ট্রাইব্যুনালের জন্য কেন্দ্রীয় নজরদারি ব্যবস্থার দাবি জানাল CII

ভারতের অর্থনৈতিক শাসন ও ব্যবসা পরিবেশকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করতে ট্রাইব্যুনালগুলির দক্ষতা ও কার্যকারিতার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। এমনই অভিমত জানিয়েছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন…

CII

ভারতের অর্থনৈতিক শাসন ও ব্যবসা পরিবেশকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করতে ট্রাইব্যুনালগুলির দক্ষতা ও কার্যকারিতার উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। এমনই অভিমত জানিয়েছে দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন CII (কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি)। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণা প্রতিবেদনে সিআইআই কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি কেন্দ্রীয় নজরদারি সংস্থা গঠনের আহ্বান জানিয়েছে, যা বিভিন্ন ট্রাইব্যুনালের কাজকর্মে নীতি সংহতি, কার্যক্ষমতার উন্নয়ন এবং নিরবিচ্ছিন্ন নজরদারি বজায় রাখবে।

সিআইআই-এর মতে, শ্রম, পরিবেশ, কর ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিপুল সংখ্যক মামলা নিষ্পত্তিতে ট্রাইব্যুনালগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু এইসব ট্রাইব্যুনালের প্রশাসনিক দায়িত্ব বর্তমানে বিভিন্ন মন্ত্রক ও বিভাগে বিভাজিত থাকায় মান ও প্রক্রিয়ায় অসঙ্গতি দেখা যায়, যা সমগ্র ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলছে।

   

৬.৭ ট্রিলিয়ন টাকার বকেয়া মামলা ঝুলে আছে ITAT-এ
সিআইআই-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র ইনকাম ট্যাক্স অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনাল (ITAT)-এ প্রায় ৬.৭ ট্রিলিয়ন টাকার মামলা ঝুলে রয়েছে, যা দেশের মোট বিচারাধীন প্রত্যক্ষ কর সংক্রান্ত অর্থের ৫৭ শতাংশ। এ থেকেই স্পষ্ট যে, ট্রাইব্যুনালগুলির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আটকে রয়েছে, যা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দ্রুত মুক্ত করে দেশের অর্থনীতিকে গতি দেওয়া সম্ভব।

এই বাস্তবতা মাথায় রেখে সিআইআই বলেছে, “ট্রাইব্যুনালগুলির কার্যকারিতা বাড়ানো শুধু মাত্র প্রশাসনিক সংস্কারের বিষয় নয়, বরং এটি বিনিয়োগের আবহ তৈরি, ব্যবসার পরিবেশ উন্নয়ন এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”

একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সংস্থার প্রয়োজনীয়তা
সিআইআই প্রস্তাব দিয়েছে যে, ট্রাইব্যুনালস রিফর্মস অ্যাক্ট, ২০২১-এ প্রয়োজনীয় সংশোধন করে এই কেন্দ্রীয় সংস্থার আইনি ভিত্তি তৈরি করা উচিত। এই সংস্থা পারফরম্যান্স মনিটরিং, ডেটা ট্র্যাকিং, সার্চ-কাম-সিলেকশন কমিটির সঙ্গে সমন্বয়, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং স্বাধীন অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে।

বর্তমানে দেশের আদালত ব্যবস্থার জন্য ‘ন্যাশনাল জুডিশিয়াল ডেটা গ্রিড’-এ রিয়েল টাইম পারফরম্যান্স তথ্য উপলব্ধ থাকলেও, ট্রাইব্যুনালগুলির ক্ষেত্রে তেমন কোনও তথ্যভিত্তিক রেকর্ড নেই, যা “প্রমাণভিত্তিক সংস্কার” প্রক্রিয়াকে বাধা দিচ্ছে। সিআইআই মনে করে, এই ঘাটতি পূরণে কেন্দ্রীয় নজরদারি সংস্থা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

Advertisements

সেক্টরভিত্তিক ট্রাইব্যুনালের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
বর্তমানে দেশে ১৬টির বেশি কেন্দ্রীয় ট্রাইব্যুনাল রয়েছে, যেগুলি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতে কাজ করে। ন্যাশনাল কোম্পানি ল’ ট্রাইব্যুনাল (NCLT) যেমন কোম্পানিজ অ্যাক্ট, ২০১৩ এবং ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাংকরাপ্সি কোড, ২০১৬ বাস্তবায়নের মূল চালিকাশক্তি। এই ট্রাইব্যুনালগুলি কর্পোরেট দেনা নিষ্পত্তি, বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আইনি ও নীতিগত সমর্থন ইতিমধ্যেই বিদ্যমান
সিআইআই আরও জানিয়েছে যে, দেশের সর্বোচ্চ আদালত ও আইনি বিশেষজ্ঞদের একাধিক সুপারিশ—যেমন আইন কমিশনের ২৭২তম রিপোর্ট (২০১৭)—এই ধরনের কেন্দ্রীয় নজরদারি সংস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। সুতরাং, এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে আইনি ভিত্তি ও সমর্থন আগেই প্রস্তুত।

সিআইআই-এর মতে, একটি কেন্দ্রীয় ট্রাইব্যুনাল ওভারসাইট বডি গঠন ভারতের ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর, প্রমাণভিত্তিক ও ভবিষ্যত-উন্মুখ করে তুলবে। এতে যেমন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়বে, তেমনি ব্যবসা পরিচালনার পরিবেশ সহজ হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিও ঘটবে।

এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে তা শুধুমাত্র ট্রাইব্যুনাল সংস্কার নয়, বরং ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকেও একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করছে শিল্প মহল।