দেশের অভ্যন্তরীণ গাড়ি বিক্রিতে মন্দা থাকলেও আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের তৈরি গাড়ির চাহিদা (India car export) বেড়েই চলেছে। ক্রমাগত বেড়ে চলা গাড়ি রফতানি ভারতের অটো শিল্পকে নতুন করে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, গত চার অর্থবছরে গাড়ি রফতানিতে যথেষ্ট ভালো বৃদ্ধি হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, অর্থবছর ২০২১-২২ (FY22) তে ভারতে উৎপাদিত মোট ৫,৭৭,৮৭৫ ইউনিট গাড়ি রফতানি হয়েছে। পরের বছর অর্থাৎ ২০২২-২৩ (FY23) তে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬,৬২,৮৯১ ইউনিটে। অর্থবছর ২০২৩-২৪ (FY24) তে আরও একধাপ এগিয়ে রফতানির পরিমাণ পৌঁছয় ৬,৭২,১০৫ ইউনিটে। আর চলতি অর্থবছর ২০২৪-২৫ (FY25)-এর প্রাথমিক হিসাব বলছে, এই সংখ্যা ৭,৭০,৩৬৪ ইউনিট ছুঁয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ১৪.৫% বেশি।
এই প্রবণতা এমন এক সময়ে এসেছে যখন ভারতের অভ্যন্তরীণ গাড়ি বাজার তুলনামূলকভাবে স্থবির অবস্থায়। মন্দার ছায়া, ঋণের উপর নির্ভরতা এবং ব্যয়বহুল যানবাহনের কারণে অনেক ক্রেতা গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে রফতানিই হয়ে উঠেছে অটো শিল্পের জন্য প্রধান আশার আলো।
কেন বাড়ছে রফতানি?
বিশেষজ্ঞদের মতে, গাড়ির মান এবং প্রতিযোগিতামূলক দামে ভারতের উৎপাদিত যানবাহন এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ক্রমেই জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। বিশেষ করে লাতিন আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে ভারতের গাড়ির চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে।
তাছাড়া, বৈশ্বিক বাজারে চিন এবং ইউরোপের গাড়ি প্রস্তুতকারকদের উপর নির্ভরতা কমানোর যে প্রবণতা দেখা দিয়েছে, তারও ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ভারতের গাড়ি রফতানির উপর। কিছু ইউরোপীয় দেশ যেমন পরিবেশবান্ধব গাড়ির দিকে ঝুঁকছে, তেমনি উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সাশ্রয়ী মূল্যের পেট্রোল-ডিজেল চালিত গাড়ির চাহিদা রয়েছে, যার ফলে ভারতের উৎপাদনকারীরা সুবিধা পাচ্ছেন।
অগ্রণী ভূমিকায় কোন সংস্থাগুলি?
এই রফতানির ক্ষেত্রে মারুতি সুজুকি, হুন্ডাই, কিয়া, টাটা মোটরস এবং মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা-এর মতো সংস্থাগুলি মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। মারুতি সুজুকি তাদের তৈরি ছোট গাড়ির মাধ্যমে আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বাজারে বড় সাফল্য পেয়েছে। অন্যদিকে, হুন্ডাই ও কিয়া মিড-সাইজ SUV ও সেডানের ক্ষেত্রে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকায়।
টাটা মোটরসও সাম্প্রতিক সময়ে EV (ইলেকট্রিক ভেহিকল) রফতানিতে নজর দিচ্ছে। তারা ইউরোপ এবং কিছু এশিয়ান বাজারে তাদের Nexon EV এবং Tiago EV পাঠাতে শুরু করেছে, যা ভবিষ্যতের বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছে শিল্প মহল।
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যতের দিশা
যদিও রফতানি বাড়ছে, তবু কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। ডলারের দাম, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি, বন্দর ও লজিস্টিক সমস্যার প্রভাব এখনও সম্পূর্ণরূপে কাটেনি। পাশাপাশি, বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যনীতি পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে পারে ভবিষ্যতের রফতানিতে।
তবে, সমস্ত প্রতিকূলতার মাঝেও ভারতীয় গাড়ি শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে যে স্থায়ী অবস্থান তৈরি করতে চলেছে, তা নিঃসন্দেহে আশাব্যঞ্জক। সরকারও ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘এক্সপোর্ট হাব’ নীতির মাধ্যমে গাড়ি রফতানির পরিকাঠামোকে আরও মজবুত করার দিকে জোর দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে, ভারতীয় গাড়ি শিল্পের রফতানি বৃদ্ধির এই প্রবণতা দেশের অর্থনীতির পক্ষে একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করছে, যেখানে ‘গ্লোবাল হাব’ হওয়ার স্বপ্ন আর খুব দূরের নয়।