ট্রাম্পের শুল্কে ধাক্কা, MSME কর্মীদের জন্য সরাসরি আয় সহায়তার পরিকল্পনা কেন্দ্রের

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্কের প্রভাব ইতিমধ্যেই ভারতীয় রপ্তানি খাতে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস (MSMEs) অর্থাৎ…

MSME Sector

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত নতুন শুল্কের প্রভাব ইতিমধ্যেই ভারতীয় রপ্তানি খাতে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস (MSMEs) অর্থাৎ ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে কর্মরত হাজারো কর্মীর জীবিকা ঝুঁকির মুখে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন্দ্র সরকার সরাসরি আয় সহায়তা বা direct-income support চালু করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা Moneycontrol-কে জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি বর্তমানে প্রাথমিক আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে এবং শিগগিরই এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করা হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এমএসএমই খাতের কর্মীদের হাতে নগদ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে তার আগে কিছু পরোক্ষ সহায়তা ব্যবস্থা চালু হতে পারে। যেমন, ঋণের জন্য সরকারি গ্যারান্টি বৃদ্ধি, এবং জামানত ছাড়া ঋণের সীমা বাড়ানো। এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “প্রথমে আমরা ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিমের (CGS) মাধ্যমে পরোক্ষ সহায়তা চালু করতে চাই। তারপরে প্রত্যক্ষ আয় সহায়তা নিয়ে আসা হবে। কত টাকা দেওয়া হবে এবং কিভাবে বিতরণ হবে, সেই খসড়া এখন তৈরি হচ্ছে।”

   

কেন্দ্রীয় বাজেট ২০২৫-২৬-এ ঘোষিত Export Promotion Mission-এর আওতায় ইতিমধ্যেই ২৫ হাজার কোটি টাকার একটি সহায়তা প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়েছে। এই প্যাকেজের মূল লক্ষ্য হলো সাশ্রয়ী ঋণ সরবরাহ করা, রপ্তানির জন্য নতুন বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করা এবং উচ্চ শুল্কের বিরূপ প্রভাব থেকে রপ্তানিকারকদের সুরক্ষা দেওয়া। তবে এই প্যাকেজ কার্যকর করতে ইউনিয়ন ক্যাবিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হবে, যা আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মিলতে পারে।

Moneycontrol-এর ১২ আগস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) শিগগিরই মাইক্রো ও স্মল এন্টারপ্রাইজের জন্য জামানতবিহীন ঋণের সীমা ১০ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ লাখ টাকা করার পরিকল্পনা করছে। এই পদক্ষেপ আগস্টের শেষ বা সেপ্টেম্বরের শুরুতেই কার্যকর হতে পারে।

বর্তমানে চলমান Credit Guarantee Scheme (CGS), যা ২০১০ সালে চালু হয়, পরিচালনা করছে Credit Guarantee Fund Trust for Micro and Small Enterprises (CGTMSE)। এই স্কিমের আওতায় কোনো এমএসই ইউনিট জামানতবিহীন ঋণ নিলে এবং তা ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে, ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৭৫-৯০ শতাংশ অর্থ ক্ষতিপূরণ দেয় ট্রাস্ট। ফলে ঋণদাতাদের ঝুঁকি কমে এবং উদ্যোক্তারা সহজে ঋণ পান।

২৮ আগস্ট ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের (FIEO) এক প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে রপ্তানিকারকরা নতুন শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাজারে প্রবেশাধিকার, প্রতিযোগিতা ও কর্মসংস্থান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

FIEO-এর সভাপতি এস সি রালহান বলেন, “রপ্তানিকারকদের দ্রুত এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ প্রয়োজন। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আমাদের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কর্মসংস্থানের ওপর চাপ বাড়ছে। দেশের প্রবৃদ্ধি ও চাকরি সৃষ্টিতে রপ্তানিকারকরা মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ জরুরি।”

Advertisements

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন রপ্তানিকারকদের সবরকম সহায়তার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “ভারতীয় রপ্তানিকারকদের পাশে সরকার সবসময় রয়েছে। এই কঠিন সময়ে আমরা সব ধরনের পথ খুঁজে দেখব, যাতে তাদের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়।”

তিনি আরও জানান, সরকারের অগ্রাধিকার হলো কর্মীদের জীবিকা রক্ষা করা। শিল্পখাতকে তিনি আহ্বান জানান যেন তারা শ্রমিকদের চাকরির ধারাবাহিকতা সম্পর্কে আশ্বস্ত করে। বৈশ্বিক প্রতিকূলতার মধ্যেও কর্মসংস্থান ধরে রাখা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্কনীতি শুধু ভারতের জন্য নয়, বৈশ্বিক বাজারের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভারতীয় এমএসএমই খাত দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানি নির্ভরশীল, বিশেষত টেক্সটাইল, হ্যান্ডিক্রাফট, অটোমোবাইল কম্পোনেন্ট, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবার ক্ষেত্রে। এই খাতে প্রায় ১১ কোটি মানুষ কর্মরত। ফলে শুল্ক বৃদ্ধির অভিঘাত সরাসরি কর্মসংস্থানের ওপর পড়ছে।

সরকার যদি প্রত্যক্ষ আয় সহায়তা চালু করে, তবে কর্মীরা অন্তত স্বল্পমেয়াদে আর্থিক সুরাহা পাবে। একইসঙ্গে ঋণ গ্যারান্টি ও নতুন ক্রেডিট সুবিধা এমএসএমই উদ্যোক্তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

রপ্তানি খাতে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে দ্রুত নীতি-সহায়তা জরুরি। কেন্দ্র ইতিমধ্যেই বহুমুখী পদক্ষেপের দিকে এগোচ্ছে—সরাসরি আয় সহায়তা, ঋণ সীমা বৃদ্ধি, বাজার সম্প্রসারণ ও রপ্তানি প্যাকেজ—যার সবকটি লক্ষ্য হচ্ছে কর্মসংস্থান রক্ষা করা এবং বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব সামাল দেওয়া। এখন নজর থাকবে ইউনিয়ন ক্যাবিনেটের চূড়ান্ত অনুমোদন ও এর বাস্তবায়নের ওপর।