GST-তে বড় পরিবর্তন আসছে, সস্তা হতে পারে বহু জিনিসপত্র

ভারতের GST (পণ্য ও পরিষেবা কর) ব্যবস্থায় বড় রদবদলের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। শিগগিরই জিএসটি কাউন্সিল ১২% করহার বিলুপ্ত করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে পারে বলে…

Big GST Reform Likely

ভারতের GST (পণ্য ও পরিষেবা কর) ব্যবস্থায় বড় রদবদলের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে। শিগগিরই জিএসটি কাউন্সিল ১২% করহার বিলুপ্ত করার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে পারে বলে সিএনবিসি-টিভি১৮-এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে দেশের জিএসটি কাঠামোতে বর্তমানে প্রচলিত চারটি করহার — ৫%, ১২%, ১৮% ও ২৮% — এর পরিবর্তে তিনটি করহার বহাল থাকবে। কাউন্সিলের এই বৈঠক জুন মাসের শেষে বা জুলাই মাসের শুরুতে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, বর্ষাকালীন সংসদ অধিবেশনের আগে।

কেন এই পরিবর্তন?
সূত্র অনুযায়ী, চলতি বছরে একাধিকবার জিএসটি আদায়ের অঙ্ক ২ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় কাউন্সিলের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে, এবং তাই তারা করহার হ্রাসের মতো সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের নেতৃত্বাধীন জিএসটি কাউন্সিল রাজ্য অর্থমন্ত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত, এবং তারাই এই সিদ্ধান্ত নেবে।

   

জিএসটি আদায়ের হার কমে বর্তমানে ১২ শতাংশের আশেপাশে অবস্থান করছে, যেখানে রাজস্ব নিরপেক্ষ হার ধরা হয় প্রায় ১৫.৩ শতাংশ। ফলে করহার হ্রাসের ফলে রাজস্ব ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেও, সরকারের মনে হচ্ছে এক্ষেত্রে কিছুটা নমনীয়তা দেখানো সম্ভব।

১২% করহার কীভাবে ভাগ করা হতে পারে?
এই মুহূর্তে ১২% করহার আওতায় রয়েছে বহু পণ্য ও পরিষেবা। সেগুলিকে ৫% অথবা ১৮% করহারে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞ ও সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনন্দিন ব্যবহারের ভোগ্যপণ্যগুলিকে ৫% করহার আওতায় আনার সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যদিকে, কিছু প্রযুক্তিগত পরিষেবা বা ব্যয়বহুল পণ্যকে ১৮% করহারে রাখা হতে পারে।

বর্তমানে ১২% করহার আওতায় যেসব পণ্য ও পরিষেবা রয়েছে:

পণ্য:

  • প্রসেস ও প্যাকেটজাত খাদ্য: যেমন মাখন, ঘি, চিজ, ফলের রস, জ্যাম, জেলি, ভুজিয়া ও অন্যান্য নোনতা খাবার।
  • শুকনো ফল ও সংরক্ষিত খাবার: বাদাম, খেজুর ইত্যাদি।
  • পানীয়: প্যাকেটজাত নারকেল জল ও ফল-ভিত্তিক পানীয়।
  • গৃহস্থালির সামগ্রী: ছাতা, বাঁশ বা কাঠের তৈরি আসবাবপত্র।
  • স্টেশনারি ও আনুষঙ্গিক পণ্য: পেনসিল, ক্রেয়ন, জুট বা তুলোর তৈরি ব্যাগ।
  • জুতো: ১,০০০ টাকার নিচে মূল্যের জুতো।
  • চিকিৎসা কিট: বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহৃত কিট।
  • নির্মাণসামগ্রী: মার্বেল ও গ্রানাইট ব্লক।

পরিষেবা

Advertisements
  • হোটেল: দৈনিক ভাড়া ৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত হলে।
  • বিমান যাত্রা: ইকোনমি ছাড়া অন্যান্য শ্রেণিতে যাত্রা।
  • নির্মাণ পরিষেবা: নির্দিষ্ট কিছু নির্মাণ প্রকল্প।
  • মাল পরিবহণ: মাল পরিবহণের কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি।
  • পেশাদার পরিষেবা: নির্দিষ্ট কিছু টেকনিক্যাল ও বিজনেস পরিষেবা।

এই পণ্য ও পরিষেবাগুলি ৫% বা ১৮% করহারে ভাগ করে পুনঃবিন্যাস করা হলে কিছু পণ্য সস্তা হবে, আবার কিছু পণ্যের দাম বাড়বে।

কখন হবে এই সিদ্ধান্ত?
গোটা বিষয়টি নির্ভর করছে ‘রেট র‌্যাশনালাইজেশন’ সংক্রান্ত গ্রুপ অফ মিনিস্টার্স (GoM)-এর রিপোর্টের উপর, যা এখনো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। তবে রিপোর্ট পেশ হওয়ার পরেই জিএসটি কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নেবে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, এই বৈঠক জুনের শেষ অথবা জুলাইয়ের শুরুতে হবে।

২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে এই রিপোর্ট উপস্থাপন করা হলেও, তখন আলোচনা স্থগিত রাখা হয়েছিল। তবে এবার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় সেই আলোচনাই আবার কেন্দ্রে ফিরে এসেছে।

সম্ভাব্য প্রভাব

  • এই রকম করহার রদবদলের ফলে গ্রাহক, ব্যবসায়ী ও সরকারের উপর একযোগে প্রভাব পড়বে।
  • সাধারণ মানুষের জন্য: ৫% হার আওতাভুক্ত হওয়া পণ্য সস্তা হবে, যা সাধারণ মানুষের উপকারে আসবে।
  • ব্যবসায়ীদের জন্য: দাম কমলে চাহিদা বাড়তে পারে, যার ফলে বিক্রি বৃদ্ধি পেতে পারে।
  • সরকারের জন্য: দীর্ঘমেয়াদে রাজস্ব নিরপেক্ষতা বজায় রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

জিএসটি কাঠামোকে আরও সরল, স্বচ্ছ ও ব্যবহারবান্ধব করার লক্ষ্যেই ১২% করহার বিলুপ্তির এই পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ট্যাক্স ব্যবস্থা আরও ত্রিস্তরীয় হবে এবং পণ্য পরিষেবার দামের ক্ষেত্রেও এক নতুন ভারসাম্য দেখা দিতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পেতে হলে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে জিএসটি কাউন্সিলের পরবর্তী বৈঠকের জন্য।