ভারতে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ করে আয় লুকানো ও কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে উঠে এসেছে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডাইরেক্ট ট্যাক্সেস (CBDT)-এর তথ্য বিশ্লেষণে। এই পরিস্থিতিতে কর ফাঁকি এবং অঘোষিত আয়ের মানি লন্ডারিংয়ে জড়িত ‘হাই-রিস্ক’ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে CBDT।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, ভার্চুয়াল ডিজিটাল অ্যাসেটস (Virtual Digital Assets বা VDA)-এর লেনদেনে জড়িত বহু ব্যক্তি আয়কর আইন, ১৯৬১ অনুযায়ী নির্ধারিত বিধিনিষেধ মানেননি। অনেকেই ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নে (ITR) নির্দিষ্ট ‘Schedule VDA’ পূরণ না করেই কম হারে কর দিয়েছেন বা খরচ বাবদ অযৌক্তিক ছাড় দাবি করেছেন।
৩১ শতাংশ হারে কর, কোনো ছাড় নয়
আয়কর আইনের ১১৫BBH ধারায়, যা ২০২২ সালের বাজেট আইনের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছে, বলা হয়েছে VDA ট্রান্সফার থেকে অর্জিত আয়ের উপর ৩০ শতাংশ হারে (সারচার্জ ও সেস সহ) ফ্ল্যাট কর ধার্য হবে। এর পাশাপাশি, কোনো ধরনের খরচ বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই, শুধুমাত্র অধিগ্রহণমূল্য (Cost of Acquisition) বাদ দেওয়া যায়।
এছাড়াও, কোনো বছর যদি VDA বিনিয়োগে ক্ষতি হয়, সেই ক্ষতি অন্য কোনো আয়ের সঙ্গে সমন্বয় (set-off) করা যাবে না বা পরবর্তী বছরের জন্য বহন (carry forward) করাও নিষিদ্ধ।
CBDT-র তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গিয়েছে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তি এই কর ব্যবস্থা মানছেন না এবং আয়ের প্রকৃত হিসেবও দিচ্ছেন না। অনেকেই মূলধনী লাভের ক্ষেত্রে ভুলভাবে কস্ট ইনডেক্সেশন অ্যাপ্লাই করেছেন অথবা ‘Schedule VDA’ ফাঁকা রেখেছেন।
ITR মিলিয়ে দেখা হচ্ছে TDS রিটার্নের সঙ্গে
CBDT জানিয়েছে, আয়কর রিটার্নের তথ্য এখন ভার্চুয়াল অ্যাসেট সার্ভিস প্রোভাইডার (VASP) অর্থাৎ জনপ্রিয় ক্রিপ্টো এক্সচেঞ্জগুলোর জমা দেওয়া TDS রিটার্নের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হচ্ছে। দুইয়ের মধ্যে অসঙ্গতি পেলেই সংশ্লিষ্ট করদাতাকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত যাচাই বা তদন্ত শুরু করা হবে।
সূত্রের খবর, CBDT ইতিমধ্যে হাজার হাজার সম্ভাব্য কর ফাঁকিকারীকে ই-মেইল পাঠিয়ে সতর্ক করেছে এবং তাদের ITR পর্যালোচনা করে সংশোধন করার নির্দেশ দিয়েছে, যদি ক্রিপ্টো লেনদেনের আয় সঠিকভাবে ঘোষিত না হয়ে থাকে।
NUDGE কৌশলে করদাতাদের সতর্কতা
CBDT সম্প্রতি এক নতুন কৌশল অবলম্বন করেছে, যার নাম NUDGE – অর্থাৎ Non-intrusive Usage of Data to Guide and Enable Taxpayers। এর উদ্দেশ্য করদাতাদের অহিংসভাবে ও তথ্য-নির্ভর পদ্ধতিতে সচেতন ও দায়িত্ববান করা। এই কৌশলকে CBDT-র “TRUST Taxpayers FIRST” দৃষ্টিভঙ্গির অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
বর্তমানে চালু হওয়া ক্যাম্পেইনটি বিগত ছয় মাসে CBDT পরিচালিত তৃতীয় NUDGE উদ্যোগ। এর আগে বিদেশে সম্পত্তি ও আয়ের ঘোষণা এবং ভুলভাবে দাবি করা করছাড় (বোগাস ডিডাকশন) সংক্রান্ত ক্যাম্পেইন চালানো হয়েছে।
আর্থিক স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল ট্রানজেকশনে নজর
কর দপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে, ডিজিটাল লেনদেনের প্রসার এবং ব্লকচেইন ভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সির বাড়তে থাকা গ্রহণযোগ্যতা কর ব্যবস্থাকে জটিল করেছে। কিন্তু CBDT এখন তথ্য বিশ্লেষণ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে এই সিস্টেমের দুর্বলতা ধরতে শুরু করেছে।
এক কর আধিকারিক বলেন, “ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আয় লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা এখন আর সহজ নয়। প্রযুক্তির সাহায্যে কর ফাঁকির ঝুঁকিপূর্ণ লেনদেন আমরা আগেই ধরতে পারছি। এবার আমাদের লক্ষ্য করদাতাদের আত্মসমালোচনার সুযোগ দিয়ে সংশোধনের পথে নিয়ে আসা।”
সতর্ক বার্তা: সময় থাকতেই সংশোধন করুন
কর বিশেষজ্ঞদের মতে, যারা এখনও ক্রিপ্টো আয় সঠিকভাবে দেখাননি, তারা অবিলম্বে রিটার্ন আপডেট করুন। কারণ CBDT-র পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা মানে ভবিষ্যতে সম্ভাব্য নোটিস, তদন্ত বা জরিমানা।
ক্রিপ্টোকারেন্সির উত্থান যেমন এক নতুন অর্থনৈতিক দিগন্ত খুলেছে, তেমনি তার অপব্যবহার করে কর ফাঁকির সুযোগ খোঁজা এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। CBDT-এর এই পদক্ষেপ ভারতীয় কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও দায়িত্ববোধ আনার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।