মারুতি সুজুকি ফ্রঙ্ক্স (Maruti Suzuki Fronx) ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতের সর্বাধিক বিক্রিত গাড়ির চকমা ছিনিয়ে নিয়েছে। বেচাকেনার নিরিখে এই যাত্রীবাহী গাড়ি মারুতি সুজুকি ওয়াগনআর এবং হুন্ডাই ক্রেটার মতো জনপ্রিয় মডেলগুলিকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে এই সাব-কমপ্যাক্ট এসইউভির ২১,৪৬১ ইউনিট বিক্রি হয়েছে। লঞ্চ হওয়ার পর থেকে এটিই সর্বোচ্চ মাসিক বিক্রি। উল্লেখযোগ্য, ২০২৩ সালে বাজারে আসার পর মাত্র ১০ মাসের মধ্যে এক লক্ষ ইউনিট বিক্রির মাইলফলক ছুঁয়েছিল ফ্রঙ্কস। এই বিপুল জনপ্রিয়তার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, যা গ্রাহকদের মধ্যে এই মডেলটির চাহিদাকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছে।
মারুতি সুজুকির ব্র্যান্ড ভ্যালু
ভারতে মারুতি সুজুকি গাড়িগুলির একটি শক্তিশালী বাজার উপস্থিতি রয়েছে। ফ্রঙ্কস-ও এর ব্যতিক্রম নয়। এটি মারুতি সুজুকির ব্যাজ বহন করার ফলে বিশাল বিক্রয়োত্তর পরিষেবা এবং সার্ভিস নেটওয়ার্কের সুবিধা পাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে দেশের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য এবং বাজেটবান্ধব ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত মারুতি সুজুকির যেকোনো নতুন মডেল স্বাভাবিকভাবেই গ্রাহকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পায়।
Maruti Suzuki Fronx-এর প্রতিযোগিতামূলক দাম
ফ্রঙ্কস-এর জনপ্রিয়তার আরেকটি বড় কারণ হল এর আকর্ষণীয় মূল্য নির্ধারণ। মারুতি সুজুকি এই গাড়িটির বেস ভেরিয়েন্টের এক্স-শোরুম মূল্য ৭.৫২ লাখ টাকা এবং টপ ভেরিয়েন্টের মূল্য ১৩.০৪ লাখ টাকা রেখেছে। এটি মূলত বলেনোর প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যার ফলে ব্যয় কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য সাব-৪ মিটার এসইউভিগুলির তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম মূল্যে এটি কেনা সম্ভব হওয়ায়, এসইউভি লুক পছন্দ করা অথচ উচ্চমূল্য এড়াতে চাওয়া গ্রাহকদের মধ্যে এটি বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
আকর্ষণীয় ডিজাইন
মারুতি সুজুকি ফ্রঙ্ক্স (Maruti Suzuki Fronx) ব্যালেনোর প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে তৈরি হলেও, এর বাহ্যিক ডিজাইন সম্পূর্ণ আলাদা। এতে এসইউভি-অনুপ্রাণিত ফ্রন্ট ফ্যাসিয়া, বেশি অ্যাগ্রেসিভ স্ট্যান্স এবং ইউনিক গ্রিল ডিজাইন রয়েছে। বিশেষত, ফ্রঙ্ক্সের এলইডি ডিআরএল এবং গ্রিল ডিজাইন দেখে অনেকেই একে “বেবি গ্র্যান্ড ভিটারা” বলে ডাকেন, কারণ এটি মারুতি সুজুকির বড় এসইউভি গ্র্যান্ড ভিটারার সাথে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ।
উন্নত ফিচার ও প্রযুক্তি
ফ্রঙ্ক্সের আরেকটি বড় ইউএসপি হল এর আধুনিক এবং প্রিমিয়াম ফিচার্স। এতে ভাসমান টাচস্ক্রিন ইনফোটেইনমেন্ট সিস্টেম, ৩৬০-ডিগ্রি ক্যামেরা, হেড-আপ ডিসপ্লে (HUD), স্বয়ংক্রিয় ক্লাইমেট কন্ট্রোল সহ একাধিক আধুনিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে, যা ড্রাইভিং অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করে। ফ্রঙ্ক্স দুটি পেট্রোল ইঞ্জিন বিকল্পে উপলব্ধ – ১.২-লিটার ন্যাচারালি অ্যাসপিরেটেড ইঞ্জিন যা ম্যানুয়াল এবং AMT ট্রান্সমিশনের সাথে আসে এবং ১.০-লিটার, ৩-সিলিন্ডার বুস্টারজেট টার্বোচার্জড ইঞ্জিন, যা ম্যানুয়াল ট্রান্সমিশন এবং ৬-স্পিড অটোমেটিক ট্রান্সমিশনের বিকল্পে পাওয়া যায়।
একমাত্র টার্বো পেট্রোল ইঞ্জিনযুক্ত মারুতি গাড়ি
বর্তমানে ফ্রঙ্কস মারুতি সুজুকির একমাত্র মডেল যেখানে টার্বো পেট্রোল ইঞ্জিন রয়েছে। এর ১.০-লিটার বুস্টারজেট ইঞ্জিন এর আগে বলেনো RS মডেলে ব্যবহার করা হলেও, পরবর্তীতে নির্গমন বিধির পরিবর্তনের কারণে এটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে এখন নতুন বিধি মেনে ফ্রঙ্ক্সে আবারও বুস্টারজেট ইঞ্জিন ফিরিয়ে আনা হয়েছে। টার্বোচার্জড শক্তি এবং উত্তেজনাপূর্ণ পারফরম্যান্সের কারণে এটি বর্তমানে মারুতি সুজুকির অন্যতম স্পোর্টি মডেল হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
ব্র্যান্ডের শক্তিশালী ইমেজ, আকর্ষণীয় মূল্য নির্ধারণ, উন্নত ডিজাইন, আধুনিক ফিচার এবং শক্তিশালী ইঞ্জিনের কারণে মারুতি সুজুকি ফ্রঙ্ক্স ভারতের বাজারে অন্যতম সেরা বিক্রিত সাব-কমপ্যাক্ট এসইউভি হয়ে উঠেছে। ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ সর্বাধিক বিক্রিত গাড়ির খেতাব অর্জনের মাধ্যমে এটি তার জনপ্রিয়তা আরও একধাপ বাড়িয়ে নিল।