদ্যোগ বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আরও নামাতে সহায়ক হবে।

ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির হাওয়া:
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে সাধারণ মানুষ রান্নার তেলের উচ্চমূল্যে ভুগছিলেন। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর এর প্রভাব ছিল গুরুতর। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে সেই চাপ কিছুটা হলেও কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

শিল্প মহলের প্রতিক্রিয়া:
তেল প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, “আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। আমদানি শুল্ক কমায় আমাদের উৎপাদন খরচ কমেছে এবং আমরা সেই সুবিধা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।” তারা আরও জানান, শুল্ক কাঠামো স্বচ্ছ হওয়ায় ভবিষ্যতে দাম স্থিতিশীল থাকবে এবং ঘন ঘন মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা কমবে।

মোটের উপর, ভোজ্যতেলের দাম কমাতে সরকারের সক্রিয়তা এবং আমদানি শুল্ক হ্রাসের মতো কার্যকরী পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই সুফল দিচ্ছে। এখন সরকারের নজরদারি ও নীতিগত দৃঢ়তার ওপর নির্ভর করবে এই সুবিধা কতটা সুদূরপ্রসারী হয় এবং দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের থালায় কতটা স্বস্তি ফেরে।