ইন্টারনেট পরিষেবাতেও বাংলাদেশ বয়কট ভারতের

bsnl-stops-internet-import-from-bangladesh

ঢাকা/নয়াদিল্লি: ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম কোম্পানি ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল) বাংলাদেশ থেকে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ আমদানি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য যা ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত এখন থেকে সম্পূর্ণভাবে দেশীয় ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক এবং স্যাটেলাইট সংযোগের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা পাবে।

Advertisements

গত ২১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে কার্যকর হওয়া এই পরিবর্তন উত্তর-পূর্বের ডিজিটাল যোগাযোগ খাতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা দেশের ডিজিটাল স্বনির্ভরতার লক্ষ্যকে আরও শক্তিশালী করবে।বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবলস পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) এর উপ-সাধারণ ব্যবস্থাপক (বিপণন ও বিক্রয়) এমএ আরিফুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন যে, বিএসএনএল তাদের কাছে অবশিষ্ট ১০ জিবিপিএস (গিগাবিট প্রতি সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ লিঙ্কটি ২১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।

বজবজ নিউ সেন্ট্রাল জুট মিল পুনরুজ্জীবনে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার

এই লিঙ্কটি আখাউড়া সীমান্তবর্তী পথের মাধ্যমে বাংলাদেশের কক্সবাজার ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ভারতের আগরতলা নোডে সংযুক্ত ছিল। এর ফলে উত্তর-পূর্বের ইন্টারনেট সংযোগে সাময়িক প্রভাব পড়লেও, বিএসএনএল দ্রুত দেশীয় বিকল্প চালু করে সেটা মোকাবিলা করেছে।এই ঘটনার পটভূমি খুঁজলে দেখা যায়, বিএসএনএল এবং বাংলাদেশের মধ্যে ব্যান্ডউইথ আমদানি-রফতানির সম্পর্ক অনেক দিনের।

২০১৫ সালের জুনে বিএসএনএল ত্রিপুরার জন্য ১০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আমদানির চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে চালু হয়। পরবর্তীতে ক্যাপাসিটি ২০ জিবিপিএস-এ উন্নীত হয় এবং মিঘালয়, আসামসহ অন্যান্য রাজ্যও এর সুবিধা পায়। কিন্তু ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পেমেন্টের সমস্যা দেখা দেয়। বিএসএনএলের আর্থিক সংকটের কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেবা স্থগিত হয়।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে নতুন চুক্তির মাধ্যমে আবার চালু হলেও, সাম্প্রতিককালে আবার সেই পুরনো সমস্যা ফিরে এসেছে। বিএসসিপিএলসি জানিয়েছে, বিএসএনএলের কাছে এখনও কিছু বকেয়া থাকলেও, এবারের বন্ধের পিছনে মূলত আর্থিক সীমাবদ্ধতা এবং দেশীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন। এখন প্রশ্ন উঠছে, এই আমদানি বন্ধের ফলে উত্তর-পূর্বের ইন্টারনেট সেবা কীভাবে প্রভাবিত হবে?

Advertisements

আসলে, এই অঞ্চলটি ভারতের অন্যান্য অংশের তুলনায় ডিজিটালভাবে অনেক পিছিয়ে। চেন্নাই বা মুম্বইয়ের মতো বড় শহরগুলোর সুবিধা এখানে নেই, কারণ পাহাড়ি এলাকায় ফাইবার লাইন বিস্তার করা খুবই কঠিন এবং ব্যয়বহুল।

বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা ব্যান্ডউইথ এই অঞ্চলের জন্য একটা সহজলভ্য বিকল্প ছিল, যা আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে সরাসরি পৌঁছে দিত। এর ফলে ইন্টারনেটের গতি এবং নির্ভরযোগ্যতা অনেকটা বেড়েছিল। কিন্তু এখন বিএসএনএলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সম্পূর্ণ স্থানান্তর হচ্ছে দেশীয় ফাইবার নেটওয়ার্ক এবং স্যাটেলাইটের দিকে।

ভারত সরকারের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে উত্তর-পূর্বে ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের বিস্তার কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতনেট প্রকল্পের মাধ্যমে হাজার হাজার গ্রামে ফাইবার সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

এছাড়া, স্যাটেলাইট প্রযুক্তির মতো জিএসএটি (জিও-স্টেশনারি অর্থোগ্রাফিক ট্রান্সপন্ডার) এবং নতুন লঞ্চ হওয়া স্যাটেলাইট কনস্টেলেশনগুলো পাহাড়ি এলাকায় ইন্টারনেটের অভাব পূরণ করবে। বিএসএনএলের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “এই পরিবর্তন আমাদের স্বনির্ভর করে তুলবে এবং দীর্ঘমেয়াদে খরচও কমবে।”