‘নীরব EV’ আর নয়! ভারতে বাধ্যতামূলক হচ্ছে ‘গাড়ির শব্দ’

ভারতে ইলেকট্রিক গাড়ির (EV) ব্যবহার দ্রুত বাড়লেও, তাদের নীরব চলাচল এখন নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় চলার সময় এই যানবাহনগুলো প্রায় কোনো শব্দই করে…

EV

ভারতে ইলেকট্রিক গাড়ির (EV) ব্যবহার দ্রুত বাড়লেও, তাদের নীরব চলাচল এখন নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাস্তায় চলার সময় এই যানবাহনগুলো প্রায় কোনো শব্দই করে না, ফলে পথচারী ও সাইকেল আরোহীদের পক্ষে এগুলিকে বুঝে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই বিপদ এড়াতেই কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রক (MoRTH) নতুন এক নিয়মের প্রস্তাব দিয়েছে, যার ফলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ইলেকট্রিক গাড়িগুলিকে কৃত্রিম শব্দ তৈরি করতে বাধ্য করা হবে।

Advertisements

২০২৭ থেকে বাধ্যতামূলক হবে AVAS প্রযুক্তি

মন্ত্রকের প্রস্তাব অনুযায়ী, অক্টোবর ২০২৬-এর পর বাজারে আসা সমস্ত নতুন প্যাসেঞ্জার (ক্যাটাগরি M) ও গুডস (ক্যাটাগরি N) ইলেকট্রিক গাড়িতে Acoustic Vehicle Alerting System (AVAS) বসানো বাধ্যতামূলক হবে। এরপর অক্টোবর ২০২৭ থেকে এই নিয়ম কার্যকর হবে ভারতের সমস্ত চলমান উৎপাদিত ইলেকট্রিক গাড়িতেও।

   

এই AVAS সিস্টেম মূলত এমন একটি প্রযুক্তি, যা গাড়ি চলার সময় নির্দিষ্ট গতি পর্যন্ত কৃত্রিম শব্দ তৈরি করে, যাতে পথচারীরা গাড়ির উপস্থিতি বুঝতে পারেন। এটি গাড়ির নিরাপত্তায় এক গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসেবে দেখা হচ্ছে।

AVAS স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয় যখন ইলেকট্রিক গাড়ি ২০ কিমি/ঘণ্টা বা তার নিচে গতিতে চলে। কারণ, এই গতিতে টায়ারের ঘর্ষণ ও বাতাসের শব্দ খুব কম থাকে, ফলে গাড়ির উপস্থিতি বোঝা যায় না। কিন্তু গতি বেড়ে গেলে প্রাকৃতিকভাবে টায়ারের শব্দ ও বায়ুর ঘর্ষণ তৈরি হয়, ফলে সেই সময় AVAS আর সক্রিয় থাকে না।

এই প্রযুক্তি বিশেষ করে অন্ধ ও দৃষ্টিশক্তিহীন ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শহুরে এলাকাগুলিতে, যেখানে জনসমাগম বেশি, সেখানে এটি দুর্ঘটনা রোধে বড় ভূমিকা নিতে পারে।

সরকারের খসড়া বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সমস্ত AVAS সিস্টেমকে AIS-173 স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী তৈরি হতে হবে। এর ফলে গাড়ির তৈরি শব্দের মাত্রা ও ধরনে সমতা বজায় থাকবে। অর্থাৎ, প্রতিটি ইলেকট্রিক গাড়ির শব্দ হবে নিয়ন্ত্রিত ও নির্দিষ্ট মানসম্মত, যাতে তা মানুষকে সতর্ক করে তোলার পাশাপাশি শব্দ দূষণও না বাড়ায়।

AVAS বাধ্যতামূলক করার পাশাপাশি MoRTH আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব দিয়েছে — যেসব গাড়িতে টিউবলেস টায়ার রয়েছে, সেগুলিতে আর স্পেয়ার টায়ার বহন করার প্রয়োজন হবে না। এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে গাড়ি, থ্রি-হুইলার ও কোয়াড্রিসাইকেলগুলির জন্য। উন্নত টায়ার প্রযুক্তির কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য

বিশ্বের উন্নত দেশগুলো — যেমন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি — ইতিমধ্যেই AVAS বাধ্যতামূলক করেছে। ভারতের এই সিদ্ধান্ত সেই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা দেশের দ্রুতবর্ধমান ইলেকট্রিক যানবাহন বাজারকে আরও নিরাপদ ও সচেতন করে তুলবে।

বর্তমানে ভারতে বিক্রি হওয়া কয়েকটি মডেলে ইতিমধ্যেই এই প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে Tata Harrier EV, Volvo EX30, Hyundai Creta Electric, Maruti Suzuki Grand Vitara, Toyota Urban Cruiser Hyryder ও Toyota Innova Hycross। অন্যদিকে, ভারতের তৈরি নিরাপদ ইভিগুলির মধ্যে Tata Punch EV, Tata Nexon EV ও Mahindra XUV400 EV ক্র্যাশ সেফটির দিক থেকে উচ্চ রেটিং অর্জন করেছে।

ভারতে ২০২৭ সাল থেকে ইলেকট্রিক গাড়ির (EV) শব্দ বাধ্যতামূলক করার এই পদক্ষেপ শুধু পথচারীদের সুরক্ষা বাড়াবে না, বরং ইভি প্রযুক্তিকে আরও দায়িত্বশীল ও জনবান্ধব করে তুলবে। নীরব ইভির যুগে এবার রাস্তায় শোনা যাবে নিরাপত্তার নতুন সুর — যেখানে প্রযুক্তি আর সচেতনতা একসঙ্গে পথ দেখাবে ভবিষ্যতের যানবাহন সংস্কৃতিকে।