কেন্দ্রীয় সরকার পণ্য ও সেবা কর (GST) কাঠামোকে সরল করতে ১২ শতাংশ হারের স্ল্যাব বাতিল করার পরিকল্পনা করলেও, এই প্রস্তাব নিয়ে জিএসটি (GST) হার যৌক্তিকীকরণের জন্য গঠিত মন্ত্রীদল (গ্রুপ অফ মিনিস্টার্স বা GoM) এখনও একমত হতে পারেনি। এই অচলাবস্থা ভাঙতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন আগামী এপ্রিলে, বাজেট অধিবেশনের পর, সরাসরি জিওএম-এর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবেন বলে জানা গেছে। মানিকন্ট্রোলের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সীতারমনের এই হস্তক্ষেপ মতপার্থক্য দূর করে সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
জিওএম-এ ছয়টি রাজ্যের প্রতিনিধি রয়েছেন—বিহার, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, কর্ণাটক, পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরল। এই গ্রুপের মধ্যে ১২ শতাংশ স্ল্যাব বাতিলের প্রস্তাব নিয়ে গভীর মতভেদ দেখা দিয়েছে। অনেক রাজ্য এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে, কারণ তারা মনে করে এটি করের বোঝার অসম বণ্টন এবং রাজস্বের সম্ভাব্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। সূত্রের খবর, সীতারমন এপ্রিলে জিওএম-এর সঙ্গে বৈঠক করে রাজ্যগুলির দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করবেন এবং তার নির্দেশনার মাধ্যমে একটি সমাধানের চেষ্টা করবেন।
১২% স্ল্যাব নিয়ে বিতর্ক:
মানিকন্ট্রোলের সূত্র জানিয়েছে, ১২ শতাংশ জিএসটি (GST) স্ল্যাব বাতিলের বিষয়ে জিওএম-এর মধ্যে কোনও ঐকমত্য নেই। কেন্দ্র এই স্ল্যাবটি তুলে দেওয়ার পক্ষে থাকলেও, বেশ কয়েকটি রাজ্যের মন্ত্রী এর বিরোধিতা করছেন। তাদের যুক্তি, এই সিদ্ধান্ত নির্দিষ্ট খাতের ওপর অসম প্রভাব ফেলতে পারে এবং রাজ্যগুলির রাজস্ব আয়ে ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। এই মতভেদের কারণে জিএসটি হার সংস্কারে অগ্রগতি ধীর হয়ে পড়েছে। সীতারমনের সরাসরি হস্তক্ষেপ এই অচলাবস্থা ভাঙতে এবং জিএসটি সংস্কারের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
জিএসটি-র (GST) চারটি প্রধান হারের মধ্যে—৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%—১২ শতাংশ স্ল্যাব ভারতের মোট জিএসটি রাজস্বের মাত্র ৫ শতাংশ অবদান রাখে, যা এটিকে সবচেয়ে কম রাজস্বদায়ী স্ল্যাব করে তুলেছে। তুলনায়, ১৮ শতাংশ স্ল্যাব মোট রাজস্বের ৭৩ শতাংশ, ২৮ শতাংশ স্ল্যাব ১২.৫ শতাংশ এবং ৫ শতাংশ স্ল্যাব ৮ শতাংশ রাজস্ব সরবরাহ করে। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে জিএসটি চালু হওয়ার পর থেকে এটি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব উৎস হয়ে উঠেছে। তবে, কেন্দ্রের ১২ শতাংশ স্ল্যাব বাতিলের পরিকল্পনা সত্ত্বেও, জিওএম এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র সামান্য পরিবর্তন করেছে, যেমন কিছু পণ্যকে এক স্ল্যাব থেকে অন্য স্ল্যাবে স্থানান্তর করা, কিন্তু পুরো কাঠামোর আমূল সংস্কারে এগোয়নি।
কেন্দ্র সরকার জিএসটি (GST) কাঠামোকে তিন হারের ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করতে চায়—৫%, ১৮% এবং ২৮%। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে কর ব্যবস্থা আরও সরল এবং দক্ষ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, রাজ্যগুলির মধ্যে ঐকমত্যের অভাব এই প্রস্তাবের পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু রাজ্যের মন্ত্রী মনে করেন, ১২ শতাংশ স্ল্যাব তুলে দিলে নির্দিষ্ট শিল্প ও পণ্যের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে, যা রাজ্যগুলির আর্থিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে।
সাম্প্রতিক ইউনিয়ন বাজেটে আয়করে ছাড় দেওয়ার পর, সরকার এখন জিএসটি হার যৌক্তিকীকরণের প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে মনোযোগ দিয়েছে। এর লক্ষ্য হল খরচ বাড়ানো এবং কর-সংক্রান্ত বিরোধ কমানো। অর্থনীতিবিদদের মতে, সরাসরি করের (যেমন আয়কর) তুলনায় পরোক্ষ কর (যেমন জিএসটি) হ্রাস করা চাহিদা বাড়াতে বেশি কার্যকর। এটি জনগণের ব্যয় বাড়িয়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহিত করতে পারে।
কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি দীর্ঘদিন ধরে জিএসটি (GST) যৌক্তিকীকরণে একটি মধ্যম পথ খুঁজতে চেষ্টা করছে। তবে, রাজ্যগুলির বিরোধিতার কারণে এই প্রক্রিয়া ধীরগতিতে এগোচ্ছে। সীতারমনের হস্তক্ষেপ এই অচলাবস্থা ভাঙতে এবং জিএসটি সংস্কারের গতি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিরোধী রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, কেরলের মতো রাজ্যগুলি উল্লেখযোগ্য। তারা মনে করে, ১২ শতাংশ স্ল্যাব বাতিল করলে কিছু পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত বোঝা চাপাতে পারে। এছাড়া, রাজস্ব কমে গেলে রাজ্যগুলির উন্নয়ন প্রকল্পগুলি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। অন্যদিকে, কেন্দ্রের যুক্তি, এই স্ল্যাবের কম রাজস্ব অবদানের কারণে এটি বাতিল করা যৌক্তিক এবং দীর্ঘমেয়াদে কর ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করবে।
জিএসটি (GST) হার সরলীকরণ ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। তবে, এর সাফল্য নির্ভর করছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলির মধ্যে সমঝোতার ওপর। এপ্রিলে সীতারমনের নেতৃত্বে জিওএম-এর সঙ্গে আলোচনা এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে পারে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, জিএসটি হার কমালে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, যা অর্থনীতিতে নতুন গতি আনতে পারে।
জিএসটি (GST) কাঠামো সরল করার কেন্দ্রের প্রচেষ্টা ১২ শতাংশ স্ল্যাব বাতিলের প্রস্তাবে এসে রাজ্যগুলির বিরোধিতার মুখে আটকে গেছে। নির্মলা সীতারমনের আসন্ন হস্তক্ষেপ এই মতভেদ দূর করে একটি সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে পারে। জিএসটি সংস্কারের ভবিষ্যৎ কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক লক্ষ্যের ওপর নির্ভর করছে, এবং এপ্রিলের বৈঠক এই প্রক্রিয়ায় একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে।