MSP for Kharif Crops: কৃষকদের জন্য এক বিশাল স্বস্তির খবর নিয়ে এল কেন্দ্রীয় সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের খরিফ মরসুমের জন্য ২.০৭ লক্ষ কোটি টাকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) প্যাকেজ অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির (CCEA) বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় সরকার মোট ২৩টি ফসলের জন্য এমএসপি নির্ধারণ করে — যার মধ্যে ১৪টি খরিফ, সাতটি রবি এবং দুইটি বাণিজ্যিক ফসল অন্তর্ভুক্ত। সরকারের এই সিদ্ধান্তে লক্ষ লক্ষ কৃষক উপকৃত হবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কী বললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী?
কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সংবাদমাধ্যমকে জানান, সরকার ধানের এমএসপি প্রতি কুইন্টালে ₹৬৯ বাড়িয়ে ₹২,৩৬৯ করেছে। এই সিদ্ধান্ত ২০২৫-২৬ খরিফ মরসুমের জন্য কার্যকর হবে। এছাড়াও অন্যান্য প্রধান ফসলের এমএসপি বাড়ানো হয়েছে যা কৃষকদের লাভজনক উৎপাদন নিশ্চিত করবে।
খরিফ মৌসুমে প্রধান ফসলগুলির নতুন এমএসপি:
- ধান (সাধারণ): ২,৩৬৯/কুইন্টাল টাকা (৫০% লাভ)
- ধান (A গ্রেড): ২,৩৮৯/কুইন্টাল টাকা
- ভুট্টা: ২,৪০০ টাকা /কুইন্টাল (৫৯% লাভ)
- তুর ডাল (অড়হর): ৮,০০০ টাকা/কুইন্টাল (৫৯% লাভ)
- মুগ ডাল: ৮,৭৬৮ টাকা/কুইন্টাল (৫০% লাভ)
- তিল: ৯,৮৪৬ টাকা/কুইন্টাল (৫০% লাভ)
- উড়দ: ৭,৮০০ টাকা/কুইন্টাল (৪০০ টাকা বৃদ্ধি)
- নাইজারবীজ, রাগি, তুলা: সর্বোচ্চ এমএসপি বৃদ্ধি পেয়েছে
এই মূল্য নির্ধারণের মাধ্যমে সরকার ফসলের উৎপাদন খরচের উপর অন্তত ৫০ শতাংশ লাভ নিশ্চিত করতে চায়। কৃষি উৎপাদনের জন্য এটি এক ইতিবাচক দিক বলেই মনে করা হচ্ছে।
কিভাবে নির্ধারিত হয় MSP?
ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারিত হয় একাধিক বিষয়ের ভিত্তিতে। এর মধ্যে রয়েছে উৎপাদন খরচ, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারদরের প্রবণতা, ফসলগুলির মধ্যে দামের সাম্য রক্ষা, জল ও জমির সদ্ব্যবহার, কৃষি ও অ-কৃষি খাতের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা ইত্যাদি। এই বিবেচনার ভিত্তিতেই সরকার প্রতি বছর এমএসপি ঘোষণা করে।
২০১৮-১৯ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ঘোষিত নীতির আওতায়, এমএসপি যেন সর্বভারতীয় গড় উৎপাদন খরচের অন্তত ১.৫ গুণ থাকে, তা নিশ্চিত করতে চায় সরকার।
কেন্দ্র কত ফসল কিনে?
যদিও সরকার ২৩টি ফসলের জন্য এমএসপি নির্ধারণ করে, তবে মূলত কয়েকটি প্রধান ফসল — যেমন গম ও ধান — খাদ্য সুরক্ষা বজায় রাখতে কেন্দ্রীয় ভাণ্ডারের জন্য সরাসরি ক্রয় করে। অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রে এমএসপি অনেক সময় শুধু একটি ঘোষণামাত্র থেকে যায়, কারণ বাজারে সেই দামে বিক্রি করা সবসময় সম্ভব হয় না।
২০১৪ থেকে ২০২৫: MSP অর্থপ্রদান কতটা বেড়েছে?
- খরিফ মরসুমে: ১৬.৩৫ লক্ষ কোটি টাকা (৩.৪ গুণ বৃদ্ধি)
- রবি মরসুমে: ৭.২১ লক্ষ কোটি টাকা (২.৭ গুণ বৃদ্ধি)
এই তথ্যগুলিই স্পষ্ট করে দেয়, গত এক দশকে কৃষকদের এমএসপি অর্থপ্রদান কতটা বেড়েছে।
বাস্তব পরিস্থিতি কেমন?
রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) এর সাম্প্রতিক বুলেটিন অনুযায়ী, খরিফ ও রবি ফসলের ব্যাপক উৎপাদনের কারণে বাজারে গম ছাড়া অধিকাংশ ফসলের দাম এমএসপি-র নিচে বিক্রি হচ্ছে। মে মাসের (১ থেকে ১৯ মে) উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি ফুড প্রাইস ডেটা অনুযায়ী, শস্য ও ডালের দামে স্পষ্ট মন্দার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
কৃষকদের জন্য বার্তা
কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত নিঃসন্দেহে কৃষকদের জন্য একটি বড় ইতিবাচক পদক্ষেপ। যদিও বাস্তব বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে এমএসপি-র ফারাক অনেক সময় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়, তবে এই সিদ্ধান্ত কৃষি উৎপাদনে স্বস্তি ও উৎসাহ আনবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি এবং কৃষিক্ষেত্রকে টেকসই করতে হলে কেবল এমএসপি ঘোষণা নয়, তার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং বাজার পরিকাঠামো উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। এই পদক্ষেপ সেই লক্ষ্যেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
