পিএসইউ কর্মীদের জন্য পেনশন বিধিতে কড়া পরিবর্তন ঘোষণা কেন্দ্রের

Pension for PSU Employees: কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি এক বড় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা লক্ষ লক্ষ কেন্দ্র সরকারী কর্মচারী, বিশেষ করে পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস (PSUs)-এ…

Govt Employees 8th Pay Commission:

Pension for PSU Employees: কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি এক বড় প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যা লক্ষ লক্ষ কেন্দ্র সরকারী কর্মচারী, বিশেষ করে পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস (PSUs)-এ কর্মরত ব্যক্তিদের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এখন থেকে দুর্নীতি বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে বরখাস্ত বা অপসারিত PSU কর্মীরা আর পেনশন এবং অন্যান্য অবসরকালীন সুবিধার জন্য উপযুক্ত হবেন না।

এই পরিবর্তন আনুষ্ঠানিকভাবে সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসেস (পেনশন) সংশোধন বিধি, ২০২৫ এর মাধ্যমে আনা হয়েছে এবং এটি ২২ মে, ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে। সংশোধিত নিয়মগুলি সেন্ট্রাল সিভিল সার্ভিসেস (পেনশন) রুলস, ২০২১-এর অংশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে।

   

কী বলছে নতুন নিয়ম
পূর্বে, PSU কর্মীরা যদি বরখাস্ত বা অপসারিত হতেন, তাহলেও তাদের পেনশন পাওয়ার অধিকার থাকত। কিন্তু নতুন সংশোধন অনুযায়ী, যদি কোনও কর্মচারী দুর্নীতি বা অন্যান্য গুরুতর অসদাচরণের কারণে চাকরি হারান, তবে তার অবসরকালীন সুবিধা — পেনশন, গ্র্যাচুইটি, ও অন্যান্য প্রাপ্যতা — সরকার কেড়ে নিতে পারবে।

তবে এই সিদ্ধান্ত স্বয়ংক্রিয় হবে না। সংশ্লিষ্ট PSU-এর উপর নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনিক মন্ত্রক প্রতিটি ক্ষেত্রে পৃথকভাবে পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেবে। অর্থাৎ, পেনশন কেড়ে নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর অপরাধ এবং পরিস্থিতির পূর্ণাঙ্গ বিবেচনা করা হবে।

কিছু রেহাই থাকবে
যদিও নিয়ম কঠোর হয়েছে, তবুও কিছু শর্তসাপেক্ষে রেহাই রাখা হয়েছে। বরখাস্ত কর্মীরা যদি ভবিষ্যতে ভালো আচরণ বজায় রাখেন, তবে তাদের কমপ্যাশনেট অ্যালাওয়্যান্স বা কিছু সীমিত অবসর সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। এ জন্য বিশেষ অনুমোদন লাগবে এবং সরকারের সুপারিশে তা বিবেচনা করা হবে।

কারা এই নিয়মের আওতার বাইরে
নতুন সংশোধিত পেনশন বিধি সব কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও, কয়েকটি শ্রেণির কর্মচারীদের এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। তাঁরা হলেন:

  • রেলওয়ে কর্মচারী
  • দৈনিক মজুরি ভিত্তিক ও চুক্তিভিত্তিক কর্মী
  • আইএএস (IAS), আইপিএস (IPS), ও আইএফওএস (IFoS) আধিকারিকরা

এই নিয়মটি তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
এছাড়াও, এই সংশোধিত বিধি কেবলমাত্র ৩১ ডিসেম্বর, ২০০৩-এর আগে নিযুক্ত কর্মীদের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ যারা পরবর্তী সময়ে ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (NPS) এর অধীনে এসেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই নতুন নিয়ম প্রযোজ্য নয়।

Advertisements

প্রশাসনিক সংস্কারের অঙ্গ
এই পরিবর্তন কেন্দ্রীয় সরকারের একটি বৃহত্তর প্রশাসনিক সংস্কারের অংশ। ডিপার্টমেন্ট অব পার্সোনেল অ্যান্ড ট্রেনিং (DoPT) জানিয়েছে, এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল সরকারি পরিষেবায় স্বচ্ছতা ও নৈতিক মানদণ্ড বৃদ্ধি করা। পেনশন সংক্রান্ত সুবিধাকে কর্মচারীর আচরণের সঙ্গে যুক্ত করে, সরকার আশা করছে যে এতে অসদাচরণ ও দুর্নীতি রোধে বড়সড় প্রভাব পড়বে।

বিশেষ করে PSU-তে যেখানে অনেক সময় দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসে, সেখানে এই নিয়ম কার্যকর হলে অভ্যন্তরীণ নৈতিকতা ও নিয়মানুবর্তিতার মান উন্নত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতে কর্মচারীদের মধ্যে বাড়বে জবাবদিহিতা এবং কাজের প্রতি আরও বেশি সততা বজায় রাখার প্রেরণা আসবে।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংশোধন বেশ কঠোর বার্তা দিচ্ছে — বিশেষ করে যারা মনে করেন সরকারি চাকরিতে অবসরের পর নিশ্চিন্তে পেনশন পাওয়া যাবে, তাদের জন্য এটি একটি সতর্ক সংকেত। PSU-র অভ্যন্তরে দুর্নীতি রোধ এবং দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ একটি নৈতিক সংস্কার হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে কিছু মহলের দাবি, বরখাস্ত কর্মীদের পরিবারের উপর এই ধরনের সিদ্ধান্তের মানবিক দিক বিবেচনা করা উচিত। বিশেষ করে যদি কর্মীর একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে থাকেন এবং হঠাৎ করে সব সুবিধা কেড়ে নেওয়া হয়, তবে পরিবারটি আর্থিকভাবে চরম সংকটে পড়তে পারে। এ নিয়ে ভবিষ্যতে মানবিক ভিত্তিতে কমপ্যাশনেট অ্যালাওয়্যান্স প্রয়োগের দাবি জোরদার হতে পারে।

সরকারের এই নতুন পদক্ষেপ একটি শক্তিশালী বার্তা দিচ্ছে যে, পাবলিক সেক্টরে কর্মরত কেউ যদি দায়িত্বে অবহেলা করেন বা দুর্নীতিতে যুক্ত হন, তবে তাঁকে শুধুমাত্র চাকরি নয়, অবসরকালীন সুবিধাও হারাতে হবে। এটি একদিকে যেমন প্রশাসনিক জবাবদিহিতা বাড়াবে, অন্যদিকে সরকারি পরিষেবায় সততা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও সহায়ক হবে।

এই পরিবর্তনের পর PSU গুলিকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ আচরণ বিধি ও শৃঙ্খলা প্রক্রিয়া নতুন করে মূল্যায়ন করতে হতে পারে, এবং কর্মচারীদেরও আরও সতর্ক ও নৈতিকভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা জাগবে — এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহল।