বছরের নির্দিষ্ট একটি সময়ে ট্যাক্সপেয়ারদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি হল আয়কর রিটার্ন (ITR) ফাইল করা। আয়করের আওতায় পড়া প্রত্যেক ব্যক্তিরই বার্ষিক আয় নির্দিষ্ট সীমার বেশি হলে রিটার্ন ফাইল করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু অনেকের মধ্যেই একটি বড় ধোঁয়াশা কাজ করে — কোন ফর্মটি ব্যবহার করতে হবে? কারণ আয়কর বিভাগ বিভিন্ন ধরনের আয়ের ভিত্তিতে বিভিন্ন ITR ফর্ম নির্ধারণ করেছে। এই ফর্মগুলো বেছে নেওয়া এবং সঠিকভাবে ফাইল করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভুল ফর্ম বেছে নিলে রিটার্ন অবৈধ হতে পারে এবং জরিমানা বা অন্য জটিলতাও হতে পারে।
চলুন এবার ধাপে ধাপে দেখে নেওয়া যাক কোন ITR ফর্ম কার জন্য প্রযোজ্য।
ITR 1 – সহজ ফর্ম
ITR 1 ফর্ম, যেটিকে সাধারণত ‘সহজ’ নামেও ডাকা হয়, মূলত রেসিডেন্ট (অর্থাৎ ভারতীয়) ব্যক্তিদের জন্য প্রযোজ্য, যাদের মোট বার্ষিক আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি নয়। এই ফর্মটি তারা ব্যবহার করতে পারেন যারা বেতনভুক্ত কর্মচারী, পেনশনভোগী, অথবা যাদের একটিমাত্র বাড়ির সম্পত্তি থেকে আয় রয়েছে। এছাড়াও, ব্যাংকের সুদ বা ডিপোজিটের সুদ ইত্যাদি অন্যান্য উৎস থেকে আয় থাকলেও এই ফর্ম ব্যবহার করা যায়।
যদি কারও কৃষি আয় থাকে, তবে তা ৫,০০০ টাকার মধ্যে হলে ITR 1 ফর্মের মাধ্যমে তা ঘোষণা করা যাবে। কিন্তু ৫,০০০ টাকার বেশি হলে এই ফর্ম ব্যবহার করা যাবে না।
ITR 2 – বিনিয়োগকারী ও বিদেশি আয়ের জন্য
যদি কারও আয় বেতন, পেনশন, এক বা একাধিক বাড়ির সম্পত্তি, বা অন্যান্য উৎস থেকে হয় এবং সেইসঙ্গে তার বিনিয়োগের মাধ্যমে ক্যাপিটাল গেইন থাকে, সেক্ষেত্রে ITR 2 ফর্ম ব্যবহার করতে হবে।
যারা হিন্দু অদিভাজিত পরিবার (HUF), নন-রেসিডেন্ট (NRI), অথবা রেসিডেন্ট নট অর্ডিনারিলি রেসিডেন্ট (RNOR), তারাও এই ফর্মের মাধ্যমে রিটার্ন জমা দিতে পারেন। এছাড়াও, যদি কেউ কোনো বছরের মধ্যে আনলিস্টেড শেয়ারে বিনিয়োগ করে থাকেন বা বিদেশে কোনো সম্পদ/ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই ITR 2 ফর্ম ব্যবহার করতে হবে।
যদি কৃষি আয় ৫,০০০ টাকার বেশি হয়, সেক্ষেত্রেও এই ফর্মটি প্রযোজ্য।
ITR 3 – ব্যবসা বা পেশাদার আয়
যেসব ব্যক্তি বা হিন্দু অবিভক্ত পরিবার ব্যবসা চালান বা কোনো পেশার মাধ্যমে আয় করেন এবং তাদের আয় হিসাবের বই রাখতে হয় অথবা নিরীক্ষা করাতে হয়, তাদের জন্য ITR 3 প্রযোজ্য।
যদি কেউ ব্যবসায়িক পার্টনারশিপ ফার্মের অংশীদার হন, সেক্ষেত্রেও তার শেয়ারের আয় এই ফর্মের মাধ্যমে দেখাতে হবে। ITR 3-এর মাধ্যমে ব্যবসার পাশাপাশি বেতন, পেনশন, বাড়ির সম্পত্তি এবং অন্যান্য উৎস থেকে আয়ও দেখানো যায়। এছাড়াও, যারা আনলিস্টেড ইকুইটি শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন এবং যারা প্রেফারেন্স শেয়ার হোল্ডার, তাদেরও এই ফর্ম প্রযোজ্য।
ITR 4 – সহজ পদ্ধতিতে ব্যবসায়িক আয়
যেসব ব্যক্তি বা HUF-এর বার্ষিক আয় ৫০ লাখ টাকার মধ্যে, এবং যারা presumptive taxation scheme (section 44AD, 44ADA, বা 44AE)-এর অধীনে ব্যবসা বা পেশার আয় ঘোষণা করতে চান, তারা ITR 4 ফর্ম ব্যবহার করতে পারেন।
এটি মূলত ছোট ব্যবসায়ী, ছোট দোকানদার, ছোট পেশাজীবী (যেমন ডাক্তার, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট)-দের জন্য প্রযোজ্য। এতে জটিল হিসাবের প্রয়োজন হয় না এবং ফর্মটি তুলনামূলকভাবে সহজ।
যদি কোনো ব্যক্তির আয় বেতন, পেনশন, একটিমাত্র বাড়ির সম্পত্তি বা অন্যান্য উৎস থেকে হয় এবং তার ব্যবসার আয় presumptive পদ্ধতিতে দেখানো হয়, তখন তিনি ITR 4 ব্যবহার করতে পারেন।
সঠিক ফর্ম বেছে নেওয়ার গুরুত্ব
সঠিক ITR ফর্ম বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভুল ফর্ম ফাইল করলে আয়কর বিভাগ সেই রিটার্ন বাতিল করতে পারে, জরিমানা ধার্য করতে পারে বা ফের সংশোধিত রিটার্ন ফাইল করতে হতে পারে।
বর্তমানে, আয়কর রিটার্ন ফাইল করা অনেক সহজ হয়েছে। ই-ফাইলিং পোর্টালে সহজেই ফর্ম ডাউনলোড করা যায় এবং গাইডলাইন অনুযায়ী ফাইল করা যায়। তবুও, কারও যদি বিভ্রান্তি থাকে, তবে একজন ট্যাক্স কনসালট্যান্ট বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
মোট কথা, আয়কর রিটার্ন ফাইল করা শুধু আইনত বাধ্যতামূলক নয়, এটি একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের দায়িত্বও বটে। সঠিক ফর্ম বেছে নিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রিটার্ন ফাইল করলে ভবিষ্যতে অনেক ঝামেলা এড়ানো যায়। সুতরাং, আপনার আয়ের ধরন অনুযায়ী ফর্ম নির্বাচন করুন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দায়িত্বশীলতার সাথে রিটার্ন ফাইল করুন।