গ্লোবাল সাউথকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে ভারত, জানাল কেন্দ্র

ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ভারত সরকার তার উন্নত এআই মডেল ও প্রযুক্তি গ্লোবাল সাউথ বা দক্ষিণ গোলার্ধের…

Centre Says India Willing To Collaborate On AI With Global South

ভারতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নিয়ে গবেষণা ও উদ্ভাবনের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। ভারত সরকার তার উন্নত এআই মডেল ও প্রযুক্তি গ্লোবাল সাউথ বা দক্ষিণ গোলার্ধের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি সচিব এস. কৃষ্ণন।

শুক্রবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (FICCI) আয়োজিত ‘ভাষান্তর ২০২৫’ (Bhashantara 2025) সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্য আমাদের এমন একটি অনন্য স্থান দিয়েছে, যা ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) ও বহুভাষিক AI টুল তৈরিতে বিশ্বনেতৃত্ব দিতে পারে। ভারতে যদি করা যায়, তবে পৃথিবীর প্রায় যেকোনো জায়গায় করা সম্ভব।”

   

গ্লোবাল সাউথের জন্য বিকল্প নেতৃত্বে ভারত:
জাতিসংঘের বিভিন্ন আধিকারিক পূর্বে ভারতের সহযোগিতামূলক এআই উন্নয়ন দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেছিলেন। এবার সেই সহযোগিতার পথকে আরও প্রসারিত করতে ভারত সরকার প্রকাশ্যে জানিয়ে দিল, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর সঙ্গে তারা এআই মডেল ভাগ করে নিতে প্রস্তুত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত ভারতকে বিশ্বে এমন একটি বিকল্প এআই হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারে, যারা বহুভাষিক ও সীমিত সম্পদযুক্ত ব্যবস্থার জন্য উপযোগী AI সমাধান সরবরাহ করে।

মিশন ভাষিণী ও অনুবাদিনী অ্যাপের সাফল্য:
ভারত ইতিমধ্যেই ‘মিশন ভাষিণী’ এবং ‘অনুবাদিনী’ অ্যাপের মাধ্যমে তার এআই-চালিত মানব ভাষা প্রযুক্তি (HLT) দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে। এই প্রকল্পগুলি ভারতের বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষা ও উপভাষাকে ধরতে সক্ষম হয়েছে এবং বহু মানুষের কাছে প্রযুক্তিগত সুবিধা পৌঁছে দিয়েছে।
অনুবাদিনী অ্যাপ ব্যবহার করে সরকারিভাবে বহু নথি ও বক্তৃতা তাৎক্ষণিকভাবে বহু ভাষায় অনুবাদ করা সম্ভব হয়েছে। এই জাতীয় প্রকল্প গ্লোবাল সাউথে অনেক দেশের জন্য রোল মডেল হয়ে উঠতে পারে।

AI Kosh: ভারতের ডেটা ভাণ্ডার:
সরকারের ‘IndiaAI Mission’ প্রজেক্টের অধীনে তৈরি হয়েছে ‘AI Kosh’, যা একটি বিশাল তথ্যভাণ্ডার বা ডেটা রেপোজিটরি। এখানে বর্তমানে ৪০০-রও বেশি ডেটাবেস রয়েছে, যা গবেষক ও উদ্যোক্তাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। AI Kosh মূলত বহুভাষিক এআই সমাধান তৈরিতে সহায়তা করতে উদ্যত হয়েছে।

Advertisements

AI Kosh-এর মাধ্যমে ভাষাগত সংস্থান যেমন অনুবাদ করা ডেটা, ট্রান্সক্রিপ্ট, অডিও-টেক্সট পেয়ার, এমনকি আঞ্চলিক ভাষার উচ্চারণরূপ বিশ্লেষণ করা সম্ভব হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ছোট ভাষার ডেটাও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনা সম্ভব হয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান ও আয়ুর্বেদ ডিজিটালাইজেশন:
ভারত সরকার AI-এর মাধ্যমে প্রাচীন ভারতীয় জ্ঞান, যেমন আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র ও ঐতিহাসিক পাণ্ডুলিপি ডিজিটাইজ করার কাজেও এগিয়ে এসেছে। এই জাতীয় উদ্যোগ কেবলমাত্র AI উন্নয়ন নয়, বরং বিশ্ব স্বাস্থ্য গবেষণা ক্ষেত্রেও ভারতকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে ভারতের ঐতিহ্যবাহী জ্ঞান আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী গবেষকদের কাছে পৌঁছে যেতে পারে।

বহু-অংশীকারীর মডেল: ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি:
যেখানে অনেক দেশ AI উন্নয়নে কেবলমাত্র রাষ্ট্র বা বেসরকারি সংস্থার ওপর নির্ভর করে, সেখানে ভারত একটি বহু-অংশীকারীর মডেল গঠন করেছে। এই মডেলে একসঙ্গে কাজ করছে সরকার, একাডেমিয়া, গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পক্ষেত্র।
এ প্রসঙ্গে এস. কৃষ্ণন বলেন, “আমরা চাই প্রত্যেকটি ক্ষেত্রের অবদান হোক — বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্টার্টআপ, সরকার থেকে প্রযুক্তি সংস্থা।”

গুগল ও FICCI-র অনুরোধ:
FICCI-র বহুভাষিক ইন্টারনেট কমিটির কো-চেয়ার এবং গুগলের এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের গবেষণা ও এআই অংশীদারিত্বের প্রধান হর্ষ ধাণ্ড বলেন, “সরকারের কাছে অনুরোধ, যেন তারা পিআইবি, দূরদর্শন, অল ইন্ডিয়া রেডিও-এর মত পাবলিক ব্রডকাস্টারদের আর্কাইভ ডেটা গবেষকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়।”
তিনি আরও বলেন, “গবেষণা ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে যাতে ডুপ্লিকেশন না হয়, তার জন্য একটি সেন্ট্রালাইজড প্ল্যাটফর্ম থাকা দরকার। এতে গবেষণার গতি বাড়বে এবং খরচ কমবে।”

শিল্পক্ষেত্রের প্রতিশ্রুতি:
সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন কর্পোরেট ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলি জানিয়েছে, তারা সরকারের সঙ্গে সহযোগিতায় আগ্রহী এবং বহুভাষিক AI প্রযুক্তি উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াবে। তারা AI স্টার্টআপগুলিকে সিড ফান্ডিং, প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং স্কিল ডেভেলপমেন্টে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে।
ভারতের এই উদ্যোগ শুধু প্রযুক্তিগত দিক থেকেই নয়, নীতিগত ও দার্শনিক দিক থেকেও বৈপ্লবিক। AI-এর ক্ষেত্রে “সহযোগিতা না প্রতিযোগিতা” — এই নীতিতে চলার মাধ্যমে ভারত গ্লোবাল সাউথের জন্য এক শক্তিশালী মিত্র হিসেবে উঠে আসছে। আগামী দিনে AI-কে ব্যবহার করে ভাষার বাধা ভেঙে বিশ্বকে আরও কাছাকাছি আনার ক্ষেত্রে ভারতের অবদান নিঃসন্দেহে অনস্বীকার্য।