টিডিএস ফেরতের নিয়মে বড় পরিবর্তন, জানুন নতুন নিয়ম

বহু প্রতীক্ষিত আয়কর বিল, ২০২৫-এ বড় পরিবর্তনের সুপারিশ করল লোকসভার একটি সংসদীয় বাছাই কমিটি। বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত পাণ্ডার নেতৃত্বাধীন এই কমিটি সোমবার লোকসভায় তাদের রিপোর্ট…

HRA Claim Without TDS Deduction May Lead to Penalty

বহু প্রতীক্ষিত আয়কর বিল, ২০২৫-এ বড় পরিবর্তনের সুপারিশ করল লোকসভার একটি সংসদীয় বাছাই কমিটি। বিজেপি সাংসদ বৈজয়ন্ত পাণ্ডার নেতৃত্বাধীন এই কমিটি সোমবার লোকসভায় তাদের রিপোর্ট পেশ করেছে। বিলটি বর্তমান আয়কর আইন, ১৯৬১-এর স্থলাভিষিক্ত হবে, যা গত ছয় দশকেরও বেশি সময় ধরে বলবৎ রয়েছে। রিপোর্টে ছোট করদাতাদের স্বস্তি দিতে এবং এনজিও ও ধর্মীয়-চ্যারিটেবল সংস্থাগুলোর স্বার্থ রক্ষায় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনের প্রস্তাব (TDS Refunds) রাখা হয়েছে।

দেরিতে রিটার্ন জমা দিলেও পাওয়া যাবে টিডিএস রিফান্ড:
বর্তমানে আয়কর রিটার্ন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না জমা দিলে টিডিএস রিফান্ডের সুযোগ মেলে না। সংসদীয় কমিটি এই নিয়মে পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। কমিটির মতে, অনেক সময় দেখা যায় যে যেসব ব্যক্তির আয় করযোগ্য সীমার নিচে, তাদের আয় থেকে টিডিএস কেটে নেওয়া হয়। কিন্তু রিটার্ন দেরিতে জমা দেওয়ায় তারা রিফান্ড পান না। এর ফলে ওই সব ক্ষুদ্র করদাতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন।

   

কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, “যেসব করদাতার প্রকৃত আয় করযোগ্য নয়, অথচ তাদের কাছ থেকে টিডিএস কেটে নেওয়া হয়েছে, তাদের শুধুমাত্র দেরিতে রিটার্ন জমা দেওয়ার কারণে রিফান্ড থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয়।” তাই ক্লজ ২৬৩-র উপধারা (১)(ix) বাতিল করার প্রস্তাব দিয়েছে কমিটি, যাতে দেরিতে রিটার্ন জমা দিলেও রিফান্ড পাওয়ার সুযোগ থাকে।

হাইব্রিড ট্রাস্টের উপর ৩০% কর নিয়ে আপত্তি:
কমিটি তাদের প্রতিবেদনে নতুন আয়কর বিলে প্রস্তাবিত ক্লজ ৩৩৭-রও কড়া সমালোচনা করেছে। এই ধারায় বলা হয়েছে, সব রেজিস্টার্ড এনজিও (Non-Profit Organisation)-র গোপন দানে ৩০% হারে ফ্ল্যাট কর বসবে। শুধুমাত্র পূর্ণভাবে ধর্মীয় উদ্দেশ্যে স্থাপিত সংস্থাগুলোকেই এই কর থেকে কিছুটা ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

সংসদীয় কমিটি জানিয়েছে, এই নিয়ম ধর্মীয় ও চ্যারিটেবল উভয় উদ্দেশ্যে পরিচালিত সংস্থাগুলোর (religious-cum-charitable trusts) জন্য গভীরভাবে সমস্যাজনক। কারণ বর্তমানে বলবৎ আয়কর আইনের ১১৫বিবিসি ধারায় এমন সংস্থাগুলিকে বড় করছাড় দেওয়া হয়, যদি তারা সরাসরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা হাসপাতালের জন্য গোপন অনুদান গ্রহণ না করে।

কমিটির মতে, প্রস্তাবিত নিয়ম চ্যারিটেবল কাজের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় উদ্দেশ্য সম্পন্ন সংস্থাগুলিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যা ধর্মীয় ও সমাজকল্যাণমূলক কাজের পরিসর সংকুচিত করবে। তাই তারা সুপারিশ করেছে, এই হাইব্রিড ধরনের সংস্থাগুলির উপর করছাড়ের বিষয়টি আগের মতোই রাখা হোক।

Advertisements

‘রসিদ’ নয়, ‘আয়’-এর উপর কর বসানোর সুপারিশ:
নতুন আয়কর বিলে এনজিও ও অনাবাসী সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে ‘আয়’-এর পরিবর্তে ‘রসিদ’ (receipts)-এর উপর কর বসানোর প্রস্তাব রয়েছে। এতে ছোট এনজিও বা ধর্মীয় সংস্থাগুলি যারা অনুদান সংগ্রহ করে চলতি খরচ মেটায়, তারা সমস্যায় পড়তে পারে। কারণ তাদের প্রকৃত লাভ নয়, পুরো আয়ের উপর কর দিতে হতে পারে।

কমিটি এই প্রস্তাবেরও বিরোধিতা করেছে। তারা বলেছে, “এটি প্রকৃত আয় নয়, সম্পূর্ণ রসিদের উপর কর বসানোর মতো, যা আয়করের নীতির পরিপন্থী।” তাই তারা সুপারিশ করেছে, বিলের ভাষায় ‘রসিদ’ শব্দের পরিবর্তে ‘আয়’ শব্দটি ফিরিয়ে আনা হোক, যাতে শুধুমাত্র প্রকৃত আয় বা নিট লাভের উপর কর বসে।

নতুন আয়কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও ন্যায়ের উপর জোর:
কমিটি তাদের রিপোর্টে মোটের উপর জানিয়েছে যে প্রস্তাবিত আয়কর বিলটি আরও স্পষ্ট, যুক্তিসম্মত ও ন্যায়নিষ্ঠ হওয়া দরকার। বিশেষত যেসব প্রস্তাব ক্ষুদ্র করদাতা, এনজিও বা ধর্মীয়-চ্যারিটেবল সংস্থাকে প্রভাবিত করে, সেগুলিতে মানবিকতা ও বাস্তবিকতা বিবেচনা করে পরিবর্তন আনা উচিত।

লোকসভার এই গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে ছোট করদাতাদের জন্য দেরিতে রিটার্ন জমা দিলেও রিফান্ড পাওয়ার সুযোগ, হাইব্রিড এনজিও ও ট্রাস্টগুলোর জন্য করছাড়ের স্বীকৃতি, এবং প্রকৃত আয় নয় বরং রসিদ ভিত্তিক কর নির্ধারণের বিরোধিতা করে কর ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে।

এই পরিবর্তনগুলি গৃহীত হলে নতুন আয়কর আইন শুধু আরও আধুনিক ও বাস্তবমুখী হবে না, বরং করদাতাদের কাছে আরও মানবিক ও সহনশীল হয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এখন দেখার বিষয়, কেন্দ্রীয় সরকার ও অর্থ মন্ত্রক এই সুপারিশগুলিকে চূড়ান্ত বিলে কতটা অন্তর্ভুক্ত করে।