সিএনজি গাড়ির মালিকদের ‘দুঃসংবাদ’ দিয়ে বাড়ছে গ্যাসের দাম

CNG Price Hike: ভারতে দুই বছর পর প্রথমবারের জন্য দেশীয়ভাবে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, যা সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস)-এর দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।…

CNG Price Hike Likely as India Raises APM Gas Prices After 2 Years

CNG Price Hike: ভারতে দুই বছর পর প্রথমবারের জন্য দেশীয়ভাবে উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে, যা সিএনজি (কম্প্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস)-এর দাম বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের পেট্রোলিয়াম প্ল্যানিং অ্যান্ড অ্যানালিসিস সেল (পিপিএসি)-এর একটি বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ১ এপ্রিল থেকে এপিএম (অ্যাডমিনিস্ট্রেটেড প্রাইসিং মেকানিজম) গ্যাসের দাম প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ৬.৫০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৬.৭৫ ডলার করা হয়েছে।

   

এপিএম গ্যাস হল ওএনজিসি (অয়েল অ্যান্ড ন্যাচারাল গ্যাস কর্পোরেশন লিমিটেড) এবং ওআইএল (অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড)-এর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর দ্বারা উৎপাদিত প্রাকৃতিক গ্যাস, যা তাদেরকে মনোনীত ভিত্তিতে দেওয়া ক্ষেত্র থেকে আহরিত হয়। এই গ্যাসটি পরিবারের রান্নাঘরে পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয় এবং সিএনজি-তে রূপান্তরিত করে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

Advertisements

দুই বছরের মধ্যে এই প্রথম দাম বৃদ্ধি সরকারের পূর্বনির্ধারিত রোডম্যাপের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০২৩ সালের এপ্রিলে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করে, যেখানে দেশে উৎপাদিত বেশিরভাগ প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম মাসিক গড় আমদানি করা অপরিশোধিত তেলের মূল্যের ১০ শতাংশ হিসেবে নির্ধারণ করার কথা বলা হয়েছিল। এই নীতিতে সর্বনিম্ন মূল্য ৪ ডলার প্রতি এমএমবিটিইউ এবং সর্বোচ্চ সীমা ৬.৫ ডলার নির্ধারণ করা হয়। তবে, কমিটির প্রতি বছর ০.৫০ ডলার বৃদ্ধির সুপারিশের পরিবর্তে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে দুই বছর ধরে দাম অপরিবর্তিত থাকবে এবং তারপর প্রতি বছর ০.২৫ ডলার করে বাড়বে। সোমবার ঘোষিত এই বৃদ্ধি সেই সিদ্ধান্তেরই ফল।

নতুন দামের বিবরণ

পিপিএসি-র তথ্য অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত এপিএম গ্যাসের দাম অপরিশোধিত তেলের ১০ শতাংশ ইনডেক্সেশন অনুসারে ৭.২৬ ডলার প্রতি এমএমবিটিইউ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটি সর্বোচ্চ সীমার অধীন। ফলে, সর্বোচ্চ সীমা ৬.৫০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৬.৭৫ ডলার করা হয়েছে। এই নতুন সীমা ২০২৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং আগামী বছরের এপ্রিলে আরও ০.২৫ ডলার বৃদ্ধি পাবে।

২০২৩ সালের এপ্রিলের আগে, এপিএম শাসিত ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত গ্যাসের দাম ছয় মাস অন্তর নির্ধারিত হতো। এটি চারটি আন্তর্জাতিক গ্যাস ট্রেডিং হাবের গড় মূল্যের উপর ভিত্তি করে গণনা করা হতো। এই গ্যাস দেশের মোট গ্যাস উৎপাদনের ৭০ শতাংশের জন্য দায়ী। ২০২৩ সালের সিদ্ধান্তের পর থেকে এপিএম গ্যাসের দাম মাসিক ভিত্তিতে সংশোধন করা হয়, তবে এটি সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ সীমার অধীন। বর্তমানে সর্বোচ্চ সীমা ৬.৭৫ ডলার প্রতি এমএমবিটিইউ।

দামের ওঠানামার ইতিহাস

২০২৩ সালের এপ্রিলের আগে এপিএম গ্যাসের দামে বড় ওঠানামা দেখা গেছে। ২০২১ সালে এটি সর্বনিম্ন ১.৭৯ ডলার প্রতি এমএমবিটিইউ-তে নেমেছিল, আবার ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত ছয় মাসের জন্য সর্বোচ্চ ৮.৫৭ ডলারে পৌঁছেছিল। নতুন নীতির ফলে দামে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করা হয়েছে।

দুই ধরনের গ্যাসের দাম

দেশে উৎপাদিত গ্যাসের দাম নির্ধারণে দুটি ভিন্ন সূত্র ব্যবহৃত হয়। ওএনজিসি এবং ওআইএল-এর মতো জাতীয় তেল সংস্থার পুরনো বা লিগ্যাসি ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত গ্যাসের জন্য একটি সূত্র, এবং গভীর সমুদ্রের মতো কঠিন এলাকায় অবস্থিত নতুন ক্ষেত্রের জন্য আরেকটি সূত্র। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কেজি-ডি৬-এর মতো কঠিন ক্ষেত্রের গ্যাসের দাম ১ এপ্রিল থেকে ছয় মাসের জন্য ১০.০৪ ডলার প্রতি এমএমবিটিইউ নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের ছয় মাসের ১০.১৬ ডলারের তুলনায় কিছুটা কম।

সিএনজি-র দামে প্রভাব

এই দাম বৃদ্ধির ফলে সিএনজি-র খুচরো মূল্য বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সিএনজি গাড়ির জ্বালানি হিসেবে এবং পরিবারে রান্নার গ্যাস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এপিএম গ্যাসের দামে ০.২৫ ডলার বৃদ্ধির ফলে সিএনজি-র দাম প্রতি কেজিতে ২-৩ টাকা বাড়তে পারে। এটি শহরাঞ্চলের গাড়িচালক এবং গৃহস্থালির উপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে।

পশ্চিমবঙ্গে সম্ভাব্য প্রভাব

পশ্চিমবঙ্গে, বিশেষ করে কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায়, সিএনজি-চালিত বাস, অটো এবং ট্যাক্সির সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এই দাম বৃদ্ধি পরিবহন ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলবে। স্থানীয় সিএনজি পরিবেশকরা এখনও নতুন দাম ঘোষণা করেনি, তবে আগামী দিনে এটি নিয়ে আলোচনা তীব্র হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

সরকারের যুক্তি

সরকারের মতে, এই দাম বৃদ্ধি দেশীয় গ্যাস উৎপাদনকে উৎসাহিত করবে এবং আমদানি নির্ভরতা কমাবে। তবে, ভোক্তাদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ২০২৭ সালে সম্পূর্ণ ডিরেগুলেশনের আগে এই ধরনের বৃদ্ধি ধীরে ধীরে বাজারকে প্রস্তুত করার অংশ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

জনজীবনে প্রভাব

সিএনজি-র দাম বৃদ্ধি গাড়িচালক, বিশেষ করে অটো ও ট্যাক্সি চালকদের জন্য সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেকে এই পরিবর্তনের ফলে ভাড়া বাড়াতে বাধ্য হতে পারেন, যা যাত্রীদের উপরও চাপ ফেলবে। গৃহস্থালিতে পাইপলাইন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি মধ্যবিত্ত পরিবারের বাজেটেও প্রভাব ফেলতে পারে।

দুই বছর পর এপিএম গ্যাসের দাম বৃদ্ধি ভারতের জ্বালানি নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এটি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয়, তবে সাধারণ মানুষের জন্য এটি অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকার এবং গ্যাস পরিবেশকদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে এই প্রভাব কমানোর উপায় খুঁজতে হবে, যাতে ভোক্তারা অতিরিক্ত চাপ থেকে রক্ষা পায়।