বিনিয়োগে সেরা! ৩ বছরে ২০% এর বেশি রিটার্ন দিয়েছে এই ভ্যালু স্কিমগুলো

মিউচুয়াল ফান্ডে (Mutual Funds) বিনিয়োগ করার আগে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই প্রথমে তার গত কয়েক বছরের পারফরম্যান্স পরীক্ষা করেন। এরপরে একই ক্যাটাগরির অন্য স্কিমগুলোর সঙ্গে তুলনা করে…

Mutual Fund Direct Vs Regular Plan: What's Better And How To Choose

মিউচুয়াল ফান্ডে (Mutual Funds) বিনিয়োগ করার আগে বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই প্রথমে তার গত কয়েক বছরের পারফরম্যান্স পরীক্ষা করেন। এরপরে একই ক্যাটাগরির অন্য স্কিমগুলোর সঙ্গে তুলনা করে দেখেন, যাতে সঠিক বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। অতীতের পারফরম্যান্স অনেক সময় ভবিষ্যতের দিকনির্দেশ করে দেয়। যেমন, কোনো উচ্চ-ফেরত দেওয়া ফান্ড নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আকর্ষণ করে, আবার কম-ফেরত ফান্ড সময়ের সাথে সাথে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ হারায়।

ভ্যালু মিউচুয়াল ফান্ড কী?
ভ্যালু মিউচুয়াল ফান্ড হলো সেই ধরনের স্কিম, যা ভ্যালু ইনভেস্টমেন্ট স্ট্রাটেজি মেনে অন্তত ৬৫ শতাংশ বিনিয়োগ শেয়ারে রাখে। এই ফান্ডগুলো বাজারে বর্তমানে কম দামে পাওয়া এমন শেয়ার চিহ্নিত করে, যেগুলোর আসল মূল্য এখনও পুরোপুরি প্রতিফলিত হয়নি। সময়ের সাথে সাথে যখন সেই মূল্য “আনলক” হয়, তখন ওই শেয়ারের দাম বাড়ে এবং বিনিয়োগকারীরা ভালো রিটার্ন পান।
এসোসিয়েশন অব মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া (AMFI)-এর সর্বশেষ তথ্য (৩১ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত) অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারে মোট ২৪টি ভ্যালু স্কিম রয়েছে, যাদের মোট অ্যাসেটস আন্ডার ম্যানেজমেন্ট (AUM) ২.০১ লক্ষ কোটি টাকা।

   

গত তিন বছরের উচ্চ রিটার্ন দেওয়া ভ্যালু ফান্ড:
AMFI-এর ডেটা অনুযায়ী (১৩ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত রেগুলার রিটার্ন), গত তিন বছরে নিম্নলিখিত ভ্যালু ফান্ডগুলো ২০% এর বেশি বার্ষিক রিটার্ন দিয়েছে—
ভ্যালু ফান্ড ৩ বছরের রিটার্ন (%)
HSBC Value Fund ২৩.৮৪
JM Value Fund ২৩.৩৪
Quant Value Fund ২২.৯৮
Axis Value Fund ২১.৪৫
Nippon India Value Fund ২১.১৯
ICICI Prudential Value Fund ২১.০৫
তথ্য অনুযায়ী, HSBC Value Fund গত তিন বছরে সর্বোচ্চ ২৩.৮৪ শতাংশ বার্ষিক রিটার্ন দিয়েছে। এর পরেই রয়েছে JM Value Fund, যার রিটার্ন ২৩.৩৪ শতাংশ। এছাড়াও Quant Value Fund ২২.৯৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়ে শীর্ষ তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
Axis Value Fund, Nippon India Value Fund এবং ICICI Prudential Value Fund-ও ২১ শতাংশের বেশি বার্ষিক রিটার্ন দিয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের কাছে আকর্ষণীয়।

অতীতের রিটার্ন ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা নয়:
তবে মনে রাখা জরুরি, অতীতের রিটার্ন কোনোভাবেই ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয় না। একটি স্কিম অতীতে যত ভালোই পারফর্ম করুক না কেন, তা ভবিষ্যতেও একইভাবে চলবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। শেয়ার বাজারের স্বভাবই অনিশ্চিত এবং বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণে ফলাফল বদলাতে পারে।

বিনিয়োগের আগে কী কী বিষয় বিবেচনা করা জরুরি?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু অতীতের রিটার্ন দেখে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। এর পাশাপাশি আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা প্রয়োজন—
1. ফান্ড হাউসের সুনাম – যে কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করছে, তাদের বাজারে সুনাম ও অভিজ্ঞতা কেমন তা যাচাই করা জরুরি।
2. স্কিমের ধরন – ফান্ডটি অ্যাকটিভ (Active) নাকি প্যাসিভ (Passive) ম্যানেজমেন্টে চলছে তা বোঝা দরকার।
3. ফান্ড ম্যানেজারের অভিজ্ঞতা – অ্যাকটিভ স্কিমের ক্ষেত্রে, ফান্ড ম্যানেজারের অতীত রেকর্ড এবং তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
4. ম্যাক্রো-ইকোনমিক পরিস্থিতি – দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থা, সুদের হার, মুদ্রাস্ফীতি, এবং বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি রিটার্নে প্রভাব ফেলতে পারে।
5. বিনিয়োগের লক্ষ্য ও সময়সীমা – বিনিয়োগকারীকে নিজের আর্থিক লক্ষ্য এবং কতদিনের জন্য বিনিয়োগ করবেন তা স্পষ্টভাবে ঠিক করতে হবে।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ:
অর্থনৈতিক পরামর্শদাতারা বলছেন, ভ্যালু ফান্ডে বিনিয়োগ দীর্ঘমেয়াদে ভালো রিটার্ন দিতে পারে, কারণ এটি মূলত বাজারে অবমূল্যায়িত কিন্তু সম্ভাবনাময় শেয়ারে বিনিয়োগ করে। তবে, এর জন্য ধৈর্য ও দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি থাকা জরুরি। বাজারের ওঠানামার সময় অস্থির হয়ে সিদ্ধান্ত নিলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়াও, যেকোনো স্কিমে বিনিয়োগের আগে একটি ডাইভার্সিফায়েড পোর্টফোলিও রাখা ভালো, যাতে ঝুঁকি কমানো যায়। অর্থাৎ, সমস্ত অর্থ এক ধরনের ফান্ডে বিনিয়োগ না করে, বিভিন্ন ক্যাটাগরি যেমন লার্জ-ক্যাপ, মিড-ক্যাপ, ব্যালান্সড ফান্ড ইত্যাদিতে ভাগ করে বিনিয়োগ করা বুদ্ধিমানের কাজ।

গত তিন বছরে HSBC Value Fund, JM Value Fund, Quant Value Fund সহ বেশ কিছু ভ্যালু মিউচুয়াল ফান্ড ২০% এর বেশি বার্ষিক রিটার্ন দিয়েছে, যা যে কোনো বিনিয়োগকারীর জন্য আকর্ষণীয়। তবে, বিনিয়োগের আগে বাজার পরিস্থিতি, স্কিমের বৈশিষ্ট্য, ফান্ড হাউসের সুনাম, এবং নিজের আর্থিক লক্ষ্য ও ঝুঁকি গ্রহণের ক্ষমতা বিবেচনা করা আবশ্যক।