GST নোটিশে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে বিস্ফোরক মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দা রামাইয়া

ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস (UPI) লেনদেন ঘিরে কর নোটিশ জারির কারণে কর্ণাটকের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়েছিল, তা প্রশমিত করতে একগুচ্ছ স্বস্তিমূলক পদক্ষেপের…

siddaramaiah slams bjp on communal talk

ইউনিফাইড পেমেন্ট ইন্টারফেস (UPI) লেনদেন ঘিরে কর নোটিশ জারির কারণে কর্ণাটকের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মধ্যে যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়েছিল, তা প্রশমিত করতে একগুচ্ছ স্বস্তিমূলক পদক্ষেপের ঘোষণা দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া (Siddaramaiah)। তিনি জানিয়েছেন, বিগত তিন বছরে যেসব ছাড়প্রাপ্ত পণ্যের ক্ষেত্রে কর বকেয়া দেখানো হয়েছে, তা আর আদায় করা হবে না।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ছোট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ছাড়প্রাপ্ত পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী কর বকেয়াগুলি তোলা হবে না। নোটিশের সংখ্যা প্রায় ৯ হাজার হলেও এগুলির মধ্যে অনেকেই ছাড়প্রাপ্ত পণ্যের সঙ্গে যুক্ত।”

   

এই ঘোষণার আগে মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তাঁদের অভিযোগ খতিয়ে দেখেন। মূলত যাঁদের বার্ষিক ডিজিটাল লেনদেন ৪০ লক্ষ টাকার বেশি, তাঁদের লক্ষ্য করেই এই কর নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। রাজ্যের বাণিজ্য কর বিভাগ মূলত UPI লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রায় ৬,০০০ ব্যবসায়ীকে নোটিশ পাঠিয়েছিল।

প্রতিবাদ ও বয়কটের হুমকি:
এই কর নোটিশের প্রতিবাদে কর্ণাটক জুড়ে ছোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি ২৫ জুলাই রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভ ও UPI পেমেন্ট বয়কটের ডাক দিয়েছিল। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরে এই বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ফেডারেশন অব কর্ণাটক চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (FKCCI) সহ অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনগুলি।

কে কর নিবন্ধন করবেন, কে করবেন না?
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া জানান, “যাঁরা রুটি, দুধ, ফল, ফুল, টেন্ডার নারকেল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য বিক্রি করেন, তাঁদের কর দেওয়ার দরকার নেই। এঁরা কর থেকে ছাড়প্রাপ্ত, তাই তাঁদের নোটিশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।”

তবে তিনি এটাও স্পষ্ট করে দেন যে, ভবিষ্যতে যাঁদের বার্ষিক ডিজিটাল লেনদেন ৪০ লক্ষ টাকার বেশি, তাঁদের GST-র আওতায় আসতেই হবে। “নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। কর নেটের আওতায় সবাইকে আনতে হবে,” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে ছাড়প্রাপ্ত পণ্যের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের জন্য এই বাধ্যবাধকতা থাকবে না। “যাঁরা কেবলমাত্র কর থেকে ছাড়প্রাপ্ত পণ্য নিয়ে ব্যবসা করেন, তাঁদের কর বিভাগে নিবন্ধনের প্রয়োজন নেই,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisements

সহায়তা ও সচেতনতার উদ্যোগ:
বিজনেস কমিউনিটির উদ্বেগ মেটাতে এবং কর সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূর করতে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কর্ণাটক সরকার বিদ্যমান হেল্পলাইন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। যাতে ব্যবসায়ীরা সময়মতো কর দিতে পারেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা পান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সরকার কর প্রদান নিয়ে সহায়তা করবে এবং হেল্পলাইন আরও সহজলভ্য করে তোলা হবে।”

GST আদায়ে কর্ণাটকের অগ্রগতি:
মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ের তরফে জানানো হয়েছে, GST আদায়ে কর্ণাটক দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। রাজ্য তার আদায়কৃত GST-র ৫০ শতাংশ কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ভাগ করে নেয়, যা GST কাউন্সিলের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হয়।

ব্যবসায়ীদের স্বস্তি ও সরকারের প্রতিশ্রুতি:
এই উদ্যোগকে ব্যবসায়ী মহল স্বাগত জানিয়েছে। তাঁদের মতে, সরকার যেমন একদিকে করের আওতা বৃদ্ধি করতে চাইছে, তেমনই অন্যদিকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষায় উদ্যোগ নিচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থার প্রতি বিশ্বাসও বাড়াবে।

সার্বিকভাবে বলা যায়, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার এই পদক্ষেপ রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিবেশে স্থিতি ফেরাতে সহায়ক হতে পারে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত করের বোঝা না চাপিয়ে, কর কাঠামোর মধ্যে যুক্ত করার এই উদ্যোগ এক ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে।