CIBIL Score নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর পদক্ষেপের দাবি

ভারতের কোটি কোটি ঋণগ্রহীতার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় একটি মাত্র সংখ্যা— সিবিল স্কোর (CIBIL Score)। গাড়ি বা বাড়ি কেনার ঋণ থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেডিট…

Supreme Court says banks will have to give loans even if the CIBIL score is poor

ভারতের কোটি কোটি ঋণগ্রহীতার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয় একটি মাত্র সংখ্যা— সিবিল স্কোর (CIBIL Score)। গাড়ি বা বাড়ি কেনার ঋণ থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেডিট কার্ড অনুমোদন, সব ক্ষেত্রেই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রথমে তাকায় গ্রাহকের সিবিল স্কোরের দিকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংসদ সদস্য থেকে সাধারণ নাগরিক— সবাই।

তামিলনাডুর সাংসদ কার্তি পি. চিদাম্বরম লোকসভায় বিষয়টি উত্থাপন করে বলেন, সিবিল স্কোর নির্ধারণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অস্বচ্ছ একটি প্রক্রিয়া চলছে। এটি মূলত একটি বেসরকারি সংস্থা ট্রান্সইউনিয়ন (TransUnion CIBIL) পরিচালনা করে। অথচ দেশের প্রতিটি নাগরিকের ঋণগ্রহণ ক্ষমতা ও আর্থিক সুনাম নির্ধারণ করছে এই প্রতিষ্ঠানই।

   

চিদাম্বরমের অভিযোগ—
অনেক সময় দেখা যায়, কৃষক বা সাধারণ ঋণগ্রহীতা সরকারী ভর্তুকি কিংবা ঋণ মুকুবের সুবিধা পেলেও সেটি সঠিক সময়ে তাদের ক্রেডিট ইতিহাসে (Credit History) আপডেট হয় না।
ফলে, ব্যাংকে গেলে তাদের জানানো হয় যে তাদের স্কোর খারাপ।
অথচ ঋণগ্রহীতার হাতে কোনো সুযোগ নেই এই তথ্যে আপিল বা সংশোধনের।
তিনি বলেন, “এটি একটি বেসরকারি সংস্থা, অথচ আমরা জানিই না তারা কীভাবে তথ্য হালনাগাদ করছে। এর কোনো স্বচ্ছতা নেই। আমাদের আপিল করার কোনো রাস্তা নেই। তাই সরকারের উচিত এই প্রক্রিয়ায় আরও স্বচ্ছতা আনা।”
সংসদের বাইরে, সাধারণ মানুষও অনলাইনে একই রকম সমস্যার কথা জানিয়েছেন। বহু ব্যবহারকারী অভিযোগ করেছেন, সিবিল স্কোর চেক করার পরপরই তারা নানান সংস্থা থেকে অবিরাম স্প্যাম কল পাচ্ছেন।

একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, তিনি সিবিল স্কোর চেক করার পাশাপাশি দুটি ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন। এর পর থেকেই বাজাজ ফাইন্যান্স (Bajaj Finance) থেকে প্রি-অ্যাপ্রুভড লোনের কল আসতে শুরু করে।

অন্য একজন জানান, তিনি একবার পয়সাবাজার (PaisaBazaar) প্ল্যাটফর্মে সিবিল স্কোর দেখেছিলেন। সেই সময় থেকেই নিয়মিত ফোন পাচ্ছেন বিভিন্ন ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।
এই পরিস্থিতি মানুষকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। কারণ, আর্থিক তথ্যের গোপনীয়তা (Financial Data Privacy) ভঙ্গ হওয়ার শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।

কিছু ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, তারা এখন গুগল পে (Google Pay)–এর সিবিল ব্যুরো ফিচারের মাধ্যমে স্কোর চেক করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। কারণ সেখানে ব্যক্তিগত তথ্য বাণিজ্যিক সংস্থার হাতে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা তুলনামূলক কম। তবে এর মধ্যেও অনেকের মধ্যে সন্দেহ রয়ে গেছে, আর্থিক তথ্য ঠিক কতটা নিরাপদ।

কেন এত গুরুত্বপূর্ণ সিবিল স্কোর?
সিবিল স্কোর আসলে একটি তিন অঙ্কের সংখ্যা (৩০০ থেকে ৯০০-এর মধ্যে), যা নির্ধারণ করে কোনো ব্যক্তির ঋণগ্রহণ ক্ষমতা ও আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতা।

Advertisements

৭৫০ বা তার বেশি স্কোর সাধারণত “ভাল” বলে ধরা হয়।
এর কম হলে ব্যাংক ঋণ দিতে অনীহা প্রকাশ করে।
এই স্কোর তৈরি হয় ব্যক্তির ঋণ নেওয়া, কিস্তি পরিশোধ, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের মতো নানা তথ্যের ভিত্তিতে। কিন্তু সমস্যা হলো, তথ্য হালনাগাদে ভুল হলে ভুক্তভোগীকে এর দায় বইতে হয়।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে—
যেহেতু ট্রান্সইউনিয়ন একটি বেসরকারি সংস্থা, তাই এর কাজের উপর আরও কড়া নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মতান্ত্রিক নজরদারি প্রয়োজন।
গ্রাহকেরা যাতে সহজে অভিযোগ জানাতে ও সংশোধন চাইতে পারেন, সেই ব্যবস্থাও জরুরি।
পাশাপাশি ডেটা শেয়ারিং–এর ক্ষেত্রে গ্রাহকের স্পষ্ট সম্মতি নেওয়া বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত।

আজকের দিনে আর্থিক তথ্য সবচেয়ে সংবেদনশীল সম্পদগুলির মধ্যে একটি। যদি কোনো ব্যক্তির ঋণ ইতিহাস বা ক্রেডিট স্কোর অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানের হাতে পৌঁছে যায়, তবে তা শুধু স্প্যাম কলেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—পরবর্তীতে জালিয়াতি বা প্রতারণার ঝুঁকিও বাড়তে পারে।

সংসদে এই ইস্যুটি ওঠার পর অনেকেই আশা করছেন যে সরকার বিষয়টিতে কঠোর নজরদারি করবে। বিশেষত, তথ্য আপডেটের নিয়ম আরও কড়া করতে হবে, গ্রাহকের জন্য অভিযোগ ও আপিল করার একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে এবং ডেটা প্রাইভেসি সংক্রান্ত আইন আরও শক্তিশালী করতে হবে।

সিবিল স্কোর আজকের দিনে ঋণগ্রহীতার আর্থিক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু সেই স্কোর যদি স্বচ্ছতার অভাব, তথ্যের ভুল ও ডেটা ফাঁসের আশঙ্কায় ঘেরা থাকে, তবে সাধারণ মানুষ সবসময় আতঙ্কে থাকবেন। সাংসদদের প্রশ্ন, ব্যবহারকারীদের অভিযোগ ও বিশেষজ্ঞদের মত—সব মিলিয়ে এখন সময় এসেছে কেন্দ্রীয় সরকারকে এগিয়ে এসে এই ব্যবস্থাকে আরও দায়বদ্ধ ও নিরাপদ করার। নাহলে কোটি কোটি সাধারণ ঋণগ্রহীতার আর্থিক ভবিষ্যৎ প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে পড়বে।