প্রত্যাশা মতোই আজ ভারতের বাজারে লঞ্চ হল Tata Harrier EV। এই ইলেকট্রিক গাড়িটি টাটা মোটরসের (Tata Motors) ফ্ল্যাগশিপ মডেল হিসাবে বাজারে এসেছে। মডেলটির প্রারম্ভিক এক্স-শোরুম মূল্য ২১.৪৯ লক্ষ টাকা ধার্য করা হয়েছে। গাড়িটি টাটা মোটরস ইলেকট্রিক মোবিলিটি বিভাগ থেকে আসা সর্বাধুনিক মডেল এবং নতুন acti.ev plus আর্কিটেকচারের উপর ভিত্তি করে নির্মিত। আবার Harrier EV মডেলটি টাটা মোটরসের প্রথম বৈদ্যুতিক গাড়ি যেটি অল-হুইল ড্রাইভ (AWD) প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে। এটি সরাসরি Mahindra XUV.e9, BYD Atto 3 এবং Hyundai Ioniq 5-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সামিল হয়েছে।
ভারতে কারখানা নয়, শুধুই শোরুম খোলার আগ্রহ Tesla-র: ভারী শিল্পমন্ত্রী
Tata Harrier EV – ভ্যারিয়েন্ট ও রঙের বৈচিত্র্য
Tata Harrier EV তিনটি ট্রিমে বাজারে এসেছে – অ্যাডভেঞ্চার, ফিয়ারলেস এবং এমপাওয়ার্ড। এই গাড়ির চারটি রঙের বিকল্প দেওয়া হয়েছে – নৈনিতাল নকটার্নাল, এমপাওয়ার্ড অক্সাইড, পিওর গ্রে ও প্রিস্টিন হোয়াইট। এছাড়াও একটি বিশেষ কালো রঙের স্টেলথ সংস্করণও উপলব্ধ। আগামী ২ জুলাই থেকে এই গাড়ির বুকিং শুরু হবে।
ডিজাইন:
গাড়িটির ডিজাইনে মূল গঠন ও সিলুয়েট বজায় রাখা হয়েছে, তবে বৈদ্যুতিক গাড়ির কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য যোগ হয়েছে। সামনের দিকে পুরোপুরি বন্ধ গ্রিল রাখা হয়েছে যাতে এর এরোডায়নামিক দক্ষতা বাড়ে। নতুন ডিজাইনের ফ্রন্ট বাম্পারে সিলভার ফিনিশ স্ল্যাট রয়েছে যা ব্যাটারি ও মোটরের মতো গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলিকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। DRL গুলিকে এবার একটি কানেক্টেড স্ট্রিপে যুক্ত করা হয়েছে।
গাড়ির সাইড প্রোফাইল মূলত ডিজেল হারিয়ারের মতোই, তবে ১৮ ইঞ্চি নতুন ডিজাইনের অ্যারো স্টাইল অ্যালয় হুইল ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এখানে ফ্লাশ-স্টাইল ডোর হ্যান্ডেল অনুপস্থিত যা আগে টাটা কার্ভ এবং নতুন আলট্রোজে দেখা গিয়েছিল। পিছনের দিকেও ডিজাইন অনেকটাই পূর্বের মতো, তবে রিয়ার বাম্পারে হালকা পরিবর্তন করা হয়েছে।
কেবিন:
Harrier EV-এর অভ্যন্তরেও আগের হারিয়ারের ছোঁয়া বজায় রয়েছে। তবে বিভিন্ন ট্রিম অনুযায়ী কেবিনে আলাদা ফিনিশ দেওয়া হয়েছে। এই গাড়িতে একটি বিশাল ১৪.৫ ইঞ্চির স্যামসাং নিও QLED টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম এবং ১০.২৫ ইঞ্চির ফুল ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার রয়েছে। ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেমে ওয়্যারলেস অ্যান্ড্রয়েড অটো ও অ্যাপল কারপ্লে সাপোর্ট রয়েছে। এছাড়াও ম্যাপ প্রজেকশনের সুবিধা দেয় ক্লাস্টারটি। গাড়ির ড্রাইভিং মোড সিলেকশনের জন্য একটি নতুন রোটারি ডায়াল দেওয়া হয়েছে, যেটিতে ছয়টি আলাদা টেরেন মোড রয়েছে – নরমাল, স্যান্ড, মাড রাটস, স্নো/গ্রাস, রক ক্রল ও কাস্টম।
স্পেসিফিকেশন:
টাটা হ্য়ারিয়ার ইভি-তে নতুন acti.ev plus আর্কিটেকচার ব্যবহার করা হয়েছে যা এর প্রধান বৈশিষ্ট্য – AWD ক্ষমতা নিয়ে আসে। এই গাড়িটি বর্তমানে টাটা মোটরসের একমাত্র মডেল যেটি AWD সাপোর্ট করে। এর আগে Safari, Hexa এবং Aria-তে 4X4 ক্ষমতা দেখা গিয়েছিল।
ছোট গাড়িকে বাঁচান! কাতর আর্জি নিয়ে সরকারের দ্বারস্থ Alto নির্মাতা
হ্যারিয়ার ইভি দুটি ব্যাটারি প্যাক ও দুটি মোটর কনফিগারেশনে আসছে। এর নিম্নতর ট্রিমে ৬৫ কিলোওয়াট আওয়ার ব্যাটারি প্যাক থাকছে এবং উচ্চতর ট্রিমে ৭৫ কিলোওয়াট আওয়ার ব্যাটারি প্যাক দেওয়া হয়েছে। ৭৫ কিলোওয়াট ব্যাটারির সঙ্গে দুটি মোটর কনফিগারেশন – RWD ও QWD দেওয়া হয়েছে। QWD ভার্সন ৩৯১ বিএইচপি শক্তি ও ৫০৪ এনএম টর্ক উৎপাদন করে। RWD সংস্করণের শক্তি এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে RWD সংস্করণের MIDC রেঞ্জ ৬২৭ কিমি, এবং বাস্তব দুনিয়ায় এই রেঞ্জ ৪৮০ থেকে ৫০৫ কিমি হতে পারে বলে দাবি।
প্রসঙ্গত, Tata Harrier EV-এর মাধ্যমে ভারতীয় ইলেকট্রিক SUV বাজারে একটি বড় পদক্ষেপ রাখল টাটা মোটরস। উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং AWD ক্ষমতার সঙ্গে এই গাড়িটি নতুন যুগের সূচনা করছে। ভারতীয় রাস্তায় এই পরিবেশবান্ধব গাড়ি কতটা সাড়া ফেলে, এখন সেটাই দেখার।