অনলাইন শপিংয়ে বড় ছাড়! ৭ এপ্রিল থেকে সেলার ফি কমাল অ্যামাজন

অনলাইন কেনাকাটার কোটি কোটি গ্রাহকদের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে অ্যামাজন (Amazon)। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ই-কমার্স জায়ান্টটি তার বিক্রেতাদের উপর থেকে একাধিক…

Selling Pakistani Flags Online? Centre Sends Stern Warning to E-Commerce Giants

অনলাইন কেনাকাটার কোটি কোটি গ্রাহকদের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে অ্যামাজন (Amazon)। আগামী ৭ এপ্রিল থেকে ই-কমার্স জায়ান্টটি তার বিক্রেতাদের উপর থেকে একাধিক ফি কমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে, যার ফলে পণ্যের দাম আরও সাশ্রয়ী হতে পারে। এই সিদ্ধান্তের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ৩০০ টাকার নিচে দামের পণ্যগুলির উপর রেফারেল ফি বা কমিশন পুরোপুরি তুলে নেওয়া। গত বছরের সেপ্টেম্বরে এই ধরনের একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের সাফল্যের পর অ্যামাজন এই সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে।

অ্যামাজন (Amazon) এবং ফ্লিপকার্টের মতো প্ল্যাটফর্মে বিক্রি করা অনলাইন ব্যবসায়ীদের প্রতিটি বিক্রয়ের জন্য একটি কমিশন দিতে হয়, যা প্রায়শই গ্রাহকদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়। এই চার্জ বাদ দিয়ে অ্যামাজন (Amazon) তার প্ল্যাটফর্মে আরও বেশি বিক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে চায় এবং একই সঙ্গে পণ্যের দাম কমাতে চায়। এই উদ্যোগের ফলে অ্যামাজনের (Amazon) মার্কেটপ্লেস আরও বিস্তৃত হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা ক্রেতাদের জন্য কম দামে বেশি বিকল্প নিয়ে আসবে।

   

রেফারেল ফি বাদ দেওয়ার পাশাপাশি অ্যামাজন শিপিং এবং ওজন-ভিত্তিক চার্জও কমাচ্ছে। আগে যে স্ট্যান্ডার্ড শিপিং ফি ছিল ৭৭ টাকা, তা এখন ৬৫ টাকায় নামিয়ে আনা হচ্ছে। এছাড়া ওজন-ভিত্তিক চার্জেও কমানো হচ্ছে। এই সংশোধিত নীতিগুলি অ্যামাজনের (Amazon) বিক্রেতা নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিক্রেতাদের লাভের মার্জিন বাড়বে এবং গ্রাহকদের জন্য অনলাইন কেনাকাটা আরও সাশ্রয়ী হবে। অ্যামাজন (Amazon) ইন্ডিয়ার সেলিং পার্টনার সার্ভিসেসের ডিরেক্টর অমিত নন্দা বলেছেন, “৩০০ টাকা পর্যন্ত দামের পণ্যগুলি গ্রাহকদের দৈনন্দিন কেনাকাটার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। খরচ কমানো মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির জন্য মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে বড় স্বস্তি আনতে পারে।”

শিল্প বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যামাজনের (Amazon) এই সর্বশেষ পদক্ষেপের পিছনে রয়েছে কুইক কমার্স সংস্থাগুলির ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতা। জোম্যাটোর ব্লিঙ্কিট, সুইগির ইন্সটামার্ট এবং জেপটোর মতো কোম্পানিগুলি অতি দ্রুত ডেলিভারির মাধ্যমে বাজারে বিপ্লব এনেছে, বিশেষ করে মুদি এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে। এই প্রতিযোগিতার জবাবে অ্যামাজনও (Amazon) কুইক কমার্সে পা রেখেছে, যদিও এখনও এটি শুধুমাত্র বেঙ্গালুরুতে সীমাবদ্ধ। ফি কমানোর এই উদ্যোগকে অনেকে এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন।

এই পদক্ষেপের ফলে গ্রাহকরা বিভিন্ন সুবিধা পাবেন। ৩০০ টাকার নিচে দামের পণ্যগুলির উপর কমিশন না থাকায় বিক্রেতারা তাদের পণ্যের দাম কমাতে পারবেন। ফলে, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন মুদি, সৌন্দর্য পণ্য, বা ছোট গৃহস্থালি সামগ্রী আরও সস্তায় পাওয়া যাবে।

