মারুতি গ্র্যান্ড ভিটারাকে টক্কর দিতে টাটা রাস্তায় নামাচ্ছে কার্ভ সিএনজি

ভারতীয় গাড়ি নির্মাতা টাটা মোটরস এই বছর তাদের পোর্টফোলিও প্রসারিত করতে এবং নতুন নতুন গাড়ি লঞ্চ করতে ব্যস্ত রয়েছে। গত কয়েকদিনে টাটার একাধিক টেস্ট মিউল…

Tata Curvv CNG Spotted Testing in Pune

ভারতীয় গাড়ি নির্মাতা টাটা মোটরস এই বছর তাদের পোর্টফোলিও প্রসারিত করতে এবং নতুন নতুন গাড়ি লঞ্চ করতে ব্যস্ত রয়েছে। গত কয়েকদিনে টাটার একাধিক টেস্ট মিউল (পরীক্ষামূলক গাড়ি) ভারতের বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষার সময় ধরা পড়েছে। এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন হলো টাটা কার্ভ সিএনজি (Tata Curvv CNG), যা সম্প্রতি পুনের স্বারগেট এলাকায় পরীক্ষার সময় দেখা গেছে। এই টেস্ট মিউলটি পুরোপুরি ক্যামোফ্লেজে মোড়া ছিল, তবে এটি আমাদের টাটা কার্ভ সিএনজি-র সম্ভাব্য চেহারা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা দিয়েছে। এই গাড়িটি ভারতীয় বাজারে মারুতি সুজুকি গ্র্যান্ড ভিটারা, হুন্ডাই ক্রেটা, কিয়া সেলটোস, স্কোডা কুশাক, ভক্সওয়াগেন টাইগুন এবং এমজি অ্যাস্টরের মতো গাড়ির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

   

টাটার বৈচিত্র্যময় পোর্টফোলিও

টাটা মোটরস বর্তমানে ভারতের অন্যতম গাড়ি নির্মাতা হিসেবে পরিচিত, যারা পেট্রোল, ডিজেল, ইলেকট্রিক এবং সিএনজি—সব ধরনের জ্বালানি বিকল্পে গাড়ি উৎপাদন করে। টাটা কার্ভ সিএনজি-র আগমনের মাধ্যমে তাদের পোর্টফোলিও আরও সমৃদ্ধ হতে চলেছে। বর্তমানে টাটা কার্ভ পেট্রোল, ডিজেল এবং ইলেকট্রিক ভার্সনে উপলব্ধ। এই গাড়ির দাম শুরু হয় ১০ লক্ষ টাকা থেকে (এক্স-শোরুম)। সিএনজি ভার্সনের মাধ্যমে টাটা আরও বেশি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছতে চাইছে, বিশেষ করে যাঁরা জ্বালানি সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব গাড়ির খোঁজে রয়েছেন।

পুনে টেস্টিং: কী দেখা গেল?

পুনের স্বারগেটে টাটা কার্ভ সিএনজি-র টেস্ট মিউলটি দেখা গেছে সম্পূর্ণ ক্যামোফ্লেজে মোড়া অবস্থায়। এই গাড়ির বাইরের চেহারায় তেমন কোনো বড় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি। তবে এটি সিএনজি পাওয়ারট্রেনে চলবে বলে গাড়ির বিভিন্ন অংশে ‘আইসিএনজি’ ব্যাজ দেখা যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে, এই টেস্ট মিউলটির পিছনে কোনো নির্গমন পরীক্ষার সরঞ্জাম ছিল না। এর থেকে অনুমান করা যায় যে, টাটা এই মুহূর্তে গাড়ির অভ্যন্তরীণ উপাদানগুলোর পরীক্ষা করছে। অভ্যন্তরীণ ডিজাইনেও কোনো পরিবর্তন হবে না বলে মনে করা হচ্ছে। এটি টাটা কার্ভ-এর বর্তমান মডেলের মতোই থাকবে।

সিএনজি পাওয়ারট্রেনের সম্ভাবনা

টাটা কার্ভ সিএনজি-তে সম্ভবত ডুয়াল-সিলিন্ডার সিএনজি ট্যাঙ্ক ব্যবহার করা হবে, যা টাটা ন েক্সন আইসিএনজি-তে দেখা গেছে। এই গাড়িতে ১.২ লিটারের টার্বোচার্জড ইঞ্জিন থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। টাটা নেক্সন আইসিএনজি-র মতো এই ইঞ্জিন ১০০ পিএস শক্তি এবং ১৭০ এনএম টর্ক উৎপন্ন করতে পারে। ট্রান্সমিশন হিসেবে ৬-স্পিড ম্যানুয়াল গিয়ারবক্স দেওয়া হতে পারে। এই সিএনজি সিস্টেমে উন্নত নিরাপত্তা ফিচার যেমন লিক সনাক্তকরণ, আগুন প্রতিরোধক যন্ত্র, তাপীয় ঘটনা সুরক্ষা এবং পিছনের প্রভাব সুরক্ষার মতো সুবিধা থাকবে। এছাড়া, গাড়িটি সরাসরি সিএনজি মোডে চালু করা যাবে এবং পেট্রোল ও সিএনজি মোডের মধ্যে সহজে সুইচ করার সুবিধা থাকবে।

Advertisements

লঞ্চের সম্ভাবনা

টাটা কার্ভ সিএনজি ভারতীয় বাজারে এই বছরের উৎসবের মরসুমে, সম্ভবত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে লঞ্চ হতে পারে। এই সময়টি ভারতে গাড়ি কেনার জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। দামের ক্ষেত্রে, সিএনজি ভার্সনের জন্য পেট্রোল ও ডিজেল মডেলের তুলনায় প্রায় ১ লক্ষ টাকা বেশি হতে পারে। এর ফলে টাটা কার্ভ সিএনজি-র দাম ১১ লক্ষ টাকা থেকে শুরু হতে পারে (এক্স-শোরুম)।

বাজারে প্রতিযোগিতা

টাটা কার্ভ বর্তমানে তার আকর্ষণীয় কুপে-এসইউ ভি ডিজাইন এবং বৈচিত্র্যময় পাওয়ারট্রেন অপশনের জন্য পরিচিত। সিএনজি ভার্সনের আগমনের সঙ্গে এটি মারুতি সুজুকি গ্র্যান্ড ভিটারার মতো গাড়ির জন্য শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠবে। গ্র্যান্ড ভিটারা তার হাইব্রিড ইঞ্জিন এবং জ্বালানি দক্ষতার জন্য জনপ্রিয়। তবে টাটা কার্ভ সিএনজি তার সাশ্রয়ী মূল্য এবং সিএনজি প্রযুক্তির মাধ্যমে গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে পারে। এছাড়া, হুন্ডাই ক্রেটা, কিয়া সেলটোস এবং অন্যান্য প্রতিযোগীদের সঙ্গেও এটি সমান তালে লড়বে।

টাটা কার্ভ সিএনজি-র আগমন ভারতীয় বাজারে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। পেট্রোল, ডিজেল এবং ইলেকট্রিকের পর সিএনজি বিকল্পের মাধ্যমে টাটা আরও বেশি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছতে সক্ষম হবে। পুনের রাস্তায় এই গাড়ির পরীক্ষা প্রমাণ করে যে, টাটা এই মডেলটি দ্রুত লঞ্চ করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছে। আগামী উৎসবের মরসুমে এই গাড়ির লঞ্চ ভারতীয় গ্রাহকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।