পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুরে নতুন শিল্প স্থাপনের উদ্যোগে এগিয়ে এল পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উৎপাদক সংস্থা বিসিএল ইন্ডাস্ট্রিজ। সংস্থাটি সেখানে একটি বায়োএনার্জি প্ল্যান্ট (Bioenergy Plant) স্থাপন করতে চলেছে, যার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা। প্রকল্পটির লক্ষ্য শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, গোটা দেশের পরিবেশগত উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা।
পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রাপ্ত এবং কাজ শুরু
বিসিএল ইন্ডাস্ট্রিজ ইতিমধ্যেই এই প্রকল্পের জন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র পেয়েছে। ৭৫ কিলো লিটার প্রতিদিন (KLPD) উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্ল্যান্টটি খড়্গপুরে স্থাপিত হবে। সংস্থার মতে, প্রকল্পটি সম্পূর্ণ করতে সময় লাগবে ২০২৬ সাল পর্যন্ত।
ইথানল উৎপাদনে অগ্রগামী ভূমিকা
এই প্ল্যান্টে প্রধানত ইথানল উৎপাদন করা হবে, যা পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি হিসেবে পরিচিত। ইথানল পেট্রোলের সাথে মিশ্রিত করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হলে তা কার্বন নির্গমন কমাতে বিশেষভাবে কার্যকরী। দেশের জ্বালানি ক্ষেত্রে আরও টেকসই বিকল্প প্রদানের লক্ষ্যেই বিসিএল ইন্ডাস্ট্রিজ এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের প্রসার
এই প্রকল্পের মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের শিল্প ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে চলেছে। খড়্গপুরের মতো অঞ্চলে শিল্প স্থাপন কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রকল্পের কাজ শুরু হলে বিপুল সংখ্যক স্থানীয় কর্মীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
অন্য রাজ্যেও বিস্তৃত হচ্ছে কাজ
পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও পাঞ্জাব ও হরিয়ানাতেও একই ধরনের বায়োএনার্জি প্ল্যান্ট স্থাপন করছে বিসিএল ইন্ডাস্ট্রিজ। এই সংস্থা পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনে ইতিমধ্যেই দেশের অন্যতম প্রধান সংস্থা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।
𝗕𝗖𝗟 𝗜𝗻𝗱𝘂𝘀𝘁𝗿𝗶𝗲𝘀 𝘁𝗼 𝗶𝗻𝘃𝗲𝘀𝘁 ₹𝟭𝟱𝟬 𝗰𝗿𝗼𝗿𝗲 𝘁𝗼 𝘀𝗲𝘁 𝘂𝗽 𝗯𝗶𝗼𝗲𝗻𝗲𝗿𝗴𝘆 𝗽𝗹𝗮𝗻𝘁 𝗶𝗻 𝗕𝗲𝗻𝗴𝗮𝗹.
Renewable energy player BCL Industries is setting up a bioenergy plant in West Bengal with an investment of ₹150 crore. The company has already… pic.twitter.com/uOPle0Te0J
— The West Bengal Index (@TheBengalIndex) December 18, 2024
ইথানল: ভবিষ্যতের টেকসই জ্বালানি
ইথানল এমন এক প্রকার জৈব জ্বালানি, যা ভুট্টা, আখের মতো কৃষিজাত পণ্য থেকে তৈরি করা হয়। এটি পেট্রোলের সাথে মিশ্রিত হলে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা দূষণ কমায় এবং পরিবেশ বান্ধব। বর্তমান সময়ে ইথানল মিশ্রিত জ্বালানি ব্যবহারে জোর দিচ্ছে ভারত সরকারও। বিসিএল ইন্ডাস্ট্রিজের এই উদ্যোগ এই প্রচেষ্টায় আরও গতি আনবে।
উন্নত প্রযুক্তি ও পরিবেশ সচেতনতা
বায়োএনার্জি প্ল্যান্ট স্থাপনে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। সংস্থা দাবি করেছে, এই প্রকল্প সম্পূর্ণ পরিবেশ-সুরক্ষিত পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে। ইথানল উৎপাদন ছাড়াও, এই প্রকল্পে কার্বন নির্গমন হ্রাসের বিষয়েও বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
রাজ্যের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব
খড়্গপুরে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা শুধুমাত্র পরিবেশগত উন্নতিতেই নয়, রাজ্যের অর্থনীতিতেও বড় প্রভাব ফেলবে। শিল্পের প্রসার ঘটলে স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শিল্প স্থাপনে সরকারের সমর্থন
রাজ্য সরকার শিল্পের প্রসারে বিশেষ জোর দিচ্ছে। খড়্গপুরের এই প্রকল্পে সরকারের সক্রিয় সহযোগিতা থাকলে তা রাজ্যের শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে আরও তরান্বিত করবে।
বিসিএল ইন্ডাস্ট্রিজের এই বায়োএনার্জি প্রকল্প শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের জন্যই নয়, গোটা দেশের পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে একটি বড় পদক্ষেপ। ইথানল উৎপাদনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে সংস্থা যেমন পরিবেশ রক্ষায় ভূমিকা রাখতে চায়, তেমনই রাজ্যের শিল্পায়নের গতিও বাড়াতে চায়। ২০২৬ সালের মধ্যে এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে পশ্চিমবঙ্গ শিল্প মানচিত্রে আরও একটি উল্লেখযোগ্য নাম সংযোজন হবে।