অনলাইন পেমেন্ট পরিষেবায় RBI-এর অনুমোদন পেল BharatPe

ভারতীয় ফিনটেক সংস্থা BharatPe একটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে। সংস্থাটি সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-র কাছ থেকে অনলাইন পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর হিসেবে কাজ করার জন্য…

BharatPe

ভারতীয় ফিনটেক সংস্থা BharatPe একটি বড় সাফল্য অর্জন করেছে। সংস্থাটি সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)-র কাছ থেকে অনলাইন পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর হিসেবে কাজ করার জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এই অনুমোদনের ফলে, BharatPe এখন সরকারী নিয়ন্ত্রনের আওতায় ই-কমার্স লেনদেন নিষ্পত্তির পরিষেবা প্রদান করতে পারবে। এছাড়াও, তারা ‘BharatPe X’ নামে একটি নতুন ব্র্যান্ডের মাধ্যমে এই প্ল্যাটফর্মটি চালু করার পরিকল্পনা করেছে।

এই চূড়ান্ত অনুমোদনটি সেই প্রক্রিয়ার শেষ পর্যায়, যা শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে যখন BharatPe প্রথম ‘in-principle’ অনুমোদন পায়। এখন থেকে, BharatPe NBFC ও বিভিন্ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে অংশীদারিত্বে ঋণ পরিষেবা, আগাম লেনদেন নিষ্পত্তি এবং উন্নত প্রযুক্তি পরিকাঠামোর মাধ্যমে আরও বৃহৎ ব্যবসায়িক ভিত্তিকে টার্গেট করবে, বিশেষত ভারতের টিয়ার ২ ও টিয়ার ৩ শহরগুলোতে।

BharatPe-র CEO নলিন নেগি বলেন, “এই চূড়ান্ত অনুমোদন শুধুমাত্র একটি মাইলস্টোন নয়, এটি একটি দায়িত্ব। এটি আমাদের পরিচালন কাঠামো ও গভর্ন্যান্স প্র্যাকটিসের শক্তিকে তুলে ধরে।” ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত BharatPe বর্তমানে ৪৫০টিরও বেশি শহরে কার্যরত, এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ১.৩ কোটিরও বেশি ব্যবসায়ী। সংস্থাটি প্রতি মাসে ৪৫০ মিলিয়নেরও বেশি UPI লেনদেন প্রক্রিয়াকরণ করে এবং বছরে লেনদেনের পরিমাণ ১.৭ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।

‘BharatPe Money’-র মাধ্যমে সংস্থাটি NBFC-র সহযোগিতায় ১৮,০০০ কোটিরও বেশি ঋণ বিতরণ করেছে। এই পরিষেবার মধ্যে রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডের বিপরীতে ঋণ, হোম লোনের মতো বিভিন্ন প্রোডাক্ট।

BharatPe গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত রেজিলিয়েন্ট পেমেন্টস-এর CEO সন্দীপ ইন্দুরকার জানান, “আমরা উচ্চ সম্ভাবনাময় বাজারে আমাদের পদচিহ্ন প্রসারিত করতে চাই, প্রোডাক্টের বৈচিত্র্য আনতে চাই এবং ব্যবসায়িক ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থাপনায় আরও উদ্ভাবন করতে চাই। এখন আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে দ্রুত ও নির্ভরযোগ্যভাবে নির্মাণ।”

এই চূড়ান্ত লাইসেন্স প্রাপ্তির ফলে BharatPe এখন Easebuzz, Razorpay, Google Pay, Zomato ও CC Avenue-এর মতো বড় ফিনটেক কোম্পানিগুলির সারিতে দাঁড়াল। উল্লেখযোগ্যভাবে, RBI পূর্বে কিছু পেমেন্ট অ্যাগ্রিগেটর যেমন Paytm ও Cashfree-র উপর নতুন ব্যবসায়িক অংশীদারদের অন্তর্ভুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই বিধিনিষেধ ধীরে ধীরে শিথিল হচ্ছে।

অর্থনৈতিক দিক থেকেও BharatPe উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ফিনান্সিয়াল ইয়ার ২০২৪-২৫-এর প্রথম নয় মাসে সংস্থাটি ১৪৮.৮ কোটি টাকার নিট ক্ষতি দেখিয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় অনেক কম — ২০২৩ সালের প্রথম নয় মাসে এই ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৪৯২ কোটি টাকা। এই সময়ে সংস্থাটি ESOP খরচ বাদ দিলে EBITDA (Earnings Before Interest, Taxes, Depreciation, and Amortization) ব্রেকইভেন অর্জন করেছে। FY24-এ BharatPe-র মোট রাজস্ব দাঁড়িয়েছে ১৪২৬ কোটি টাকা।

Advertisements

এছাড়াও, BharatPe তাদের NBFC সাবসিডিয়ারি ‘ট্রিলিয়ন লোনস’-এর মাধ্যমে ঋণ পরিষেবা বিস্তারে মনোনিবেশ করছে। এই ঋণ পরিষেবা দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি লক্ষ্যে সহায়তা করবে, বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য।

ভারতপে ইতিমধ্যে ৫৮০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪৮০০ কোটি টাকা) তহবিল সংগ্রহ করেছে বিনিয়োগকারী সংস্থা Peak XV Partners এবং Tiger Global-এর কাছ থেকে। এই তহবিলের সাহায্যে সংস্থাটি প্রযুক্তি উন্নয়ন, সেবার সম্প্রসারণ এবং নতুন বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা করছে।

ভারতের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতির প্রেক্ষিতে RBI-এর এই অনুমোদন BharatPe-র জন্য শুধু একটি বাণিজ্যিক অগ্রগতি নয়, বরং দেশের ডিজিটাল পেমেন্টস খাতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে গ্রামীণ ভারতের ব্যবহারকারীদের জন্য সাশ্রয়ী ও নির্ভরযোগ্য লেনদেনের রাস্তা খুলে দিচ্ছে।

এই গুরুত্বপূর্ণ অনুমোদনের ফলে BharatPe শুধু তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে পারবে না, বরং ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে, যা সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়া ও ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশনের লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।