বাঙালি প্রধান বেঙ্গালুরুতে সংকটে পেয়িং গেস্ট বাণিজ্য, রুজির টানাটানিতে হাজারো পরিবার

Bengaluru PG Crisis: দক্ষিণ ভারতের শহর বেঙ্গালুরু, যা এক সময় ছিল দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রাণকেন্দ্র, আজ সেখানেই গভীর সংকটে পড়েছে পেয়িং গেস্ট (PG) ব্যবসা। বিশেষ…

Bengaluru PG Crisis Hits Bengali Families Hard: Livelihoods at Risk Amid Crackdowns and Costs

Bengaluru PG Crisis: দক্ষিণ ভারতের শহর বেঙ্গালুরু, যা এক সময় ছিল দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের প্রাণকেন্দ্র, আজ সেখানেই গভীর সংকটে পড়েছে পেয়িং গেস্ট (PG) ব্যবসা। বিশেষ করে বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এই সংকট আরও প্রকট। বহু বাঙালি পরিবার, যাঁরা PG ব্যবসার মাধ্যমে রুজি-রুটির ব্যবস্থা করেছিলেন, তাঁরা আজ চরম অনিশ্চয়তার মুখে।

ধুঁকছে PG, ধাক্কা খাচ্ছে রুটি-রুজি
মারাঠাহল্লি, হেব্বাল, সারজাপুর, হোয়াইটফিল্ড—এইসব এলাকায় বহু বাঙালি পরিবার বিগত এক দশকে PG ব্যবসা গড়ে তুলেছিলেন। প্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত হাজারো তরুণ-তরুণী, ছাত্রছাত্রীরাই ছিলেন তাঁদের প্রধান ভাড়াটে। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালেও, ২০২৫ সালে আবার নতুন করে ভেঙে পড়েছে সেই ব্যবস্থা। Deccan Herald-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, PG ব্যবসায় গড়ে ২৫% আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। এর জেরে একাধিক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক মালিক তাঁদের ঘর ফাঁকা পড়ে থাকতে দেখে হতাশ হয়ে পড়েছেন।

   

IT ছাঁটাই, কঠোর নিয়ম এবং জলের মতো খরচে বিপর্যয়
বেঙ্গালুরুর তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ব্যাপক ছাঁটাই, নাগরিক সংস্থা BBMP-র কঠোর নিয়ম, এবং জল, বিদ্যুৎ, পরিষেবা খরচ বেড়ে যাওয়ায় PG চালানো কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাঁদের একাধিক শাখা আছে, তাঁরা কোনওভাবে টিকে থাকলেও, একক মালিকানাধীন PG-গুলির অবস্থা খুবই খারাপ। শহরের নানা প্রান্তে প্রতিটি এলাকায় কমপক্ষে দু’টি PG বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন PG ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অরুণ কুমার ডি টি।

PG-তে খুন, তারপরেই কড়া অভিযান
২০২৪ সালের আগস্টে এক PG-তে খুনের ঘটনা বেঙ্গালুরু শহরকে নাড়িয়ে দেয়। এরপর BBMP ও পুলিশ একযোগে অভিযান শুরু করে। শুধু মহাদেবপুরা এলাকাতেই প্রায় ১০০টিরও বেশি PG বন্ধ করে দেওয়া হয়। অভিযোগ—বেশিরভাগেরই বৈধ ট্রেড লাইসেন্স ছিল না, সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছিল না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, বহু বেঙ্গালুরুর গলিপথে গড়ে ওঠা PG হোস্টেল অবৈধ ঘোষণা করে সিল করে দেওয়া হয়। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে—৪০ ফুট চওড়া রাস্তার কম এলাকায় PG চালানো যাবে না, যা অনেক এলাকাতেই কার্যত অসম্ভব।

“চলবে না তো বন্ধ করো”, বাস্তব বলছে—বাঙালির ঘর বন্ধ
বাঙালি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে বহু PG তৈরি হয়েছিল বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই। অনেকেই ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাট বা বাড়িকে PG-তে রূপান্তর করেছিলেন। এখন সেই সব বাড়ি তালাবন্ধ। সাইনবোর্ডে ধুলো, বারান্দায় ঝুলছে তালা। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার উপর নির্ভর করতেন, তাঁদের রোজগার সম্পূর্ণ থমকে গেছে।

Advertisements

একটুখানি আশার আলো? শিথিলতার পথে BBMP
PG মালিকদের লাগাতার দাবির পর BBMP কিছু নিয়ম শিথিল করার কথা ভাবছে। বিশেষ করে ৪০ ফুট রাস্তায় PG চালানোর নিয়ম বদলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে বাস্তবে এখনও রেজিস্টার্ড PG-র সংখ্যা ২,৫০০-এর মধ্যেই আটকে আছে, যদিও শহরে প্রকৃত সংখ্যা বহু গুণ বেশি।

তারুণ্যের স্বপ্ন আজ আশ্রয়হীন
PG ছিল একসময় তরুণ প্রজন্মের বেঙ্গালুরু-প্রবেশের প্রথম ধাপ। আজ প্রযুক্তি কর্মী, স্টার্টআপ কর্মী, নতুন গ্র্যাজুয়েটরা সস্তায় থাকার জায়গা খুঁজে হন্যে হয়ে বেড়াচ্ছেন। শহরের ফ্ল্যাট ভাড়ার দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে PG-র পতন শুধু একটি বাণিজ্যিক সমস্যাই নয়, এটি সামাজিক সংকটেরও ইঙ্গিত।

PG ব্যবসার সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে হাজারো বাঙালির জীবনযুদ্ধ
বেঙ্গালুরুর PG ব্যবসা শুধুমাত্র আবাসনের প্রশ্ন নয়—এটি বহু প্রবাসী বাঙালির জীবনধারণের মাধ্যম। সেই রোজগারের পথ যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে বাঙালি সমাজের এক বিশাল অংশ কর্মহীন, আশ্রয়হীন এবং দিশাহীন হয়ে পড়বে। এখন দেখার, BBMP এই সংকটের বাস্তব রূপ বুঝে কেমন পদক্ষেপ নেয়।