অষ্টম বেতন কমিশনে নতুন সম্ভাবনা সরকারি কর্মচারীদের স্বাস্থ্য প্রকল্প

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হেলথ স্কিম (CGHS 2025 update) দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প হিসেবে কাজ করে আসছে। ১৯৫৪ সালে দিল্লিতে…

CGHS 2025 updates for central govt employees under the 8th Pay Commission

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট হেলথ স্কিম (CGHS 2025 update) দীর্ঘদিন ধরে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প হিসেবে কাজ করে আসছে। ১৯৫৪ সালে দিল্লিতে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি বর্তমানে ভারতের ৮০টি শহরে প্রায় ৪২ লক্ষ সুবিধাভোগীকে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী, পেনশনভোগী এবং তাদের নির্ভরশীল পরিবারের সদস্যরা সাশ্রয়ী মূল্যে ব্যাপক চিকিৎসা সুবিধা পান। তবে, ২০২৫ সালে অষ্টম বেতন কমিশনের ঘোষণার পর সিজিএইচএস-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে। জানুয়ারি ২০২৫-এ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, সিজিএইচএস-এর পরিবর্তে একটি নতুন বীমাভিত্তিক স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু হতে পারে, যার নাম হতে পারে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ অ্যান্ড পেনশনার্স হেলথ ইন্স্যুরেন্স স্কিম (সিজিইপিএইচআইএস)। 

সিজিএইচএস-এর বর্তমান সুবিধা
সিজিএইচএস কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য প্রকল্প, যেখানে কর্মচারীদের বেতন থেকে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অবদান কেটে নেওয়া হয়। এই
প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধাভোগীরা নিম্নলিখিত সুবিধাগুলি পান:

   
  • ক্যাশলেস চিকিৎসা: সিজিএইচএস-এর সাথে সংযুক্ত হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ক্যাশলেস চিকিৎসা সুবিধা।
  • আউটডোর পেশেন্ট (ওপিডি) চিকিৎসা: পরামর্শ, ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা এবং ওষুধের খরচ কভার।
  • ইনডোর চিকিৎসা: সরকারি এবং সিজিএইচএস-এর তালিকাভুক্ত বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তির খরচ।
  • জরুরি চিকিৎসা: জরুরি পরিস্থিতিতে সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচের জন্য প্রতিদান।
  • আয়ুষ চিকিৎসা: আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি, সিদ্ধ এবং যোগের মতো ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি।
  • প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, টিকাদান এবং দাঁতের চিকিৎসা।
  • মাতৃত্ব ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা: পরিবার কল্যাণ এবং শিশু স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সুবিধা।

প্রায় ২৪৮৬টি বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার সিজিএইচএস-এর সাথে তালিকাভুক্ত রয়েছে, যা সুবিধাভোগীদের জন্য বিস্তৃত নেটওয়ার্ক প্রদান করে। এছাড়া, আয়ুষমান ভারত ডিজিটাল মিশনের অধীনে ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে সিজিএইচএস আইডি-কে এবিএইচএ (আয়ুষমান ভারত হেলথ অ্যাকাউন্ট) আইডি-এর সাথে সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকে আরও ডিজিটাল ও সুগম করেছে।

8th Pay Commission to Transform Salaries, Housing Loans, PF for Govt Employees
8th Pay Commission to Transform Salaries, Housing Loans, PF for Govt Employees

অষ্টম বেতন কমিশন এবং সিজিএইচএস-এর ভবিষ্যৎ
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে সরকার অষ্টম বেতন কমিশন গঠনের ঘোষণা করে, যার মূল লক্ষ্য হল বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের বেতন ও পেনশনের সমন্বয়। তবে, বেতন কমিশন শুধুমাত্র বেতন বৃদ্ধির জন্য নয়, বিভিন্ন ভাতা, সুবিধা এবং স্বাস্থ্য বীমার ক্ষেত্রেও সংস্কারের সুপারিশ করে। এই প্রেক্ষাপটে, সিজিএইচএস-এর সংস্কার বা প্রতিস্থাপন নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে।

ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিজিএইচএস-এর পরিবর্তে একটি নতুন বীমাভিত্তিক প্রকল্প চালু করার কথা ভাবছে, যার নাম হতে পারে সিজিইপিএইচআইএস। এই প্রকল্পটি আইআরডিএআই-এ নিবন্ধিত বীমা কোম্পানিগুলির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। অতীতের তিনটি বেতন কমিশন (৫ম, ৬ষ্ঠ এবং ৭ম) একটি নতুন স্বাস্থ্য প্রকল্পের সুপারিশ করেছিল, কারণ সিজিএইচএস-এর সীমিত পরিধি এবং সমস্ত এলাকায় এর অপ্রতুল উপস্থিতি নিয়ে সমালোচনা রয়েছে। বিশেষ করে, সিজিএইচএস সুবিধা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শহরে উপলব্ধ, যা গ্রামীণ বা অ-সিজিএইচএস এলাকায় থাকা কর্মচারীদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।

6th vs 7th vs 8th Pay Commission Which Brought the Biggest Salary Hikes for Government Employees?
6th vs 7th vs 8th Pay Commission Which Brought the Biggest Salary Hikes for Government Employees?

ষষ্ঠ বেতন কমিশন সুপারিশ করেছিল যে, একটি ঐচ্ছিক স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু করা হোক, যেখানে কর্মচারীরা নির্দিষ্ট অবদান প্রদান করে স্বেচ্ছায় যোগ দিতে পারেন। তবে, এই সুপারিশ এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। অষ্টম বেতন কমিশনের কাছ থেকেও এমনই একটি সংস্কারের প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যা সিজিএইচএস-এর পরিবর্তে একটি আরও ব্যাপক এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব স্বাস্থ্য বীমা প্রকল্প প্রবর্তন করতে পারে। নতুন প্রকল্পটি সম্ভবত আরও বেশি হাসপাতালের নেটওয়ার্ক, উন্নত ক্যাশলেস সুবিধা এবং বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলির সাথে সহযোগিতার মাধ্যমে সেবার মান উন্নত করবে।

Advertisements

নতুন নির্দেশিকা এবং সুবিধাভোগীদের জন্য সুবিধা
২০২৫ সালের এপ্রিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, যে সমস্ত কর্মচারীদের বেতন থেকে সিজিএইচএস-এর জন্য অবদান কাটা হচ্ছে, তাদের আলাদাভাবে আবেদন না করলেও সিজিএইচএস কার্ড দেওয়া হবে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ, কারণ এর ফলে অনেক কর্মচারী যারা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন, তারা এখন সহজেই সেবা পাবেন।

এছাড়া, সিজিএইচএস-এর সাথে এবিএইচএ আইডি সংযোগের ফলে স্বাস্থ্য তথ্যের ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা আরও সহজ হয়েছে। এই সংযোগের মাধ্যমে সুবিধাভোগীরা তাদের স্বাস্থ্য রেকর্ড ডিজিটালভাবে সংরক্ষণ করতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসকদের সাথে তথ্য ভাগাভাগি করতে পারেন।

চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
যদিও সিজিএইচএস একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, তবুও এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এর সুবিধা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট শহরে উপলব্ধ, এবং অনেক অ-শহরাঞ্চলে কর্মচারীদের সেন্ট্রাল সার্ভিসেস (মেডিকেল অ্যাটেনডেন্স) রুলসের অধীনে চিকিৎসা নিতে হয়। এছাড়া, সিজিএইচএস-এর ওয়েলনেস সেন্টারগুলিতে প্রায় ২৮.৮১% পদ শূন্য রয়েছে, যা সেবার মানের উপর প্রভাব ফেলছে।

অষ্টম বেতন কমিশনের মাধ্যমে সরকার যদি একটি নতুন বীমাভিত্তিক প্রকল্প চালু করে, তবে এটি এই সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারে। নতুন প্রকল্পটি আরও বেশি এলাকায় সুবিধা প্রদান করতে পারে এবং বেসরকারি হাসপাতালের সাথে সহযোগিতা বাড়াতে পারে। তবে, এই ধরনের পরিবর্তন বাস্তবায়নের আগে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে যে, সুবিধাভোগীদের কাছে সেবা অব্যাহত থাকে এবং নতুন প্রকল্পে যোগদানের প্রক্রিয়া সহজ হয়।

সিজিএইচএস কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা জাল হিসেবে কাজ করে। অষ্টম বেতন কমিশনের মাধ্যমে এই প্রকল্পের সংস্কার বা প্রতিস্থাপনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। নতুন প্রকল্পটি যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি আরও ব্যাপক কভারেজ, উন্নত সুবিধা এবং ডিজিটাল ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসেবা অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করতে পারে। সরকারি কর্মচারী এবং পেনশনভোগীরা এখন অষ্টম বেতন কমিশনের চূড়ান্ত সুপারিশের অপেক্ষায় রয়েছেন, যা তাদের স্বাস্থ্য ও আর্থিক কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।