LPG Gas Price: নতুন আর্থিক বছরে জনসাধারণের জন্য একগুচ্ছ মূল্যবৃদ্ধির ঘোষণা এসেছে কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে। গৃহস্থালির রান্নার গ্যাস অর্থাৎ LPG সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয়েছে ৫০ টাকা করে, যা আজ, সোমবার ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি। এই দাম বৃদ্ধি কার্যকর হবে ৮ই এপ্রিল, ২০২৫ থেকে। এর ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের “উজ্জ্বলা” প্রকল্পের অধীন গ্রাহকদের জন্য ১৪.২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৫৫০ টাকায়। আর সাধারণ গ্রাহকদের জন্য এটি বাড়বে ৮০৩ টাকা থেকে ৮৫৩ টাকা পর্যন্ত।
মন্ত্রী বলেন, “উজ্জ্বলা প্রকল্পের আওতায় থাকা ও সাধারণ গ্রাহক — উভয় ক্ষেত্রেই সিলিন্ডারের দাম সমান হারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত সরকার কার্যকর করছে কেন্দ্রীয় তহবিল ও আন্তর্জাতিক বাজারের পরিস্থিতি বিচার করে।”
এই মূল্যবৃদ্ধি এমন সময় এসেছে যখন সাধারণ মানুষের ওপর মুদ্রাস্ফীতির চাপ ইতিমধ্যেই বেড়ে চলেছে। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম উর্ধ্বমুখী এবং রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সেই চাপ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহে বাণিজ্যিক গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছিল ৪১ টাকা। রেস্তোরাঁ, হোটেল এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক সংস্থা যারা দৈনিক কাজে এই গ্যাস ব্যবহার করে, তারা কিছুটা স্বস্তি পেলেও, সাধারণ গৃহস্থের জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি একটি বড় ধাক্কা।
এছাড়াও আজ আরেকটি বড় ঘোষণা এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। পেট্রোল এবং ডিজেলের উপর আরোপিত এক্সসাইজ ডিউটি বাড়ানো হয়েছে। একটি সরকারি নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, পেট্রোলে প্রতি লিটারে ১৩ টাকা এবং ডিজেলে প্রতি লিটারে ১০ টাকা করে এক্সসাইজ ডিউটি বাড়ানো হয়েছে। এই বৃদ্ধি কার্যকর হবে ৮ই এপ্রিল ২০২৫ থেকে।
তবে স্বস্তির বিষয় হল, এই এক্সসাইজ ডিউটি বৃদ্ধি সরাসরি সাধারণ গ্রাহকদের উপর বর্তাবে না। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই অতিরিক্ত করের বোঝা বহন করবে তেল বিপণন সংস্থাগুলি (Oil Marketing Companies)। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমার ফলে খুচরো দামে যে কমতি আসার কথা ছিল, তা-ই এই এক্সসাইজ ডিউটি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করা হবে। ফলে গ্রাহক পর্যায়ে পেট্রোল-ডিজেলের খুচরো মূল্যে কোনও পরিবর্তন হবে না।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপ একদিকে সরকারের রাজস্ব বাড়াতে সাহায্য করবে, আবার অন্যদিকে সাধারণ মানুষের উপর অতিরিক্ত চাপ না দিয়েই আন্তর্জাতিক বাজারে দামের ওঠানামার সুযোগ কাজে লাগানো হবে।
তবে প্রশ্ন উঠছে, সরকার কি এই LPG সিলিন্ডারের দাম বাড়িয়ে গৃহস্থালি খাতে একটা বড় চাপ সৃষ্টি করল না? মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণির পরিবারগুলোর ক্ষেত্রে এই ৫০ টাকা বৃদ্ধিও মাসে একাধিক সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে বড় অঙ্কের খরচ ডেকে আনবে।
উজ্জ্বলা যোজনা চালুর সময় সরকার বলেছিল, গরিব পরিবারগুলো যাতে সাশ্রয়ে রান্নার গ্যাস ব্যবহার করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রকল্পের অধীনও যখন সিলিন্ডারের দাম ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায় পৌঁছায়, তখন প্রকৃতপক্ষে কতটা উপকার পাচ্ছেন প্রকল্পভুক্ত পরিবারগুলি, তা নিয়েই উঠছে প্রশ্ন।
নতুন দাম বৃদ্ধির ফলে অনেকে বিকল্প জ্বালানির দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হবেন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে আবারও কাঠ, কয়লা বা কেরোসিনের মতো পরিবেশদূষণকারী জ্বালানির প্রতি নির্ভরতা বাড়তে পারে — যা স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলবে এবং দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই পরিস্থিতিতে সরকার কীভাবে জনগণের পাশে দাঁড়াবে এবং কোনরকম সহায়তা প্রদান করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। যদিও আপাতত পেট্রোল-ডিজেলের খুচরো দামে পরিবর্তন না হওয়ায় কিছুটা স্বস্তি থাকলেও, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি যে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচে বড়সড় প্রভাব ফেলবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশের আর্থিক পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম, এবং সরকারের রাজস্বনীতির সমন্বয়ে এই মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও, এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে দেশের কোটি কোটি সাধারণ মানুষের জীবনে। এখন দেখার, সরকার ভবিষ্যতে গৃহস্থদের জন্য আরও কোনও সহায়ক নীতি ঘোষণা করে কিনা — নাহলে এই মূল্যবৃদ্ধির বোঝা সাধারণ মানুষের কাঁধেই চাপবে।