রেজিস্টার্ড কোম্পানির সংখ্যায় সেরা দশে বিহার, কত নম্বরে বাংলা?

ভারতের কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের (Registered Companies India) তালিকায় একটি নতুন তথ্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ইন্ডিয়ান টেক অ্যান্ড ইনফ্রা (@IndianTechGuide) কর্তৃক প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক…

Bihar in Top 10 for Registered Companies, West Bengal at 8th Despite Higher Numbers

ভারতের কোম্পানি রেজিস্ট্রেশনের (Registered Companies India) তালিকায় একটি নতুন তথ্য প্রকাশের মধ্য দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ইন্ডিয়ান টেক অ্যান্ড ইনফ্রা (@IndianTechGuide) কর্তৃক প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক পোস্ট অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের রাজ্যভিত্তিক রেজিস্টার্ড কোম্পানির সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে বিহার (৬৭,৬৬৭ কোম্পানি) সেরা দশের মধ্যে স্থান করে নেওয়ার কারণে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। তবে এই তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের (২,৪৯,৬১৫ কোম্পানি) অবস্থান ৮ম স্থানে থাকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে, যা অনেকের মতে একটি তথ্যগত ভুল বা রাজনৈতিক প্রভাবের পরিচয় দিতে পারে।

তথ্যের বিশ্লেষণ: বিহারের উত্থান ও বাংলার দ্বন্দ্ব
ইন্ডিয়ান টেক অ্যান্ড ইনফ্রার প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, মহারাষ্ট্র (৫,৬০,১০৫) ও দিল্লি (৪,৩২,৩৮৬) শীর্ষ দুটি স্থান দখল করে রয়েছে, যা দেশের ব্যবসায়িক কেন্দ্র হিসেবে এই রাজ্যগুলোর অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তৃতীয় স্থানে উত্তরপ্রদেশ (২,১৬,৪৬৭) ও তামিলনাড়ু (২,১২,৪৬২) রয়েছে, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ২,৪৯,৬১৫ কোম্পানির সংখ্যা এই দুটি রাজ্যের তুলনায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও ৮ম স্থানে থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পশ্চিমবঙ্গ আসলে তৃতীয় স্থানে থাকার যোগ্য, যা তালিকার বর্তমান বিন্যাসে একটি স্পষ্ট ভুল বা ইচ্ছাকৃত পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিতে পারে।

   

এদিকে, বিহারের ৬৭,৬৬৭ কোম্পানি নিয়ে ১০ম স্থান অধিকার করা একটি উল্লেখযোগ্য উন্নতির পরিচয়। গত কয়েক দশকে বিহারে ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধার উন্নতি এবং নতুন নীতি প্রণয়নের ফলে ব্যবসায়িক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এই সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম হলেও, এটি রাজ্যের সম্ভাবনা প্রকাশ করছে।

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক
পশ্চিমবঙ্গের ২,৪৯,৬১৫ কোম্পানির সংখ্যা তামিলনাড়ু ও উত্তরপ্রদেশের তুলনায় বেশি হওয়া সত্ত্বেও ৮ম স্থানে থাকার বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় বড় আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ব্যবহারকারীদের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক প্রভাবিত তালিকা হতে পারে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনৈতিক গুরুত্বকে হয়রানি করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন টুইটে দেখা গেছে, “২,৪৯,৬১৫ কোম্পানি থাকতে ৮ম স্থান! এটা কি তথ্যের ভুল, নাকি ইচ্ছাকৃত?” প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে এটিকে “সাংঘাতিক মানসিকতা” বা “ভাজপা আইটি সেলের কাজ” বলে অভিযোগ করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সিল্পসাথি পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে ব্যবসা সহজকরণের জন্য অনলাইন সিস্টেম চালু করা হয়েছে, যা নতুন কোম্পানি নিবন্ধনকে উৎসাহিত করছে। এছাড়া, গত কয়েক দশকে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি ও গ্রামীণ খরিদ ক্ষমতা জাতীয় গড়ের তুলনায় বেশি হওয়া (আইডিয়াস ফর ইন্ডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী) এই রাজ্যের উদ্যোক্তা মানসিকতার পরিচয় দেয়। তাই, ২,৪৯,৬১৫ কোম্পানির সংখ্যা অবজ্ঞা করা সম্ভব নয়।

Advertisements

অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
মিনিস্ট্রি অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, ১৮৫৭ সাল থেকে মহারাষ্ট্র ও দিল্লির পর পশ্চিমবঙ্গই কোম্পানি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে অগ্রণী ছিল। ১৯৪০-এর দশকে দক্ষিণী রাজ্যগুলো এবং ১৯৮০-এর দশকে রফতানি উৎসাহ প্রদান এবং কর সংস্কারের ফলে নিবন্ধন বৃদ্ধি পেয়েছিল। আজকের তথ্যে পশ্চিমবঙ্গের পেছনে পড়া সম্ভবত এই রাজ্যের শিল্পায়নের দিকে কম মনোযোগ দেওয়ার ফল। তবে, সরকারি উদ্যোগ ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিলে এই পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে পারে।

বিহারের ক্ষেত্রে, নতুন নীতি ও ভৌগোলিক সুবিধার মাধ্যমে কোম্পানি নিবন্ধন বৃদ্ধি পাওয়া একটি ইতিবাচক সংকেত। তবে, পশ্চিমবঙ্গের মতো বড় রাজ্যের জন্য ৮ম স্থান গ্রহণ কোনো বিশেষ অর্থ বহন করে না। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, তথ্য পুনর্বিবেচনা করে সঠিক র্যাঙ্কিং প্রকাশ করা উচিত, যাতে রাজনৈতিক বা অন্য কোনো প্রভাব এড়িয়ে সত্যিকারের অর্থনৈতিক চিত্র ফুটে উঠতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের ২,৪৯,৬১৫ কোম্পানির সংখ্যা এবং ৮ম স্থানের বিতর্ক এখনো চলমান। সামাজিক মাধ্যমে এ বিষয়ে তীব্র আলোচনা চলছে, এবং রাজ্যের জনগণ এই তথ্যের সঠিকতা নিয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে। বিহারের উত্থান একদিকে উৎসাহজনক, অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ভবিষ্যতে সঠিক তথ্য ও নীতিগত সহায়তার মাধ্যমে এই রাজ্য দুটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত হতে পারে।