কেন্দ্র সরকার এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে দেশের লক্ষাধিক সরকারি কর্মচারীর জন্য গ্র্যাচুইটি সুবিধা চালু করল। এখন থেকে জাতীয় পেনশন সিস্টেম (NPS) এবং সদ্য প্রবর্তিত ইউনিফাইড পেনশন সিস্টেম (UPS)-এর আওতাধীন সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা অবসর, মৃত্যু, অক্ষমতা বা চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পরিস্থিতিতেও গ্র্যাচুইটি সুবিধা পাবেন। এতদিন এই সুবিধা শুধুমাত্র পুরনো পেনশন প্রকল্প (OPS)-এর অন্তর্ভুক্ত কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য ছিল।
বুধবার, ১৮ জুন এই ঘোষণা করেন কেন্দ্রীয় কর্মীবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং। তিনি জানান, এখন থেকে NPS-এর অন্তর্ভুক্ত সমস্ত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় নাগরিক পরিষেবা (CCS) পেনশন বিধি, ২০২১ অনুযায়ী সম্পূর্ণ গ্র্যাচুইটি সুবিধা পাবেন। এই বিধি আগে কেবলমাত্র OPS কর্মীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ছিল।
নতুন UPS ব্যবস্থা ও NPS-এর পরিবর্তন:
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া UPS একটি হাইব্রিড পেনশন মডেল যা NPS এবং OPS-এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য একত্রিত করেছে। OPS যেখানে একটি নির্দিষ্ট মাসিক পেনশন গ্যারান্টি দেয়, NPS সেখানে বাজারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ায় এর রিটার্ন অনিশ্চিত। UPS এই দুই ব্যবস্থার সমন্বয় ঘটিয়ে একটি এমন পেনশন মডেল তৈরি করেছে, যেখানে কর্মীরা পেনশনের নিরাপত্তাও পাবেন এবং NPS-এর মতো নমনীয়তাও উপভোগ করতে পারবেন।
এছাড়া, নতুন নীতিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মীর মৃত্যু, অক্ষমতা বা চাকরি হারানোর মতো পরিস্থিতিতে তাঁর পরিবার NPS, UPS অথবা OPS-এর সুবিধার মধ্যে থেকে তাদের সুবিধাজনক বিকল্পটি বেছে নিতে পারবে। অর্থাৎ, পরিবারগুলি তাদের আর্থিক চাহিদা অনুযায়ী উপযুক্ত পেনশন মডেল বেছে নিতে পারবে।
২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গ্র্যাচুইটি সীমা:
গ্র্যাচুইটির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লক্ষ টাকা। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে NPS এবং UPS-এর আওতাধীন সরকারি কর্মীরাও অবসরের সময় বা জরুরি পরিস্থিতিতে এককালীন উল্লেখযোগ্য অর্থ পাবেন। কর্মীবিষয়ক সচিব ভি. শ্রীনিবাস বলেন, “এই নীতি পরিবর্তনের মাধ্যমে সরকার কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষাকে আরও দৃঢ় করল। এতে কর্মীদের মধ্যে আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে আস্থা বাড়বে।”
পেনশন সমতা ও কর্মী মনোবল বৃদ্ধির দিকে এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ:
এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে অল ইন্ডিয়া এনপিএস এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের সভাপতি মঞ্জীত সিং পাতেল বলেন, “এই পদক্ষেপ বহুদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটাল। এটি পেনশন সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূর করবে এবং UPS-এর প্রতি কর্মীদের আকর্ষণ আরও বাড়াবে।” তিনি বলেন, NPS নিয়ে কর্মীদের মধ্যে যেসব আশঙ্কা ছিল, এই ঘোষণার ফলে তা অনেকটাই দূর হবে এবং বহু কর্মী UPS বেছে নেবেন।
দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ ও রাজনৈতিক তাৎপর্য:
এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং কর্মীবান্ধব পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন, যাতে NPS কর্মীদেরও OPS কর্মীদের মতো গ্র্যাচুইটি সুবিধা প্রদান করা হয়। এবার সেই দাবি পূরণ হওয়ায় সরকারি চাকুরেদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।
ভবিষ্যতের কর্মীদের জন্য বিকল্পের সুযোগ:
বর্তমানে UPS-এর আওতায় আসতে আগ্রহীদের সুযোগও বাড়ছে। ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে যারা কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে যোগ দিচ্ছেন, তারা নিয়োগের সময়ই NPS ও UPS-এর মধ্যে যে কোনও একটি বেছে নিতে পারবেন। এই সিদ্ধান্ত নতুন প্রজন্মের কর্মীদের জন্য একটি স্থিতিশীল পেনশন ব্যবস্থা নির্বাচনের দিশা দেখাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এই নীতিগত পরিবর্তন শুধু একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি সরকারের তরফে একটি সুস্পষ্ট বার্তা যে, তারা কর্মীদের অবসরকালীন নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেয়। Gratuity-র মতো বড় সুবিধা নিশ্চিত হওয়ায় ভবিষ্যতের সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে কেন্দ্রীয় চাকরির আকর্ষণ আরও বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তের প্রভাব শুধু কর্মীদের আর্থিক সুরক্ষার ওপরই নয়, বরং দেশের সমগ্র পেনশন ব্যবস্থার দিকনির্দেশনাকেও বদলে দেবে। OPS, NPS ও UPS-এর মধ্যে পেনশন সমতা আনায় কর্মীদের মধ্যে ন্যায্যতার বোধ যেমন তৈরি হবে, তেমনি সরকারের প্রতি আস্থাও দৃঢ় হবে।