কেন্দ্রীয় সরকার ২০৩০ সাল থেকে পেট্রোলে ২০ শতাংশের বেশি ইথানল (Ethanol) মিশ্রণ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। বৃহস্পতিবার লোকসভায় একটি লিখিত জবাবে এই কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পর্যটন ও পেট্রোলিয়াম প্রতিমন্ত্রী সুরেশ গোপী। জাতীয় জৈব জ্বালানি নীতি-২০১৮, যা ২০২২ সালে সংশোধিত হয়েছিল, তাতে পেট্রোলে ২০ শতাংশ ইথানল (Ethanol) মিশ্রণের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ থেকে এগিয়ে এনে ইথানল সরবরাহ বছর (ইএসওয়াই) ২০২৫-২৬ করা হয়েছিল।
সরকারি তেল বিপণন সংস্থাগুলি (ওএমসি) ২০২১-২২ ইএসওয়াই-এ নির্ধারিত সময়ের পাঁচ মাস আগেই জুন ২০২২-এ ১০ শতাংশ ইথানল (Ethanol) মিশ্রণের লক্ষ্য অর্জন করেছে। এরপর ইথানল (Ethanol) মিশ্রণ ২০২২-২৩ সালে ১২.০৬ শতাংশ, ২০২৩-২৪ সালে ১৪.৬০ শতাংশ এবং ২০২৪-২৫ সালে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১৭.৯৮ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বর্তমানে ২০ শতাংশের বেশি ইথানল (Ethanol) মিশ্রণ বাড়ানোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
কেন এই পরিকল্পনা?
ইথানল (Ethanol) মিশ্রণ বাড়ানোর মূল উদ্দেশ্য হলো ভারতের জ্বালানি আমদানির উপর নির্ভরতা কমানো, পরিবেশ দূষণ হ্রাস করা এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করা। ভারত বর্তমানে তার তেলের চাহিদার ৮৫ শতাংশের বেশি আমদানির উপর নির্ভরশীল।
ইথানল (Ethanol) মিশ্রিত পেট্রোল ব্যবহারের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রার সাশ্রয় এবং কার্বন নিঃসরণ কমানো সম্ভব। ‘ইথানল মিশ্রণের জন্য ভারতের রোডম্যাপ ২০২০-২৫’ অনুযায়ী, ২০ শতাংশ ইথানল (Ethanol) মিশ্রিত পেট্রোল (ই২০) ব্যবহারে ই১০-এর জন্য ডিজাইন করা এবং ই২০-এর জন্য ক্যালিব্রেটেড চার চাকার গাড়ির জ্বালানি দক্ষতায় সামান্য হ্রাস হয়।
গাড়ির উপর প্রভাব:
ভারতীয় অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স সোসাইটি (এসআইএএম) জানিয়েছে, ইঞ্জিন হার্ডওয়্যার এবং টিউনিং পরিবর্তনের মাধ্যমে মিশ্রিত জ্বালানির কারণে দক্ষতার ক্ষতি কমানো সম্ভব। মন্ত্রীর জবাব অনুযায়ী, কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, ই২০ জ্বালানি ব্যবহারে গাড়ির কার্যক্ষমতা, ইঞ্জিনের অংশের ক্ষয় বা ইঞ্জিন তেলের অবনতির কোনো বড় সমস্যা দেখা যায়নি।
ইথানল (Ethanol) উৎপাদনের উপাদান:
জাতীয় জৈব জ্বালানি নীতি অনুযায়ী, জাতীয় জৈব জ্বালানি সমন্বয় কমিটি ঘোষিত উদ্বৃত্ত পর্যায়ে খাদ্যশস্য ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। এই নীতি ভুট্টা, কাসাভা, পচা আলু, ভাঙা চালের মতো ক্ষতিগ্রস্ত খাদ্যশস্য, মানুষের খাওয়ার অনুপযুক্ত শস্য, ভুট্টা, আখের রস, গুড় এবং কৃষি অবশিষ্টাংশ (চালের খড়, তুলোর ডাঁটা, ভুট্টার খোসা, করাত, বাগাস ইত্যাদি) ব্যবহারকে উৎসাহিত করে।
ইথানল (Ethanol) উৎপাদনে প্রতিটি উপাদানের ব্যবহার বছরভিত্তিক পরিবর্তিত হয়, যা প্রাপ্যতা, খরচ, অর্থনৈতিক সম্ভাবনা, বাজারের চাহিদা এবং নীতিগত প্রণোদনার উপর নির্ভর করে। আখের রস, এর উপজাত বা ভুট্টা ইথানল উৎপাদনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে পরামর্শ করে সতর্কতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইথানল (Ethanol) উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ:
২০১৪ সাল থেকে সরকার ইথানল (Ethanol) ব্লেন্ডেড পেট্রোল (ইবিপি) প্রোগ্রামের আওতায় কৃষক ও ইথানল উৎপাদকদের উৎসাহিত করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে:
-ইথানল (Ethanol) উৎপাদনের জন্য কাঁচামালের পরিধি বৃদ্ধি।
-ইবিপি প্রোগ্রামের জন্য ইথানল (Ethanol) ক্রয়ের প্রশাসনিক মূল্য নির্ধারণ।
-ইথানলের (Ethanol) উপর জিএসটি হার ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।
-শিল্প (উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন সংশোধন করে রাজ্যের মধ্যে ও রাজ্যগুলির মধ্যে ইথানল (Ethanol) পরিবহন সহজ করা।
-ওএমসি-দের ইথানল (Ethanol) ক্রয় প্রক্রিয়া সরলীকরণ।
-২০ শতাংশ ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্য ২০৩০ থেকে এগিয়ে ২০২৫-২৬ করা।
এছাড়া, ২০১৮-২২ সালে সরকার বিভিন্ন ইথানল (Ethanol) সুদ ভর্তুকি প্রকল্প (ইআইএসএস) চালু করেছে। এর মাধ্যমে গুড় ও শস্য থেকে ইথানল (Ethanol) উৎপাদনের জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। ওএমসি-রা ডেডিকেটেড ইথানল প্ল্যান্ট (ডিইপি)-এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী অফটেক চুক্তি (এলটিওএ) স্বাক্ষর করেছে।
ইথানল (Ethanol) মিশ্রণ বাড়ানোর ফলে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা জোরদার হবে এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পাবে। ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ মিশ্রণের লক্ষ্য অর্জনের পথে ভারত এগিয়ে চলেছে। তবে, ২০৩০ সাল থেকে এর বেশি মিশ্রণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরও অবকাঠামো, গবেষণা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজন। সরকারের এই উদ্যোগ পরিবেশ রক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।