দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে নতুন ইলেকট্রিক হ্যাচব্যাক Renault Kwid E-Tech আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচিত হল। গত কয়েক মাস ধরে এই গাড়িটিকে একাধিকবার টেস্টিং চালাতে দেখা গিয়েছিল। আর এবার সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে এল। নতুন ইভি মডেলটি বিদেশে বিক্রি হওয়া Dacia Spring EV-এর উপর ভিত্তি তৈরি একটি মাত্র Techno ভ্যারিয়েন্টে লঞ্চ হয়েছে।
আধুনিক ডিজাইনে নতুন Renault Kwid E-Tech
নতুন Kwid E-Tech ২০২৬ সংস্করণে আগের মডেলের কমপ্যাক্ট প্রোপোরশন বজায় থাকলেও এর এক্সটেরিয়র ডিজাইন এখন অনেক বেশি ধারালো ও আধুনিক। সামনে রয়েছে হরিজন্টাল LED ডে-টাইম রানিং লাইট, এবং বাম্পারের নিচের দিকে স্থাপন করা হয়েছে পলিগন-আকৃতির হেডল্যাম্প। চার্জিং পোর্টটি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে Renault লোগোর পিছনে ইন্টিগ্রেট করা হয়েছে, যা ডিজাইনের সাথে মিশে গেছে সুন্দরভাবে।
পেছনের অংশেও পরিবর্তন লক্ষ্যণীয় — নতুন Y-আকৃতির LED টেইললাইট দুটি এখন একটি গ্লস ব্ল্যাক স্ট্রিপ দিয়ে সংযুক্ত, যা টেইলগেট জুড়ে বিস্তৃত। নতুন বাম্পার ডিজাইন গাড়িটিকে আরও প্রিমিয়াম লুক দিয়েছে।
ক্যাবিনে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া
ইন্টেরিয়রের দিক থেকেও Kwid E-Tech এক ধাপ এগিয়েছে। গাড়িটিতে রয়েছে ৭ ইঞ্চির ডিজিটাল ইন্সট্রুমেন্ট ক্লাস্টার ও ১০ ইঞ্চির টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, যা ওয়্যারলেস Apple CarPlay ও Android Auto সমর্থন করে। এছাড়াও আছে দুটি USB-C পোর্ট, হাইট-অ্যাডজাস্টেবল স্টিয়ারিং হুইল, ও অন্যান্য প্রিমিয়াম ফিচার।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি এসেছে সেফটি ও ড্রাইভার অ্যাসিস্ট্যান্স ফিচারে। গাড়িটিতে রয়েছে ১১টি ADAS ফিচার, যার মধ্যে আছে লেন কিপ অ্যাসিস্ট, অটোমেটিক এমার্জেন্সি ব্রেকিং, ড্রাইভার ফ্যাটিগ ডিচেকশান এবং ট্রাফিক সাইন রিকগনিশন। নিরাপত্তার জন্য গাড়িটিতে দেওয়া হয়েছে ৬টি এয়ারব্যাগ, সঙ্গে ক্রুজ কন্ট্রোল ও স্পিড লিমিটার।
ইলেকট্রিক মোটর ও ব্যাটারি রেঞ্জ
পারফরম্যান্সের দিক থেকে, Kwid E-Tech চালিত হয় ৬৫ হর্সপাওয়ার (৪৮ কিলোওয়াট) ক্ষমতার ইলেকট্রিক মোটর দ্বারা, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২৬.৮ কিলোওয়াট আওয়ার ব্যাটারি প্যাক। ব্রাজিলের Inmetro/PBEV টেস্ট সাইকেল অনুসারে, এর সার্টিফায়েড রেঞ্জ ১৮০ কিলোমিটার। তবে বাস্তব পরিস্থিতিতে এটি ২৪০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়েছে।
Also Read: মাত্র ২,৪৯৯ টাকায় ওয়ারেন্টি বাড়িয়ে নিন ৭ বছর! Kawasaki KLX 230 এখন আরও সাশ্রয়ী
চার্জিং সময়ও যথেষ্ট কার্যকর — ২২০V হোম সকেট দিয়ে পুরো চার্জ হতে সময় লাগে প্রায় ৯ ঘণ্টার কম, ৭ কিলোওয়াট AC ওয়ালবক্স ব্যবহার করলে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘণ্টা, আর ৩০ কিলোওয়াট DC ফাস্ট চার্জার দিয়ে মাত্র ৪৫ মিনিটে ব্যাটারির ২০ থেকে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ করা যায়।
ভারতে লঞ্চের সম্ভাবনা
ব্রাজিলের বাজারে লঞ্চ হওয়া Renault Kwid E-Tech-এর দাম ৯৯,৯৯০ ব্রাজিলিয়ান রিয়াল, অর্থাৎ প্রায় ১৬.৫ লক্ষ টাকা (ভারতীয় মুদ্রায়) ধার্য করা হয়েছে। জানিয়ে রাখি, ভারতে Kwid EV একাধিকবার টেস্টিং চালাতে দেখা গেলেও Renault এখনও পর্যন্ত এর লঞ্চ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে যদি এটি ভারতীয় বাজারে আসে, তাহলে এটি হতে পারে দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ী ইলেকট্রিক হ্যাচব্যাকগুলির মধ্যে একটি। যা Tata Tiago EV বা MG Comet EV-এর মতো গাড়ির সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামবে।
প্রসঙ্গত, নতুন Kwid E-Tech নিঃসন্দেহে কোম্পানির জন্য একটি বড় পদক্ষেপ। আধুনিক ADAS সিস্টেম, উন্নত ব্যাটারি রেঞ্জ, এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের সমন্বয়ে এটি ইলেকট্রিক গাড়ির জগতে নতুন মাত্রা যোগ করতে চলেছে। এখন দেখার বিষয়, Renault কত দ্রুত এই মডেলটিকে ভারতীয় রাস্তায় নামাতে পারে — কারণ সাশ্রয়ী ইভি সেগমেন্টে প্রতিযোগিতা ইতিমধ্যেই তুঙ্গে।