চা শিল্পে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে মমতার দিল্লি অভিযানের হুঁশিয়ারি

Mamata Banerjee’s Big Move: 20% Bonus for Tea Garden Staff

শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত শিল্প সম্মেলনে চা বাগান সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee )। সোমবার দীনবন্ধু মঞ্চে আয়োজিত এই সম্মেলনে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজ্য চা বাগানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদাসীন থাকতে পারে না। তিনি রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটককে নির্দেশ দিয়েছেন, দিল্লিতে গিয়ে টি বোর্ড ঘেরাও করতে হবে। সেই সঙ্গে মেয়র গৌতম দেব ও জিটিএ প্রধান অনীত থাপাকেও প্রতিনিধি দলে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

Advertisements

এদিনের শিল্প সম্মেলনে চা শিল্পের নানান সমস্যা উঠে আসে। জলপাইগুড়ি স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয় গোপাল চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে সরাসরি টি বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। তিনি বলেন, “গত বছর ৩০ নভেম্বর টি বোর্ড নতুন চা পাতা তোলায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল, যা রাজ্য সরকার পরে খারিজ করে দেয়। এবারও একই রকম সিদ্ধান্ত নিয়ে টি বোর্ড চক্রান্ত করছে। এর ফলে ছোট চাষিরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”

এই বক্তব্য শুনেই ক্ষুব্ধ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এসব একদম মেনে নেওয়া যাবে না। কেন্দ্রীয় সরকার চা বাগানের বিষয়ে সম্পূর্ণ ভোটমুখী রাজনীতি করছে। ভোটের আগে বড় বড় প্রতিশ্রুতি, তারপর সব বন্ধ করে দেওয়া – এটা আর চলতে দেওয়া যাবে না। আমরা চা চাষিদের পাশে আছি। চা শিল্প বাংলার গর্ব, এর সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষের রুটি-রুজি জড়িত। রাজ্য সরকার এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে চুপ করে থাকবে না।”

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক দিল্লি গিয়ে টি বোর্ড ঘেরাও করবেন। তাঁর সঙ্গে মেয়র গৌতম দেব ও জিটিএ প্রধান অনীত থাপা থাকবেন। চা বাগান মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিদেরও ওই দলে রাখতে হবে। কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে জানতে হবে, তারা আদৌ চা শিল্পকে বাঁচাতে চায় কিনা।”

তিনি নেপাল থেকে চা এসে দার্জিলিং চায়ের বদনাম করার বিষয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মমতা বলেন, “আমাদের দার্জিলিং চায়ের বিশ্বব্যাপী নাম আছে। অথচ এখন নেপালের নিম্নমানের চা ঢুকে তার বদনাম করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। আমরা আরও কড়া ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত।”

Advertisements

এই সম্মেলনে উপস্থিত বিভিন্ন চা বাগান মালিক, ছোট চা চাষি ও ব্যবসায়ীরাও তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। কম উৎপাদন, নিম্নমূল্য, পাতা তোলার নিষেধাজ্ঞা, শ্রমিকদের বেতন সমস্যা, কেন্দ্রীয় অনুদানের ঘাটতি – নানা দিক উঠে আসে আলোচনায়। চা শিল্পের হাল ফেরাতে কেন্দ্রীয় সরকারের সক্রিয় হস্তক্ষেপের দাবিও ওঠে।

মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বার্তা, “চা শুধু অর্থনীতি নয়, উত্তরবঙ্গের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য এবং জীবিকা। রাজ্য সরকার প্রয়োজনে নিজস্ব নীতি তৈরি করে এই শিল্পকে রক্ষা করবে। কেন্দ্রের অবহেলা আর বরদাস্ত নয়।”

মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর থেকেই চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকল মহলে আশার সঞ্চার হয়েছে। তাঁদের আশা, রাজ্য সরকারের সক্রিয় ভূমিকার ফলে চা শিল্প ফের জোর পাবে, এবং কেন্দ্রও বাধ্য হবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে।