ভারতের আইকনিক মোটরসাইকেল নির্মাতা রয়্যাল এনফিল্ড (Royal Enfield) চলতি আর্থিক বছরের শেষ ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ ২০২৬ সালের জানুয়ারি-মার্চে তাদের প্রথম বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল লঞ্চ করতে প্রস্তুত। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কোম্পানিটি মোটরসাইক্লিংয়ের নীরব যুগে প্রবেস করতে চলেছে। এই ঘোষণা এসেছে আইচার মোটরস লিমিটেডের ত্রৈমাসিক আয়ের পরবর্তী কলের সময়, যেখানে রয়্যাল এনফিল্ডের মূল সংস্থা আইচার মোটরসের প্রধান নির্বাহী বিজি গোবিন্দরাজন জানিয়েছেন, “কোম্পানি ফ্লাইং ফ্লি-এর জন্য বিক্রেতাদের চিহ্নিত করেছে।” বিশ্বের বৃহত্তম মিডলওয়েট মোটরসাইকেল নির্মাতা হিসেবে পরিচিত রয়্যাল এনফিল্ড এই প্রকল্পে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
ফ্লাইং ফ্লি: একটি নতুন উদ্যোগ
‘ফ্লাইং ফ্লি’ রয়্যাল এনফিল্ডের একটি সাব-ব্র্যান্ড, যা শহরকেন্দ্রিক বৈদ্যুতিক গতিশীলতার উপর ফোকাস করছে। এই নামটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত একটি হালকা মোটরসাইকেলের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়, যা যুদ্ধক্ষেত্রে এয়ার-ড্রপ করা যেত। ফ্লাইং ফ্লি মোটরসাইকেলগুলো রেট্রো ডিজাইনের সঙ্গে আধুনিক বৈদ্যুতিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়েছে। এতে গার্ডার ফর্ক সাসপেনশনের মতো ঐতিহ্যবাহী উপাদান থাকলেও, বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য উপযুক্ত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
রয়্যাল এনফিল্ড চেন্নাইয়ের কাছে অবস্থিত তাদের ভাল্লাম ভাদাগল প্ল্যান্টে এই বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল উৎপাদনের জন্য একটি পৃথক অ্যাসেম্বলি লাইন প্রস্তুত করেছে। তবে, পণ্যটির বিতরণ কৌশল এখনও চূড়ান্ত করা হচ্ছে। কোম্পানিটি ফ্লাইং ফ্লি-এর দুটি মডেল নিয়ে কাজ করছে—প্রথমে FF-C6 লঞ্চ হবে, এবং পরবর্তীতে FF-S6 নামে একটি স্ক্র্যাম্বলার-স্টাইলের মডেল বাজারে আনা হবে।
প্রযুক্তিগত সহযোগিতা
ফ্লাইং ফ্লি প্রকল্পে রয়্যাল এনফিল্ড স্পেনের ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাতা স্টার্ক ফিউচারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে, যেখানে কোম্পানিটির ১০.৮% শেয়ার রয়েছে। স্টার্ক ফিউচার ফ্লাইং ফ্লি মোটরসাইকেলের ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে সহায়তা করছে। এছাড়া, চিপসেট সরবরাহের জন্য আমেরিকান প্রযুক্তি জায়ান্ট কোয়ালকম ইনকর্পোরেটেডের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছে রয়্যাল এনফিল্ড। এই প্রকল্পে ২৫০ জনের একটি ডেডিকেটেড টিম কাজ করছে, যারা এই বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলকে বাজারে সফলভাবে উপস্থাপনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে।
গোবিন্দরাজন জানিয়েছেন, “স্টার্ক ফিউচারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক সঠিক পথে এগোচ্ছে, যেমনটি ভলভো এবং আইচার মোটরসের বাণিজ্যিক যানবাহন বিভাগ (VECV) এর মধ্যে সহযোগিতা দেখা যায়। আমাদের যেকোনো অংশীদারিত্ব আমাদের যাত্রায় মূল্য যোগ করবে।” এই সহযোগিতা রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক গতিশীলতার লক্ষ্যকে আরও শক্তিশালী করছে।
আর্থিক পারফরম্যান্স ও বাজার প্রতিক্রিয়া
বুধবার, আইচার মোটরসের শেয়ার বিএসই-তে ০.৪৮% বেড়ে প্রতি শেয়ার ৫,৪৪৬.৯ টাকায় পৌঁছেছে। একই দিনে, বেঞ্চমার্ক সেনসেক্স ০.২২% বৃদ্ধি পেয়ে ৮১,৩৩০.৫৬ পয়েন্টে বন্ধ হয়েছে। এই ইতিবাচক বাজার প্রতিক্রিয়া রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল উদ্যোগের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা প্রতিফলিত করে।
রয়্যাল এনফিল্ডের বৈদ্যুতিক যাত্রা
রয়্যাল এনফিল্ডের ফ্লাইং ফ্লি প্রকল্প কেবল একটি নতুন পণ্য লঞ্চ নয়, বরং কোম্পানির টেকসই গতিশীলতার প্রতি প্রতিশ্রুতির একটি প্রতিফলন। বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেলের বাজার দ্রুত বাড়ছে, এবং রয়্যাল এনফিল্ড তাদের ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে এই সেক্টরে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে চায়। ফ্লাইং ফ্লি মোটরসাইকেলগুলো শহরের রাস্তায় ব্যবহারের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে, যা তরুণ এবং পরিবেশ-সচেতন রাইডারদের কাছে আকর্ষণীয় হবে।
কোম্পানিটি তাদের বিশ্বব্যাপী বাজার সম্প্রসারণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ফ্লাইং ফ্লি মোটরসাইকেলগুলো ভারতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও রপ্তানি করার সম্ভাবনা বিবেচনা করছে। রয়্যাল এনফিল্ডের বর্তমান পোর্টফোলিওতে ক্লাসিক, হান্টার, এবং হিমালয়ানের মতো মডেলগুলো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়। ফ্লাইং ফ্লি এই পোর্টফোলিওতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
রয়্যাল এনফিল্ডের প্রথম বৈদ্যুতিক মোটরসাইকেল ফ্লাইং ফ্লি-এর লঞ্চ ভারতের মোটরসাইক্লিং শিল্পে একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত হতে চলেছে। ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এই সমন্বয় কোম্পানির উদ্ভাবনী দৃষ্টিভঙ্গি এবং টেকসই ভবিষ্যতের প্রতি প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। স্টার্ক ফিউচার এবং কোয়ালকমের মতো শীর্ষ প্রযুক্তি অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা এই প্রকল্পের সাফল্যকে আরও নিশ্চিত করছে। ২০২৬ সালের শুরুতে ফ্লাইং ফ্লি-এর লঞ্চের সঙ্গে রয়্যাল এনফিল্ড মোটরসাইক্লিংয়ের নতুন যুগে প্রবেশ করবে, যা ভারতীয় এবং বিশ্বব্যাপী রাইডারদের জন্য একটি উত্তেজনাপূর্ণ সময়ের সূচনা করবে।