হায়দরাবাদভিত্তিক প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি সংস্থা ইন্দ্রজাল (Indrajaal) ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন যুগের সূচনা করল। দেশে ক্রমবর্ধমান ড্রোন-হুমকি ও সীমান্তজুড়ে বেড়ে চলা নজরদারির প্রয়োজনীয়তা মাথায় রেখে সংস্থাটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করেছে অত্যাধুনিক Anti-Drone Patrol Vehicle (ADPV)—যার নাম Indrajaal Ranger। চলমান প্যাট্রোল ভেহিকলের ওপর অ্যান্টি-ড্রোন টেকনোলজি স্থাপন করা এই প্রথমবারের মতো কোনও ভারতীয় কোম্পানির উদ্ভাবন, যা বিশেষজ্ঞদের মতে দেশের প্রতিরক্ষা সক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
ইন্দ্রজাল দীর্ঘদিন ধরে AI-চালিত অ্যান্টি-ড্রোন ডোম-সিস্টেম তৈরি করে আন্তর্জাতিক স্তরে পরিচিত। তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের সামরিক ও বেসামরিক স্থাপনায় ড্রোন শনাক্তকরণ এবং নিষ্ক্রিয়করণের ব্যবস্থা আগে থেকেই চালু রয়েছে। তবে “রেঞ্জার” মডেলের আগমনকে প্রযুক্তিবিদরা “মোবাইল অ্যান্টি-ড্রোন যুদ্ধক্ষমতার” একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে মনে করছেন। কারণ, স্থিরভাবে থাকা অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমের পাশাপাশি এবার দ্রুতগতির, চলমান যান থেকেই শত্রু ড্রোন ধরে ফেলা ও সঙ্গে সঙ্গে জ্যাম করার ব্যবস্থা থাকছে।

ইন্দ্রজালের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, Indrajaal Ranger–এ রয়েছে অত্যাধুনিক রাডার, ইলেকট্রো-অপটিক সেন্সর, থার্মাল ইমেজার, RF স্ক্যানার, AI ভিত্তিক থ্রেট-অ্যানালাইসিস সিস্টেম এবং ড্রোন নিউট্রালাইজেশন ইউনিট। এর ফলে কোনও মাইক্রো বা ন্যানো ড্রোনও ধরা পড়লে এটি সঙ্গে সঙ্গে তার গতিপথ, অপারেটর সংকেত ও সম্ভাব্য হুমকির ধরন বিশ্লেষণ করতে সক্ষম। শুধু তাই নয়, রেঞ্জারের AI অ্যালগরিদম একটি ড্রোন আক্রমণ আসন্ন কিনা বা এটি নজরদারি মিশনে আছে কিনা—তার রিয়েল-টাইম মূল্যায়ন করতে পারে।
ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থানগুলোর বিভিন্ন দফতরে গত কয়েক বছরে ড্রোন-হানার সংখ্যা বেড়েছে। সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, মাদকপাচার কিংবা নজরদারি চালানোর জন্য ড্রোনের ব্যবহার এখন নিয়মিত ঘটনা। পাঞ্জাব, জম্মু-কাশ্মীর, রাজস্থান, গুজরাত—সব সীমান্ত অঙ্গরাজ্যেই এই হুমকি দিনে দিনে বাড়ছে। শুধু সামরিক নয়, গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক স্থাপনা, বিমানবন্দর এমনকি ভিআইপি জোনেও ড্রোন অনুপ্রবেশ রুখতে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে দ্রুত চলাচলকারী অ্যান্টি-ড্রোন যান ভারতীয় বাহিনীকে অনেক বেশি কার্যকরভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ দেবে।
সংস্থার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, Indrajaal Ranger নিজে থেকেই একাধিক ড্রোন ট্র্যাক করতে সক্ষম। একই সঙ্গে গুরুতর হুমকি শনাক্ত হলে সিস্টেম ড্রোনটিকে জ্যাম করতে বা প্রয়োজন হলে পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করতে পারে। এর অপারেশনের জন্য মানব-পরিচালনা ছাড়াও সেমি-অটোমেটিক ও ফুল-অটোমেটিক মোড রয়েছে, যা মাঠে কাজ করা বাহিনীর চাপ কমাবে। রেঞ্জার ভেহিকল যে কোনও টেরেন—মরুভূমি, পাহাড়ি পথ, সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকা বা শহুরে রাস্তা—সব জায়গায় ব্যবহারযোগ্য করে তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিরক্ষা মহলে মনে করা হচ্ছে, এই সিস্টেম ভারতীয় সেনা, আধাসামরিক বাহিনী, BSF, ITBP, CISF, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, এমনকি রাজ্য পুলিশ বাহিনীর কাছেও ভবিষ্যতে অত্যন্ত কার্যকর হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে দ্রুত মোতায়েনযোগ্য প্যাট্রোল ভেহিকল হিসেবে এটি বিভিন্ন সংকট পরিস্থিতিতে তৎক্ষণাৎ ব্যবহৃত হতে পারবে। রেঞ্জারকে কনভয় প্রোটেকশন, ভিআইপি সিকিউরিটি, বর্ডার প্যাট্রোল, এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সুরক্ষায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংস্থা বিবেচনা করছে।
প্রযুক্তিবিদরা আরও বলছেন, ভারত যেভাবে নিজের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তিতে স্বনির্ভরতার উদ্যোগ নিচ্ছে, Indrajaal Ranger সেই যাত্রাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। এটি দেশীয় প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে তৈরি হওয়ায় ভবিষ্যতে রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কমবে এবং বড় পরিসরে উৎপাদন সম্ভব হবে।
সব মিলিয়ে, Indrajaal Ranger ভারতের অ্যান্টি-ড্রোন প্রতিরক্ষায় একটি নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশ, সন্ত্রাসবাদী হুমকি এবং অনাকাঙ্ক্ষিত নজরদারি—সব ক্ষেত্রেই এটি নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