এছাড়া, শিপিং খরচ কমার ফলে বিক্রেতারা আরও বেশি পণ্য তালিকাভুক্ত করতে উৎসাহিত হবেন, যা গ্রাহকদের জন্য বিকল্প বাড়াবে। অমিত নন্দা বলেন, “এই পদক্ষেপ গ্রাহকদের দৈনন্দিন কেনাকাটায় স্বস্তি দেবে এবং বিক্রেতাদের ব্যবসা বাড়াতে সাহায্য করবে।”

Advertisements

অ্যামাজনের (Amazon) এই উদ্যোগ বিক্রেতাদের জন্যও একটি বড় সুযোগ। রেফারেল ফি বাদ দেওয়ায় তাদের লাভের পরিমাণ বাড়বে, যা তাদের আরও বেশি পণ্য বিক্রির জন্য উৎসাহিত করবে। শিপিং ফি কমার ফলে ছোট ব্যবসায়ীরা, যারা কম মূল্যের পণ্য বিক্রি করে, তারাও অ্যামাজনে তাদের উপস্থিতি বাড়াতে পারবেন। এটি বিশেষ করে টিয়ার-২ এবং টিয়ার-৩ শহরের বিক্রেতাদের জন্য উপকারী হবে, যারা প্রায়শই সীমিত লাভের মার্জিন নিয়ে কাজ করে।

কুইক কমার্স সংস্থাগুলি গত কয়েক বছরে ভারতের ই-কমার্স বাজারে বড় পরিবর্তন এনেছে। ব্লিঙ্কিট, ইন্সটামার্ট এবং জেপটো ১০-৩০ মিনিটের মধ্যে ডেলিভারি দিয়ে গ্রাহকদের আকৃষ্ট করছে। এই সংস্থাগুলি মূলত দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিস এবং মুদির উপর ফোকাস করেছে, যা অ্যামাজনের (Amazon) ঐতিহ্যবাহী ব্যবসার একটি বড় অংশ। জবাবে, অ্যামাজন বেঙ্গালুরুতে কুইক কমার্স পরিষেবা চালু করেছে, তবে এটি এখনও সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েনি। ফি কমানোর এই পদক্ষেপকে অনেকে এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার একটি কৌশল হিসেবে দেখছেন।

শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, অ্যামাজনের (Amazon) এই পদক্ষেপ বাজারে তার অবস্থান শক্তিশালী করবে। কুইক কমার্সের উত্থানের মধ্যে অ্যামাজনকে তার গ্রাহক এবং বিক্রেতা বেস ধরে রাখতে হবে। ফি কমানোর ফলে বিক্রেতারা অ্যামাজনে (Amazon) বেশি পণ্য তালিকাভুক্ত করতে উৎসাহিত হবেন, যা গ্রাহকদের জন্য বিকল্প বাড়াবে। তবে, এটি অ্যামাজনের (Amazon) নিজস্ব আয়ের উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কেউ কেউ মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে এটি বিক্রয় বাড়িয়ে লাভের ক্ষতি পূরণ করতে পারে।

এই ফি কমানোর ফলে গ্রাহকরা কম দামে পণ্য কিনতে পারবেন, যা মূল্যস্ফীতির এই সময়ে বড় স্বস্তি। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলি, যারা দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য অনলাইন কেনাকাটার উপর নির্ভর করে, তারা এর সুবিধা পাবেন। অ্যামাজনের এই পদক্ষেপ অন্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলির উপরও চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যারা হয়তো অনুরূপ কৌশল গ্রহণ করতে বাধ্য হবে।

অ্যামাজনের (Amazon) এই সিদ্ধান্ত গ্রাহক এবং বিক্রেতা উভয়ের জন্যই একটি জয়-জয় পরিস্থিতি তৈরি করছে। ৭ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাওয়া এই নতুন নীতি অনলাইন কেনাকাটাকে আরও সাশ্রয়ী এবং বিক্রেতাদের জন্য লাভজনক করে তুলবে। প্রতিযোগিতার এই যুগে অ্যামাজনের এই পদক্ষেপ কতটা সফল হয়, তা সময়ই বলবে। তবে, বর্তমানে এটি গ্রাহকদের জন্য একটি স্বস্তির খবর নিয়ে এসেছে।