আপেলের ন্যূনতম আমদানি মূল্য ৩০ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা প্রতি কেজি করল কেন্দ্র

দেশের আপেল (Apple) চাষিদের জন্য এক বড় সুখবর নিয়ে এল মোদী সরকার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অনুমোদিত এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আপেলের ন্যূনতম আমদানি মূল্য (Minimum…

Centre Revises Minimum Import Price For Apples By Rs 30 To Rs 80 Per Kg

দেশের আপেল (Apple) চাষিদের জন্য এক বড় সুখবর নিয়ে এল মোদী সরকার। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী অনুমোদিত এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আপেলের ন্যূনতম আমদানি মূল্য (Minimum Import Price বা MIP) ৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা প্রতি কেজি করা হয়েছে। এই নতুন দাম ৩ জুন, ২০২৫ থেকে কার্যকর হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তের ফলে বিশেষ করে হিমাচল প্রদেশ, জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ডের আপেল চাষিরা সরাসরি উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে। শুক্রবার শিমলায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এই তথ্য জানিয়েছেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজ্য মুখপাত্র চেতন সিং ব্রাগটা। তিনি বলেছেন, “মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত কৃষক ও উদ্যানপালনকারীদের প্রতি সরকারের বন্ধুত্বপূর্ণ মানসিকতার প্রতিফলন। এর মাধ্যমে আপেল চাষিদের ন্যায্য দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল।”

   

ব্রাগটা আরও বলেন, “এই পদক্ষেপটি একটি দৃষ্টিভঙ্গিমূলক ও সাহসী সিদ্ধান্ত। এর ফলে বিদেশি আপেলের অবৈধ প্রবাহ অনেকটাই কমবে এবং দেশীয় উৎপাদকরা ন্যায্য দাম পাবেন। ২০২৩ সালে প্রথমবারের মতো মোদি সরকার আপেলের জন্য ৫০ টাকা প্রতি কেজি ন্যূনতম আমদানি মূল্য চালু করেছিল, যা কোনো পূর্ববর্তী সরকার করেনি। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আরও এক ধাপ এগিয়ে ৮০ টাকা প্রতি কেজি করা হল।”

তিনি বলেন, ভারতের কৃষি ও উদ্যানপালন খাতকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। তিনি জানান, ২০১৮ সাল থেকে কোনো চিনা আপেল ভারত আমদানি করা হয়নি। এই তথ্যের মাধ্যমে মোদি সরকারের কঠোর এবং স্পষ্ট নীতি প্রতিফলিত হয়েছে, যা দেশীয় উদ্যানপালনকে অগ্রাধিকার দেয়।

স্থানীয় উৎপাদকদের স্বার্থ রক্ষায় বড় পদক্ষেপ:
চেতন সিং ব্রাগটার বক্তব্য অনুযায়ী, “বাজারে বিদেশি আপেলের সস্তা প্রবেশের কারণে দেশীয় চাষিরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন। অনেক সময় চাষিরা উৎপাদন খরচও তুলতে পারতেন না। নতুন MIP এর ফলে চাষিরা নিশ্চিতভাবে উপকৃত হবেন এবং দেশের আপেল শিল্পে এক নতুন উদ্দীপনা তৈরি হবে।”

তিনি আরও বলেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে মোদি সরকার স্পষ্ট করে দিল যে, তারা চাষির আয় বৃদ্ধি এবং তাদের স্বার্থ রক্ষায় কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি উল্লেখ করেন, “যদি চাষিদের উৎপন্ন ফসলের যথাযথ দাম না মেলে, তবে তা দেশের কৃষি অর্থনীতির উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই সিদ্ধান্ত চাষিদের আস্থা বাড়াবে এবং তাদের আর্থিক স্থিতিশীলতাও নিশ্চিত করবে।”

হিমাচল প্রদেশ সরকারকে নিশানা:
সাংবাদিক বৈঠকে ব্রাগটা হিমাচল প্রদেশের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “যখন কেন্দ্রীয় সরকার এত বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তখন রাজ্য সরকার চাষিদের জন্য কী পদক্ষেপ নিয়েছে? রাজ্য সরকার কীভাবে চাষিদের স্বার্থে কাজ করছে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। স্থানীয় চাষিদের উন্নয়নের জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো দৃশ্যমান কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।”

Advertisements

তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে হিমাচল প্রদেশের আপেল চাষিরা সরাসরি উপকৃত হবেন। তবে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন, যাতে চাষিরা প্রযুক্তিগত সহায়তা, সঠিক প্যাকেজিং এবং বাজারে আরও ভালো প্রবেশাধিকার পেতে পারেন।

স্বনির্ভর ভারতের দিকে আরও এক ধাপ:
মোদি সরকারের এই নীতি সিদ্ধান্তকে ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখছেন ব্রাগটা। তিনি বলেন, “দেশের কৃষি ও উদ্যানপালন খাতকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা থেকে রক্ষা করতে হলে এ ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য, দেশের প্রতিটি চাষি গর্বের সঙ্গে বলতে পারবে যে সে নিজের দেশে উৎপাদিত ফসলের জন্য ন্যায্য দাম পাচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, আগামী দিনে কেন্দ্র আরও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যা সরাসরি কৃষক ও উদ্যানপালনকারীদের আয় বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে। এর ফলে কৃষি খাতের বিকাশের পাশাপাশি দেশীয় বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।

চাষিদের আশার আলো:
ব্রাগটা তাঁর বক্তব্যের শেষাংশে বলেন, “মোদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে দেশের আপেল চাষিদের জন্য। এই নীতি চাষিদের আয় দ্বিগুণ করার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতেও সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের সাহসী ও চাষিবান্ধব সিদ্ধান্তের ধারা অব্যাহত থাকবে।”

সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, আপেলের ন্যূনতম আমদানি মূল্য বাড়ানোর এই পদক্ষেপ চাষিদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। আগামী দিনে এর বাস্তব প্রভাব কেমন হবে, তা সময়ই বলবে। তবে আপাতত দেশের আপেল চাষিদের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত ঘিরে খুশির আবহ তৈরি হয়েছে।