দীপাবলির আগে সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে বড় ঘোষণা করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। উৎসবের মরসুমে ভোক্তাদের খরচের চাপ কিছুটা হলেও লাঘব করার উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় ও ভোক্তাপণ্য সামগ্রীতে পণ্য ও পরিষেবা কর (GST) হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সরকার সূত্রে খবর, অক্টোবরের মাঝামাঝি বা দীপাবলির আগেই এই সংশোধিত হার কার্যকর হতে পারে।
সরকারি কর্তারা মনে করছেন, রান্নাঘরের বহু জিনিস ও প্রতিদিনের ব্যবহারযোগ্য জিনিসের দামে সরাসরি প্রভাব পড়বে। সাধারণ গৃহস্থালির খরচ কমে আসবে এবং ক্রেতাদের খুশির বার্তা পৌঁছে যাবে উৎসবের মরসুমে। দীর্ঘদিন ধরে মুদ্রাস্ফীতির চাপে নাজেহাল মধ্যবিত্তদের জন্য এই পদক্ষেপ এক বড় স্বস্তি আনবে বলেই আশা।
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে ইলেকট্রনিক্স ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স সেক্টরে। বর্তমানে 32 ইঞ্চির বেশি টেলিভিশনের উপর 28% জিএসটি ধার্য রয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনে এটি 18%-এ নামানো হতে পারে। এর ফলে টিভির দামে প্রায় ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে বলে শিল্প বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন। কোম্পানিগুলি মনে করছে, উৎসবের মরসুমে টিভি বিক্রিতে ব্যাপক উল্লাস দেখা যাবে।
এয়ার কন্ডিশনার (AC)-এর ক্ষেত্রেও মিলতে চলেছে বড় স্বস্তি। বর্তমানে 28% জিএসটি ধার্য থাকলেও তা 18%-এ নামানো হলে এসির দামে প্রায় ১,৫০০ থেকে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত কমতে পারে।
ব্লু স্টার-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর বি থিয়াগারাজন বলেছেন, “এই সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর হলে এসির দামে প্রায় ১০% হ্রাস ঘটতে পারে, কারণ জিএসটি চূড়ান্ত মূল্যের উপরই ধার্য হয়।”
অন্যদিকে প্যানাসনিক লাইফ সলিউশনস ইন্ডিয়া-এর চেয়ারম্যান মানিশ শর্মা জানিয়েছেন, “যদি এসি ও অন্যান্য অ্যাপ্লায়েন্সের জিএসটি 28% থেকে 18%-এ নামানো হয়, তবে বাজারমূল্য অন্তত ৬-৭% কমবে।”
গোদরেজ অ্যাপ্লায়েন্সেস সংস্থা জানিয়েছে, প্রস্তাবিত করছাড় কার্যকর হলে গ্রাহক চাহিদা বাড়বে এবং গৃহস্থালী যন্ত্রপাতির বিক্রি নতুন গতি পাবে।
শুধু টিভি বা এসি নয়, কম দাম হতে চলেছে গাড়ির ক্ষেত্রেও। এখন পর্যন্ত ছোট হ্যাচব্যাক, সেডান এবং মিনি এসইউভি-তে 28% জিএসটি ও অতিরিক্ত ১-৩% সেস ধরা হয়। এর ফলে কার্যকর করহার দাঁড়ায় প্রায় ৩১%। যদি প্রস্তাবিত হারে জিএসটি ১৮%-এ নামানো হয়, তবে দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমবে।
কোন কোন গাড়ি হবে সস্তা?
প্রস্তাব কার্যকর হলে যে সমস্ত গাড়ির দামে স্বস্তি আসতে পারে, তার মধ্যে রয়েছে—
মারুতি সুজুকি অল্টো K10, মারুতি সুজুকি এস-প্রেসো, রেনল্ট কুইড, মারুতি সুজুকি ওয়াগন আর, মারুতি সুজুকি ডিজায়ার, হুন্ডাই অরা, টাটা টিগর, টাটা পাঞ্চ, হুন্ডাই এক্সটার, রেনল্ট কাইগার।
এই গাড়িগুলির দাম কমলে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের কাছে গাড়ি কেনা অনেক সহজ হবে বলে আশা করছেন বিশ্লেষকরা।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীপাবলির ঠিক আগে জিএসটি হার কমানো হলে তা ভোক্তাদের পাশাপাশি বাজারেও নতুন গতি আনবে। গত কয়েক বছরে ভোক্তাদের আয় বাড়েনি, কিন্তু দাম বেড়েছে লাফিয়ে। ফলে বাজার কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। প্রস্তাবিত করছাড় কার্যকর হলে পণ্যের দামে দীর্ঘদিনের মধ্যে সবচেয়ে বড় পতন দেখা যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অ্যাপ্লায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির কর্তা মহলের মতে, দীপাবলির সময় গ্রাহকের ক্রয়ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এবার যদি করছাড় কার্যকর হয়, তবে তা দ্বিগুণ প্রভাব ফেলবে— একদিকে ক্রেতারা কম দামে পণ্য পাবেন, অন্যদিকে কোম্পানিগুলির বিক্রিও বাড়বে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের মধ্যে এই খবরে ইতিমধ্যেই উৎসাহ দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে চাহিদার তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় অনেকেই টিভি, এসি বা গাড়ি কেনার পরিকল্পনা পিছিয়ে দিচ্ছিলেন। দীপাবলির আগে করছাড় কার্যকর হলে তারা নতুন কেনাকাটার পথে হাঁটবেন।
একজন সম্ভাব্য ক্রেতা জানিয়েছেন, “বছরের পর বছর ধরে আমরা নতুন টিভি কেনার কথা ভাবছিলাম, কিন্তু দাম এত বেশি ছিল যে সম্ভব হয়নি। যদি দীপাবলির আগে সত্যিই ১০ হাজার টাকা কমে যায়, তবে অবশ্যই কিনব।”
সরকার মনে করছে, এই পদক্ষেপ শুধু সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেবে না, একই সঙ্গে দেশের খুচরো বাজার, গাড়ি ও অ্যাপ্লায়েন্স শিল্পেও গতি আনবে। উৎসবের মরসুমে চাহিদা বাড়লে সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
সব মিলিয়ে দীপাবলির আগে সরকারের এই পদক্ষেপ ভোক্তাদের জন্য এক বড় উৎসবের উপহার হতে চলেছে। টিভি থেকে এসি, গাড়ি থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস— সবেতেই মিলবে স্বস্তির বার্তা। শিল্পমহল মনে করছে, এই করছাড় শুধু ভোক্তাদের খুশি করবে না, বরং থমকে থাকা বাজারকে নতুন প্রাণ দেবে। দীপাবলি আসতে এখনও কিছুটা দেরি, তবে এখন থেকেই ক্রেতা ও ব্যবসায়ী মহলে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।