২৪ ও ২৫ মার্চ ব্যাঙ্ক পরিষেবা কি বন্ধ? জানুন বিশদে

আর্থিক বছরের শেষের মুখে ইউনাইটেড ফোরাম অফ ব্যাঙ্ক ইউনিয়নস (UFBU) ২৪ ও ২৫ মার্চের জন্য পরিকল্পিত দেশব্যাপী ব্যাঙ্ক ধর্মঘট (Bank Strike) স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।…

bank-strike-march-2025-banks-open-closed-march-24

আর্থিক বছরের শেষের মুখে ইউনাইটেড ফোরাম অফ ব্যাঙ্ক ইউনিয়নস (UFBU) ২৪ ও ২৫ মার্চের জন্য পরিকল্পিত দেশব্যাপী ব্যাঙ্ক ধর্মঘট (Bank Strike) স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত পাঁচ দিনের কাজের সপ্তাহ সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইতিবাচক আলোচনার পর এসেছে।

UFBU-এর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য অল ইন্ডিয়া ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (AIBEA) গত সপ্তাহান্তে একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে যে, গত সপ্তাহে একটি সফল সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। UFBU হল নয়টি ব্যাঙ্ক ইউনিয়নের একটি জোট, যারা ব্যাঙ্ক কর্মীদের অধিকার ও দাবি নিয়ে কাজ করে।

   

আলোচনায় ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কস অ্যাসোসিয়েশন (IBA), কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক পরিষেবা বিভাগ (DFS) এবং কেন্দ্রীয় শ্রম কমিশনার (CLC) এর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ইউনিয়নের দাবিগুলির সমাধানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। ব্যবসায়িক সংবাদপত্র বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচনায় পাঁচ দিনের কাজের সপ্তাহের প্রস্তাবটি গুরুত্ব পেয়েছে।

Advertisements

DFS-এর একজন যুগ্ম সচিব ভিডিও কলের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন এবং অর্থমন্ত্রী ও DFS সচিবের মধ্যে পাঁচ দিনের কাজের সপ্তাহ নিয়ে আলোচনার বিবরণ জানিয়েছেন। এছাড়াও, IBA নিয়োগ, পারফরম্যান্স-লিঙ্কড ইনসেনটিভ (PLI) এবং ইউনিয়নের অন্যান্য উদ্বেগ নিয়ে আরও আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে। এই ইতিবাচক অগ্রগতির পর ধর্মঘট অন্তত এক থেকে দুই মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। AIBEA জানিয়েছে, “আমাদের ইউনিটগুলিকে জানানো হচ্ছে যে ২৪ ও ২৫ মার্চের ধর্মঘট স্থগিত করা হয়েছে।”

পরবর্তী বৈঠকটি এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে নির্ধারিত হয়েছে। এদিকে, CLC আশ্বাস দিয়েছেন যে তিনি পাঁচ দিনের কাজের সপ্তাহ সহ মূল দাবিগুলির আলোচনা তদারকি করবেন।

আজ ব্যাঙ্ক খোলা না বন্ধ?
ধর্মঘট স্থগিত হওয়ায় ২৪ মার্চ ২০২৫-এ দেশের ব্যাঙ্কগুলি স্বাভাবিকভাবে কাজ করবে। সমস্ত শারীরিক শাখা জনসাধারণের জন্য খোলা থাকবে। তবে, আগামী সপ্তাহে আরও ব্যাঙ্ক ছুটি রয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরে ২৭ ও ২৮ মার্চ শব-ই-কদর এবং জুমাত-উল-বিদার জন্য ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকবে। এছাড়া, ৩১ মার্চ রমজান-ইদ (ইদ-উল-ফিতর) উদযাপনের জন্য হিমাচল প্রদেশ ও মিজোরাম ছাড়া সারা দেশে ব্যাঙ্ক ছুটি থাকবে।

ইউনিয়নগুলি সব স্তরে পর্যাপ্ত নিয়োগ, ব্যাঙ্ক কর্মীদের উপর হামলা থেকে সুরক্ষার জন্য কঠোর আইন এবং জাতীয় পেনশন সিস্টেমে (NPS) সক্রিয়-চয়েস ফান্ডের সম্প্রসারণের উপর জোর দিয়েছে। এছাড়াও, তারা DFS-এর সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স পর্যালোচনা নির্দেশিকা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে।

ধর্মঘট স্থগিত হলেও, ব্যাঙ্ক কর্মীরা তাদের দাবিতে অটল রয়েছে। ন্যাশনাল কনফেডারেশন অফ ব্যাঙ্ক এমপ্লয়িজ (NCBE)-এর সাধারণ সম্পাদক এল চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, কর্মী সংকট, বোর্ডে কর্মী প্রতিনিধিত্ব এবং কিছু পারফরম্যান্স-সংযুক্ত নীতি প্রত্যাহার গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগ। ইউনিয়নগুলি ডিএফএস-এর অতিরিক্ত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করেছে, যা তাদের মতে ব্যাঙ্ক বোর্ডের স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষুণ্ণ করে।

অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি হল গ্র্যাচুইটি আইন সংশোধন। ইউনিয়নগুলি গ্র্যাচুইটির সীমা ২৫ লক্ষ টাকায় উন্নীত করা এবং গ্র্যাচুইটি পরিশোধে কর ছাড়ের দাবি জানিয়েছে।

ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলি আশা করছে যে আগামী আলোচনায় তাদের দাবিগুলি পূরণের দিকে আরও অগ্রগতি হবে। পাঁচ দিনের কাজের সপ্তাহ বাস্তবায়নের প্রস্তাবটি ব্যাঙ্ক কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রত্যাশা তৈরি করেছে। এটি কার্যকর হলে কর্মীদের কাজের চাপ কমবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে বলে তারা মনে করেন।

এছাড়াও, নিয়োগ বাড়ানোর দাবি পূরণ হলে ব্যাঙ্কগুলিতে কর্মী সংকট কমবে এবং গ্রাহক পরিষেবার মান উন্নত হবে। ইউনিয়ন নেতারা জানিয়েছেন, তারা সরকার ও ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ইতিবাচক পদক্ষেপ আশা করছেন।

এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকটি ব্যাঙ্ক কর্মীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে। সিএলসি-র তদারকিতে আলোচনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে দীর্ঘদিনের দাবিগুলির সমাধান সম্ভব বলে ইউনিয়নগুলি আশাবাদী। তবে, যদি আলোচনায় প্রত্যাশা পূরণ না হয়, তবে ভবিষ্যতে আবার ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হতে পারে।

আপাতত, ২৪ মার্চে ব্যাঙ্ক খোলা থাকায় গ্রাহকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তবে, ব্যাঙ্ক কর্মীদের দাবি ও সরকারের প্রতিক্রিয়ার দিকে সবার নজর রয়েছে।