রাস্তায় বেরোলে হেলমেট পরিধান করতেই হবে – টু হুইলারের চালক ও যাত্রীদের জন্য এ নিয়ম বহুকাল ধরেই রয়েছে। মানুষের সুরক্ষার জন্যই এই আইন। কিন্তু আইনকে বুড়ো দেখিয়ে দেদার বাইক ও স্কুটার চালকরা হেলমেট ছাড়াই ঘুরে বেড়াচ্ছে। আইন লঙ্ঘনের পাশাপাশি এটি তাদের নিরাপত্তাকেও প্রশ্নের মুখে ফলছে। পুলিশের পক্ষ থেকে অনেক ধরপাকড় অভিযান চালিয়েও হেলমেট পড়ানো যাচ্ছে না রাইডারদের। তাই এবার অভিনব পদক্ষেপে নিতে চলেছে উত্তরপ্রদেশ সরকার। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে আগামী ১লা সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে রাজ্যজুড়ে শুরু হবে “হেলমেট ছাড়া পেট্রোল নয়” (No Helmet No Fuel) উদ্যোগ। এই অভিযানের আওতায় কোনো বাইক ও স্কুটার আরোহী হেলমেট ছাড়া পেট্রোল পাবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তের মূল উদ্দেশ্য হল হেলমেট ব্যবহারের প্রতি জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির হার কমানো।
৯৫% হেলমেট নকল!
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন টু-হুইলার হেলমেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া-র প্রেসিডেন্ট রাজীব কাপুর। তবে তিনি এক গুরুতর সমস্যার দিকেও ইঙ্গিত করেছেন। তাঁর মতে, বাজারে বিক্রি হওয়া ১১০ টাকার প্রায় ৯৫% হেলমেটই নকল। এগুলোতে বিসিআইএস (BIS) লাইসেন্স থাকলেও বাস্তবে সেগুলি নিম্নমানের এবং সম্পূর্ণ অনিরাপদ। কাপুর জানান, গাজিয়াবাদ, লোনি, দিল্লি-করারি সহ উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের ভুয়ো হেলমেটের বিস্তার ভয়াবহ আকার নিয়েছে। এর ফলে দুর্ঘটনায় হেলমেট থাকলেও আরোহীর জীবন সুরক্ষিত থাকে না।
তিনি আরও বলেন, “বাজারে যখন আসল হেলমেটের চাহিদা অপরিবর্তিত থাকে, তখন ভুয়ো নির্মাতারা সেই সুযোগ নেয়। এই হেলমেটগুলি একটি সামান্য আঘাতেই ভেঙে যায়, ফলে আরোহীর জীবন গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়ে।”
রাজীব কাপুরের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘মিশন সেভ লাইভস ২.০’ (No Helmet No Fuel) ক্যাম্পেইনের তথ্য অনুযায়ী, বাজারে থাকা ১১০ টাকার হেলমেটগুলোর ৯৫%-ই ভুয়ো এবং সেগুলোতে কোনো প্রকার নিরাপত্তা নেই। কপূরের মতে, এই সমস্যার সমাধান করতে হলে কেবল হেলমেট ব্যবহারের ওপর জোর দিলেই হবে না, বরং নকল হেলমেটের সরবরাহ বন্ধ করতে হবে এবং জনসচেতনতা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।
তথ্য অনুযায়ী, দিল্লিতে বিক্রি হওয়া প্রায় ৭০% হেলমেট নকল, যেগুলি প্রথম আঘাতেই ভেঙে যায়। অথচ আসল হেলমেট টেকসই থাকে এবং মাথা সুরক্ষিত রাখে। রাজীব কপূরের প্রস্তাব অনুযায়ী, প্রতিটি বাইকের সঙ্গে দুটি আসল আইএসআই-সার্টিফায়েড হেলমেট দেওয়া বাধ্যতামূলক করা উচিত। এতে গ্রাহকরা সঠিক মানের হেলমেট পাবেন এবং ভুয়ো পণ্যের চাহিদা কমবে।
তিনি আরও দাবি করেছেন যে, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের উচিত মোটর ভেহিকেল রুল ১৩৮এফ কঠোরভাবে কার্যকর করা, যাতে প্রতিটি টু-হুইলার বিক্রির সময় একটি হেলমেট দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়। পাশাপাশি নকল হেলমেট তৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে কড়া শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
কংগ্রেসের SIR সংক্রান্ত ৮৯ লক্ষ অভিযোগ সব খারিজ নির্বাচন কমিশনে
উত্তরপ্রদেশ সরকারের নতুন “হেলমেট ছাড়া পেট্রোল নয়” (No Helmet No Fuel) অভিযান নিঃসন্দেহে একটি সাহসী পদক্ষেপ। তবে বাস্তবে এর সফলতা অনেকাংশে নির্ভর করছে নকল হেলমেটের বাজার নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি গণমাধ্যম এবং বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে নাগরিকদের বোঝানো প্রয়োজন যে শুধু হেলমেট পরাই নয়, আসল ও সার্টিফায়েড হেলমেট ব্যবহার করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। তবেই সড়ক দুর্ঘটনায় অপ্রয়োজনীয় প্রাণহানি রোধ করা সম্ভব হবে।