Pay Rent with a Credit Card: ভারতে ইউপিআই (UPI) লেনদেন যখন প্রতিদিনের খরচ মেটানোর প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে এবং স্মার্টফোন যখন ডিজিটাল মানিব্যাগে পরিণত হয়েছে, তখন ক্রেডিট কার্ড এখন এক নতুন ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ করছে—বাড়িভাড়া পরিশোধ।
২০২৫ অর্থবছরে ভারতে সক্রিয় ক্রেডিট কার্ডের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০.৯৮ কোটি, যা ইঙ্গিত দেয় যে দেশের নাগরিকরা ‘প্লাস্টিক মানি’-র দিকে ক্রমশ আগ্রহী হয়ে উঠছেন। আগে যেখানে এই কার্ডগুলো ব্যবহৃত হতো মূলত অনলাইন কেনাকাটা, ভ্রমণের টিকিট কাটার জন্য, এখন অনেক ভাড়াটিয়াই তাদের বাড়িভাড়া মেটাচ্ছেন এই কার্ডের সাহায্যে।
ক্রেডিট কার্ডে ভাড়া মেটানো—কেন জনপ্রিয় হচ্ছে?
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারকারীরা একটি নির্দিষ্ট সুদমুক্ত সময়সীমা (সাধারণত ৫০ দিন পর্যন্ত) পান, যার ফলে মাসের শেষের দিকে টান পড়লেও কিছুটা স্বস্তি মেলে। যারা মাসিক খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন বা বেতনের অপেক্ষায় থাকেন, তাঁদের জন্য এটি এক অর্থনৈতিক পরিত্রাণের মতো।
শুধু তাই নয়, নিয়মিতভাবে সময়মতো বিল পরিশোধ করলে ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধি পায়, যা ভবিষ্যতে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। সেই সঙ্গে অনেক কার্ডে ক্যাশব্যাক, রিওয়ার্ড পয়েন্ট বা মাইলেজ পয়েন্ট পাওয়া যায়, যা ভাড়াটিয়াদের মধ্যে এই পদ্ধতির প্রতি আরও আগ্রহ সৃষ্টি করছে।
কীভাবে কাজ করে এই পদ্ধতি?
ভাড়াটিয়াদের প্রথমে একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সাইন আপ করতে হয় যা এই ধরনের লেনদেনের সুবিধা দেয়। CRED, PayZapp এবং Freecharge-এর মতো অ্যাপগুলি এই পরিষেবা প্রদান করে থাকে। একবার KYC প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, ভাড়াটিয়াকে বাড়িওয়ালার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর এবং IFSC কোড দিতে হয়। এরপর চুক্তি অনুযায়ী ভাড়ার পরিমাণ উল্লেখ করে ‘পে’ বোতাম চাপলেই টাকা সরাসরি বাড়িওয়ালার অ্যাকাউন্টে চলে যায়।
এই প্ল্যাটফর্মগুলো মূলত মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করে এবং ০.৯% থেকে ২.৫% পর্যন্ত প্রসেসিং ফি, সঙ্গে GST, চার্জ করে থাকে। যদিও এই খরচটা কিছুটা বেশি, অনেক ব্যবহারকারী বলেন যে বাজেট ম্যানেজমেন্টের সুবিধা বিবেচনা করলে এই চার্জটুকু সার্থক।
সতর্কতা অবলম্বন জরুরি
যদিও এই পদ্ধতিতে সুবিধার শেষ নেই, তবুও কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রথমত, সব ক্রেডিট কার্ডেই বাড়িভাড়া মেটানোর উপর রিওয়ার্ড পয়েন্ট পাওয়া যায় না। অনেক ব্যাংক এই ধরনের লেনদেনকে ‘ক্যাশ অ্যাডভান্স’ হিসেবে চিহ্নিত করে থাকে, যার ফলে অতিরিক্ত সুদ বা চার্জ প্রযোজ্য হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, সময়মতো বিল পরিশোধ না করলে সুদমুক্ত সুবিধা শেষ হয়ে যায় এবং উচ্চ সুদের কারণে ঋণের বোঝা বাড়তে পারে। অর্থাৎ, এই পদ্ধতিতে সুবিধা নিতে হলে সুশৃঙ্খল আর্থিক ব্যবস্থাপনা আবশ্যক।
ব্যবহারকারীদের জন্য পরামর্শ
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই পরিষেবায় যুক্ত হওয়ার আগে ব্যবহারকারীদের নিচের বিষয়গুলো খুঁটিয়ে দেখা উচিত:
- প্ল্যাটফর্ম ফি: বিভিন্ন অ্যাপের চার্জ তুলনা করে দেখা উচিত। ছোট অঙ্কের চার্জও দীর্ঘমেয়াদে অনেক খরচ বাড়াতে পারে।
- কার্ডের শর্তাবলী: কোন কার্ডে কী সুবিধা মিলবে এবং কোথায় রিওয়ার্ড পাওয়া যাবে না, তা ভালোভাবে বুঝে নেওয়া দরকার।
- পরিশোধের শৃঙ্খলা: সুদমুক্ত সময়সীমার মধ্যে পুরো বিল মেটানো জরুরি। তা না হলে সুদের কারণে পুরো ব্যবস্থাটিই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ডিজিটাল ভারতের পথে এগিয়ে চলা
যখন ভারত ধীরে ধীরে একটি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল অর্থনীতির দিকে এগিয়ে চলেছে, তখন বাড়িভাড়া মেটানোর মতো ঐতিহ্যবাহী লেনদেনও এখন ফিনটেক উদ্ভাবনের ছোঁয়ায় পাল্টে যাচ্ছে। প্রযুক্তি আর আর্থিক পণ্যের এই মেলবন্ধন নতুন প্রজন্মের আর্থিক স্বাধীনতা এবং স্মার্ট ব্যবস্থাপনার পথ দেখাচ্ছে।
তবে, এই পদ্ধতি সফলভাবে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা, আর্থিক শৃঙ্খলা, এবং প্রতিটি লেনদেনের আগে পুরো শর্তাবলী ভালোভাবে বোঝা। তাহলেই ডিজিটাল পেমেন্টের এই নতুন ধারা হবে সত্যিই কার্যকর ও উপকারী।