উৎসবের মরসুম (Festive Season) এলেই গাড়ি নির্মাতা সংস্থাগুলি একের পর এক চমকপ্রদ ছাড়ের ঘোষণা করে। সেই সঙ্গে ব্যাংকগুলোও প্রতিযোগিতায় নামে আকর্ষণীয় ঋণ প্রকল্প নিয়ে। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে মনে হতে পারে—এটাই বোধহয় নতুন গাড়ি কেনার সেরা সময়। কিন্তু বাস্তবে, শুধুমাত্র উৎসবের দামের ছাড়ই যথেষ্ট নয়। গাড়ি কেনার আগে ঋণ শর্ত, লুকনো চার্জ এবং নিজের ক্রেডিট স্কোরের মতো বিষয়ে সজাগ না থাকলে পরবর্তীতে খরচ বেড়ে যেতে পারে অনেকটাই।
জিএসটি ২.০—গাড়ির দাম কমল:
সাম্প্রতিক জিএসটি কাঠামোর পরিবর্তনে ছোট গাড়ি ও দুই চাকার যানবাহনের দামে চোখে পড়ার মতো ছাড় এসেছে। বর্তমানে ছোট গাড়ির ওপর ১৮ শতাংশ জিএসটি ধার্য হচ্ছে, কোনো সেস ছাড়াই। বড় গাড়ির জন্য ৪০ শতাংশ হারে কর, আর ইলেকট্রিক গাড়ির ওপর ৫ শতাংশ কর অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এই নতুন হার কার্যকর হওয়ায় এন্ট্রি-লেভেল ও মিড-সেগমেন্ট গাড়িগুলি আগের তুলনায় অনেকটাই সস্তা হয়েছে। এমনকি প্রিমিয়াম মডেলেও কোথাও কোথাও ১০ শতাংশ পর্যন্ত দাম কমেছে। এর সঙ্গে উৎসবের ছাড় ও ব্যাংকের কম সুদের হার যোগ হলে গাড়ি কেনা যেন আরও সহজ হয়ে যায়।
ক্রেডিট স্কোর—ভাল সুদের হারের টিকিট:
গাড়ির ঋণ নেওয়ার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আপনার ক্রেডিট স্কোর। সাধারণত ৭৫০ বা তার বেশি স্কোর থাকলে ক্রেতারা সবচেয়ে কম সুদের হারে ঋণ পেতে পারেন। এর ফলে মাসিক কিস্তিতেও পার্থক্য হয় বড়সড়। উদাহরণস্বরূপ, ৮ লক্ষ টাকার ঋণ ৫ বছরের জন্য ১০ শতাংশ সুদে নিলে, মাত্র ১ শতাংশ সুদ কমলেও প্রায় ২৩ হাজার টাকা সাশ্রয় সম্ভব। তাই ঋণ নেওয়ার আগে অবশ্যই নিজের ক্রেডিট রিপোর্ট পরীক্ষা করুন, কোনো ভুল থাকলে তা সংশোধন করুন। যদি স্কোর কমও থাকে, স্থায়ী আয় বা পুরোনো ব্যাংক সম্পর্ক দেখিয়ে ভালো চুক্তি পাওয়া সম্ভব।
লুকনো খরচ থেকে সাবধান:
শুধুমাত্র সুদের হারই নয়, গাড়ির ঋণে থাকে আরও নানা খরচ—যেমন প্রসেসিং ফি, যা কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। যদিও উৎসবের অফারে অনেক সময় ব্যাংক এই ফি মকুব করে দেয়, তবুও খরচের একটি লিখিত তালিকা চাইতে ভুলবেন না। এতে স্বচ্ছতা বজায় থাকবে এবং পরবর্তীতে কোনো বাড়তি খরচ আপনাকে অবাক করবে না।
আলোচনায় জিততে পারেন আপনিও:
যদি আপনার পুরোনো কোনো ঋণদাতা থাকে, তাহলে তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে সুদের হার বা ফি কমানোর চেষ্টা করুন। অনেক সময় ব্যাংক দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কের ভিত্তিতে বিশেষ সুবিধা দেয়। পাশাপাশি অন্তত দু’তিনটি ব্যাংকের অফার তুলনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
সূক্ষ্ম শর্তপত্র পড়া জরুরি:
কম ইএমআই দেখে চুক্তি করে ফেলবেন না। ঋণের মেয়াদ, সুদের হার, বাড়তি চার্জ—সব মিলিয়েই নির্ধারিত হয় প্রকৃত খরচ। তাই আগে জেনে নিন প্রিপেমেন্ট চার্জ, বাধ্যতামূলক বীমা বা আরটিও ফি’র মতো অতিরিক্ত খরচ আছে কি না। বিশেষ করে পুরোনো গাড়ির ক্ষেত্রে সুদের হার বেশি হতে পারে এবং যোগ্যতার শর্তও কঠিন হতে পারে।
উৎসবের ছাড়, কম জিএসটি হার আর ব্যাংকের প্রতিযোগিতামূলক ঋণ প্রকল্প—সব মিলিয়ে এ সময় গাড়ি কেনার পরিবেশ নিঃসন্দেহে অনুকূল। তবে তাড়াহুড়ো না করে সঠিক তথ্য যাচাই, খরচের স্বচ্ছতা ও ঋণের সূক্ষ্ম শর্ত বুঝে সিদ্ধান্ত নিলে নতুন গাড়ি কেনার আনন্দ সত্যিই হবে ঝামেলাহীন।