নতুন করে শুরু হওয়া বিতর্কের মাঝে কেন্দ্রীয় সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ২,০০০ টাকার বেশি ইউপিআই (UPI) লেনদেনের ওপর পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) বসানোর কোনও পরিকল্পনা তাদের নেই। সম্প্রতি রাজ্যসভায় এক প্রশ্নের উত্তরে কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরি জানান, “২,০০০ টাকার বেশি ইউপিআই লেনদেনের ওপর GST বসানোর কোনও প্রস্তাব GST কাউন্সিলের পক্ষ থেকে নেই।”
এই মন্তব্যের পেছনে রয়েছে কর্নাটকের কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে সম্প্রতি পাঠানো GST দাবি নোটিশ। এই দাবিগুলোর ভিত্তিতে এমন ধারণা তৈরি হয়েছিল যে কেন্দ্রীয় সরকার ইউপিআই-ভিত্তিক বড় মাপের লেনদেনের ওপর কর আরোপ করতে চলেছে। কিন্তু কেন্দ্র তা খারিজ করে দেয়।
রাজ্য বনাম কেন্দ্র: দায়িত্ব নিয়ে বিতর্ক:
কেন্দ্রীয় খাদ্য, জনবন্টন ও ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী এ নিয়ে বলেন, “এই সমস্ত GST নোটিশ কর্নাটক রাজ্য সরকারের বাণিজ্যিক কর বিভাগের তরফ থেকে পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রের কোনও ভূমিকা এখানে নেই। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই দায় এড়ানোর চেষ্টা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি আরও বলেন, “যদি এটা কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে হতো, তাহলে দেশের অন্যান্য রাজ্যেও একই ধরনের নোটিশ পাঠানো হতো। কিন্তু শুধু কর্নাটকেই কেন এই ধরনের অভিযোগ আসছে?”
প্রহ্লাদ জোশী কর্নাটকের উপ-মুখ্যমন্ত্রী ডি.কে. শিবকুমারের বক্তব্যকে “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন” বলেও উল্লেখ করেন। শিবকুমার দাবি করেছিলেন, রাজ্য সরকারের কোনও হাত নেই এই নোটিশ ইস্যুতে। তার উত্তরে জোশী বলেন, “রাজ্যের কর দপ্তরের কর্মকর্তারাই এই চিঠি পাঠিয়েছেন। আর এখন রাজ্য সরকার বলছে, তারা কিছু জানে না! এটা জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়।”
GST কাঠামো: কেন্দ্র ও রাজ্যের আলাদা ভূমিকা:
GST কাঠামো অনুযায়ী, দুটি প্রধান উপাদান রয়েছে – CGST (Central GST) এবং SGST (State GST)। CGST-এর মাধ্যমে কর সংগ্রহের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের, এবং SGST-এর দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। সেই অর্থে কর্নাটকে যেসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তা মূলত রাজ্যের বাণিজ্যিক কর বিভাগের পক্ষ থেকে পাঠানো হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি।
একইসঙ্গে পঙ্কজ চৌধুরী জানান, GST কাউন্সিল – যেখানে কেন্দ্র ও সমস্ত রাজ্যের প্রতিনিধি থাকেন – কোনও প্রস্তাব পেশ করেনি ইউপিআই লেনদেনের ওপরে অতিরিক্ত কর বসানোর জন্য। এমনকী ইউপিআই-এর মাধ্যমে হওয়া ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা আরও জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য করতে কেন্দ্র বারবার উৎসাহ দিয়ে এসেছে।
কেন এই বিভ্রান্তি?
যদিও সরকার বলছে ইউপিআই লেনদেনে GST নেই, তবুও কর্নাটকের বহু ব্যবসায়ী দাবি করছেন, তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে হওয়া ইউপিআই লেনদেনের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ করে তাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ফলে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও দোকানদার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
কর্ণাটকের ব্যবসায়ী সমিতিগুলি জানিয়েছে, যে তথ্যের ভিত্তিতে নোটিশ পাঠানো হয়েছে, তা প্রায় পুরোটাই ব্যাংক ও ইউপিআই লেনদেনের উপর নির্ভর করে, যেখানে লাভ বা প্রকৃত বিক্রির হিসেব নেই। অনেক সময়ই ব্যক্তিগত টাকা স্থানান্তর, কর্মচারী বেতন প্রদান কিংবা পারিবারিক লেনদেনকেও ব্যবসায়িক আয়ের অংশ হিসেবে ধরা হয়েছে।
ইউপিআই: করমুক্ত পেমেন্ট মাধ্যম?
বর্তমানে ভারত সরকারের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ ইউপিআই। এতে দ্রুত ও সহজে লেনদেন করা যায় এবং এটি করমুক্ত। ফলে ব্যবসায়ীরা, গ্রাহকরা এবং ছোট দোকানদাররা এই মাধ্যমের উপর অনেকটাই নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন।
কিন্তু কর্নাটকের সাম্প্রতিক ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, আদতে এই লেনদেন কতটা গোপনীয় এবং কর দপ্তরের নজরদারি থেকে মুক্ত। যদিও সরকার নিশ্চিত করেছে যে শুধুমাত্র লেনদেনের ভিত্তিতে কর আরোপ নয়, বরং পূর্ণ আর্থিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতেই কর নির্ধারণ হয়।
বর্তমানে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে এই GST বিতর্ক নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে। যেখানে কেন্দ্র বলছে – “আমরা কর বসাইনি,” রাজ্য বলছে – “আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।” এই অবস্থায় ভুক্তভোগী হয়ে পড়ছেন মূলত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা, যারা ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় আস্থা রেখে কাজ করছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে স্পষ্টতা প্রয়োজন এবং সরকারকে এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে হবে – যাতে ভবিষ্যতে অনিচ্ছাকৃত কর আরোপের শিকার না হন কোনও নিরীহ ব্যবসায়ী।